কলকাতার মুখ পোড়াল সাউথ সিটি মল। মলের ঝাঁ চকচকে দুনিয়ার পিছনের অভব্য মুখ বেরিয়ে এল। অভিজাত বলে পরিচিত এই বিপণির কর্মরতরা যে আসলে একটি বহু পুরনো দুনিয়ার বাসিন্দা তা তারা বুঝিয়ে দিল তাদের কদর্য আচরণে, এবং সে আচরণের দোহাই দিতে গিয়ে।
ঘটনার সূত্রপাত স্তন্যপান করানোকে কেন্দ্র করে। মলের অভ্যন্তরে এক শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন এক মা। এ ঘটনা চোখে পড়তেই তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন এক কর্মী। ওই মহিলাকে জানানো হয়, খোলা জায়গায় তিনি শিশুকে স্তন্যপান করাতে পারবেন না, কারণ তা যথাযথ আচরণ নয়। মহিলার প্রশ্নের জবাবে তাঁকে জানানো হয়, স্তন্যপান করাতে হবে শৌচাগারে গিয়ে।
আরও পড়ুন- ‘পর্ন সাইট নিষিদ্ধ হলে ভারতীয়দের ক্ষতির সম্ভাবনা’
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মহিলা এ ঘটনার প্রতিবাদ করে ফেসবুকে পোস্ট দিতেই ধেয়ে আসে মল কর্তৃপক্ষের জবাব। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা তো দূর কি বাত, তাঁদের অশিক্ষা প্রকাশ পায় সে জবাবের ছত্রে ছত্রে। ইংরেজিতে লেখা সে জবাব শুরুই হচ্ছে - ফানি ইউ (Funny You) শব্দবন্ধ দিয়ে। এরকম একটা বিষয়কে ইস্যু করে তোলাকে মজার ঘটনা ধরে নিয়েই জবাব দিতে শুরু করে মল কর্তৃপক্ষ। জবাবি পোস্টে জানানো হয়, মলে কেন স্তন্যপান করানো যায় না, তার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। সে কারণসমূহ ব্যাখ্যা করার অবশ্য প্রয়োজন বোধ করেননি তাঁরা।
পোস্টে বলা হয়েছে, এত বড় জায়গা কেনাকাটার জন্য রাখা হয়েছে। মহিলাকে মল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পরামর্শও দিয়ে ফেলেছেন পোস্টের উত্তরদাতা। বলা হয়েছে, স্তন্যপান যেহেতু আপৎকালীন কোনও বিষয় হতে পারে না, সে কারণে বাড়ি থেকেই শিশুকে দুধ খাইয়ে নিয়ে আসতে হবে।
এ ঘটনা প্রচারিত হতেই নড়েচড়ে বসেছেন নেট নাগরিকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় মল কর্তৃপক্ষের ওই বিবৃতি ভাইরাল হতে শুরু করেছে। বেগতিক বুঝে সে পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছে সাউথ সিটি বিপণি। কিন্তু তার স্ক্রিনশট জ্বলজ্বল করছে ফেসবুক জুড়ে, ছড়িয়ে পড়ছে হোয়াটসঅ্যাপেও। বহু মহিলা এর প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন। পিছিয়ে নেই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষরাও।
আরও পড়ুন: কোন কোন পর্ন সাইট নিষিদ্ধ করা হল, দেখে নিন পূর্ণাঙ্গ তালিকা
এর পর অবশ্য ফের আসরে নামে সাউথ সিটি মল। এবার তাদের ভোল বদল ঘটে। তাদের তরফ থেকে জানানো হয়, এই গোটা ঘটনার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করছে তারা। বিপণির মধ্যে শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারিত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ওই পোস্টে। তবে কেন ওই মহিলাকে তাদেরই কর্মী শৌচাগারে যেতে বললেন, এবং তার সমর্থনে ফেসবুকে পোস্টও হয়ে গেল, তা অবশ্য ওই পোস্ট থেকে জানা যায়নি।
কলকাতার মল কালচারের এ হাল দেখে আরেক মলের কথা মনে করতে শুরু করছেন কেউ কেউ। পাপড়ি দে নামে এক বালিকার গলায় কলমের খাপ আটকে যাওয়ার ঘটনা মনে করছেন তাঁরা। শিশু পাপড়ি বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল। তার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন যিনি, তিনি ডাক্তার মল। নাগরিক এক কবিয়াল পাপড়িকে নিয়ে গান বেঁধেছিলেন। সে গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইবার আগে তিনি বলতেন, ‘সার্থকনামা ডাক্তার মল’-এর কথা।