Advertisment

জেন্ডারঃ  কী বুঝি – বুঝি কি?

যা আমার সেক্স তা আমার জেন্ডার নাও যে হতে পারে এই জ্ঞান যবে থেকে হয়েছে তবে থেকেই ভাবছি এইসব তথ্যপঞ্জীকরণ প্রক্রিয়া কী জানতে চাইছে আমার কাছ থেকে - কেমন শরীর নিয়ে জন্মেছি? সুমিতা বীথি (ক্যুইয়ার ফেমিনিস্ট অ্যাক্টিভিস্ট)

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
GENDER KI - SUMITA 1

সোজা পথে হেঁটে ম্যাস্কুলাইন বা ফেমিনাইন জেন্ডারে পৌঁছাতে না চেয়ে একে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়ছে। (ছবি চিন্ময় মুখোপাধ্যায় )

সুমিতা বীথি (ক্যুইয়ার ফেমিনিস্ট অ্যাক্টিভিস্ট)

Advertisment

এই প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে আজও ততোটাই ভ্যাবাচ্যাকা খাই যতোটা গোড়ার দিকে খেতাম। ইস্কুলে শিখেছিলাম জেন্ডার হল ম্যাস্কুলাইন, ফেমিনাইন, কমন আর নিউটার। সারা পৃথিবী ঢুকে আছে এরই মধ্যে, এর বাইরে কিছু নেই। আমি যেহেতু মেয়ে তাই আমার জেন্ডার ফেমিনাইন । আমি কেন মেয়ে তা জানতাম না, কিন্তু মেয়ে আর ছেলে এই দুইভাগে পৃথিবী বিভক্ত, এটা জানতাম। অর্থাৎ, ম্যাস্কুলাইন আর ফেমিনাইনে বিভক্ত, নিউটার হল অপ্রানীবাচক, আর কমন মানে কয়েকটা শব্দ যারা দুটো জেন্ডারকেই একসাথে বোঝায় – যেমন স্টুডেন্ট।

সে ছিল খুবই অপাপবিদ্ধ পৃথিবী, যেখানে সেক্স শব্দের হাত ধরে পাপ এসে প্রবেশ করল, যেন ইডেনের বাগানে সাপ বা আপেল বা ইভ। ইভ ফেমিনাইন, আপেল নিউটার আর স্নেক – কমন? বোধহয় মাধ্যমিকের ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে প্রথম দেখেছিলাম ‘সেক্স’ বলে একটা খোপ করা আছে, সেখানে টিক চিহ্ন দিতে হচ্ছে ‘এম’ বা ’এফ’-এর ঘরে। এটা ম্যাস্কুলাইন/ফেমিনাইন? না, এটা মেল/ফিমেল!

আরও পড়ুন : উত্তর সত্য, সাংবাদিকতা এবং আমরা

তবে কি যাহাই বাহান্ন তাহাই তিপান্ন? যাহাই ম্যাস্কুলাইন তাহাই মেল? দুটো আলাদা শব্দ শেখানো হল কেন তাহলে? আমার মতো ব্যাকরণে কাঁচা, ইংরাজিতে কাঁচা, খারাপ ছাত্রীর জীবনকে আর জটিল করে  দেবার জন্যেই কি? অনেক পথ হাঁটতে হল এইটুকু বুঝতে যে বাহান্নর পরে আরও এক যোগ করলে তবে তিপান্ন হয়, আর সবসময় এক যোগ করলেও ক্রমিক সংখ্যা বাড়ে না, বরং এক আর এক পাশাপাশি রাখলে এগারোও হয়ে যেতে পারে।

ফর্মে কী লিখতে বলা হয় তা আজও বুঝিনি, সেক্স - জৈবিক লিঙ্গ? জেন্ডার - সামাজিক লিঙ্গভূমিকা? যা আমার সেক্স তা আমার জেন্ডার নাও যে হতে পারে এই জ্ঞান যবে থেকে হয়েছে তবে থেকেই ভাবছি এইসব তথ্যপঞ্জীকরণ প্রক্রিয়া কী জানতে চাইছে আমার কাছ থেকে - কেমন শরীর নিয়ে জন্মেছি? নাকি সেই শারীরিক দাগছোপের ভিত্তিতে সমাজ আমাকে কোন ভূমিকায় স্টেজে নামাতে চাইছে? যা নিয়ে জন্মেছি তার ভিত্তিতে আমার পিঠে একটা মার্কা দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু আমি কি সত্যিই সেইটাই? শিশ্ন দেখা যাচ্ছে তাই পুংলিঙ্গ/মেল, যোনি দেখা যাচ্ছে তাই স্ত্রীলিঙ্গ/ফিমেল? ভেতরের মালপত্তর সব ‘ঠিকঠাক’ আছে তো? বাইরে বাক্সের তালা অটুট আছে বলে যদি আপনাকে ক্যুরিয়ার কোম্পানি ভুলভাল মাল গছিয়ে দেয়, আপনি নেবেন কি? তালা খুলে মালটা চেক করে নেবেন না? নেবেন এমনিতে, কিন্তু মানুষের বেলায় ছেড়ে দেবেন বিষয়টা ভগবান/ডাক্তারের হাতে।

GENDER KI - SUMITA শব্দ যারা দুটো জেন্ডারকেই একসাথে বোঝায় – যেমন স্টুডেন্ট (ছবি চিন্ময় মুখোপাধ্যায় )

এত গেল শরীর, এরসঙ্গে জুড়ছে এসে মন – সে যদি অন্য কথা বলে তখন সব ছাপ্পা ভোট বাতিল। মন যদি বলে শিশ্ন থাক তার নিজের জায়গায় আমি আমার মনকে নিয়ে নারী জীবন যাপন করব, তাহলে সমাজের তৈরি নাটকের স্ক্রিপ্ট ভোঁকাট্টা। যদি বলে যোনি বলে যা আছে তা বদলে শিশ্ন করে ফেলব, ব্রেস্ট কেটে বাদ দিয়ে চেস্ট করে ফেলব, হরমোন থেরাপি করে এমন গোঁপ গজাব যে হেড আপিসের বড়বাবুও হার মেনে যাবে - তবে? শরীর-মন সব মিলিয়ে কেলেঙ্কারি দশা করে ফেলছে এইসব মানুষেরা -  জৈবিক লিঙ্গই বলি, কিম্বা তার হাত ধরে পাওয়া সামাজিক লিঙ্গ-ভূমিকা, সব স্ক্রিপ্ট মুছে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : হত্যা হাহাকারে – অপরাধসাহিত্যে বিনির্মাণ ও আধুনিকতা

অর্থাৎ এবার তবে ফর্মে যোগ হল আরেকটি খোপ, তৃতীয় লিঙ্গ বা আদার; ‘আদার’ শব্দটার মানে অপর-ই তো?! বঝাই যাচ্ছে কী যত্ন করে অপরায়ন করা হল কিছু মানুষের, সাধারন মানুষের সাধারন জগতে আগে যাদের সাধুভাষায় বলা হত ক্লীব, নপুংসক বা কিম্পুরুষ – সোজা কথায় হিজড়া। ভাষা ভারি মজার জিনিস, এই ক্লীব শব্দটা আবার ছোটবেলার লিঙ্গশিক্ষার আসরে ইংরেজি নিউটার-এর প্রতিশব্দ হিসাবে শেখানো হয়েছিল। আর কুকুর/বিড়ালদের ব্যাপারটা তো আপনারা জানেনই, তাদের নিউটার করে দেওয়া হয় প্রজনন আটকাবার জন্যে (রোডেশিয়ান) বা মালিক ঝামেলা কমাতে চান বলে (গৃহবাসী)। নিউটার শব্দটা এখানে এক বিশেষ দ্যোতনা নিয়ে উপস্থিত – যৌনকামনাহীন -  শুধু যৌনক্ষমতাহীন নয়, শুধু প্রজননক্ষমতাহীন নয়  - কামনাহীন – ভাবার মতো বিষয় বটে!

অর্থাৎ, পুরুষ মানে শিশ্নধারী, কাম-প্রজননক্ষম প্রাণী। এটাই ফাইনাল ম্যাস্কুলিনিটি , যার সঙ্গে খাপে খাপ মিলবে ফাইনাল ফেমিনিনিটি – নারী, যেকিনা যোনিধারী, কাম-প্রজননক্ষম প্রাণী।  কামনা না থাকলে নিউটার, ক্লীব  - তখন পুরুষত্ব, নারীত্ব কিছুই বিবেচ্য নয়। শব্দ(ব্রহ্ম) এটাই বলছে (ডাঃ গুগুল বলছেন নিউটার করে দিলে শুধু যৌনকামনাহীনতাই ঘটে না, ঝাঁঝহীনতাও ঘটে)!

তারমানে কি জেন্ডার নির্ধারিত হচ্ছে যৌনকামনা দিয়ে? অন্তত হত কি কোনকালে? হিজড়া মানে ঠিক কী তা না জানা থাকার কারণে (আজও কে কতোটা জানেন!) যা কিছু ‘অন্যরকম’ তাই হিজড়া এমন একটা ভাবনা ভেবে ফেলায় অসুবিধা নেই, বরং অপরকে একটা আস্ত প্যাঁটরায় বেঁধে ফেলা যায়, নিজেকে বলা যায় আর যাই হোক ওটা আমি নই – কারন আমার কামনাও আছে, কামনা প্রকাশের যন্ত্রপাতিও আছে, প্রজননক্ষমতাও আছে।

আরওপড়ুন : সুমন মান্নার দুটি কবিতা

পুরুষপ্রাণীর পৌরুষের  উপাদান ও উদ্দেশ্য মূলত প্রজনন – পাতি ও পরিষ্কার। পুরুষমানুষের ক্ষেত্রে তা বলা যায়না, এখানে আরও নানা বস্তু থেকে জলঘোলা করেছে।  পৌরুষের আল্টিমেট গন্তব্য কোনটা –  ঘাটে ঘাটে রতিসঙ্গিনী/প্রেমিকা? বউ-এর পেটে (পুং)ভ্রূণ? কর্মক্ষেত্রে শিখর ছোঁয়া? সংসারের দায়ভার বইতে পারার মতো উপার্জনক্ষমতা? সব, মনে হয় সবটাই – সবটা মিলিয়েই তৈরি হয় সেই আকর্ষণীয় প্যাকেজ, যার চেহারা ক্রমাগত স্থান কাল পাত্রের নিরিখে বদলে বদলে যায়। পুরুষপশুর তুলনায় পুরুষমানুষের জীবন অনেক বেশি কঠিন হয় ফলত।

মেয়েপ্রাণী সন্তানধারণ করে, পালন, স্তন্যপান এবং ইত্যাদি বায়োলজির তাড়নায় চলে, যদিও এ ক্ষেত্রে মেয়েমানুষের অবস্থান অতুলনীয় – তার মূল প্রয়োজন ঠিক কী তা সে নিজেও জানে না আর সমাজও ভুলে গেছে। প্রজনন হ্যাঁবলুন, লালন-পালন হ্যাঁবলুন, শ্রমদান হ্যাঁবলুন, সংসার হ্যাঁবলুন, যৌন চাহিদা মেটানো হ্যাঁবলুন, রোজগার হ্যাঁবলুন, লেখাপড়া শেখা হ্যাঁবলুন – বাপরে, সবই পসিটিভ – এই বিপুল সদর্থকতা নিয়ে কোথায় যাব?!

প্রাণীকুলের জন্যে আছে সেক্স, যেমন চিহ্নে তেমনি কাজে; মানুষ যেহেতু প্রাণীর বাড়া তাই শুধু সেক্স হলে চলবে না, তার চাই জেন্ডারও। অর্থাৎ প্রবৃত্তি ডাক দিয়েছে বলে শুয়ে পড়লেই চলবে না, চাই ঘটাপটা করে অমুক ওয়েডস তমুক। এখানে জেন্ডারের আর একটা মানে পাওয়া গেল, সেক্সকে সাজিয়ে গুছিয়ে ভব্যিযুক্ত করে নেওয়া। ধর্ম, জাত, বয়েস, উচ্চতা, গোত্র, বংশ, শ্রেনি, প্রতিষ্ঠা সব মাপ মতো হলে তবে জেন্ডার। শিশ্ন হলেই পুরুষ হওয়া যায় না, ম্যাস্কুলিনিটি নির্ভর করে সেই শিশ্নের মাপের ওপর, যেমন যোনিচ্ছদের চাঁদোয়ার তলায় প্রকৃত ফেমিনাইন জেন্ডার ঘর বাঁধে, এই আশায় যে একদিন সে ঘরের চাল ফেটে জল পড়বে তার তৃষিত অন্তরে! অপূর্ব, না?

আরও পড়ুন : সৎ অসতীর আত্মকথন

আচ্ছা বেশ, তবে যেন তাই হল, শিশ্নধারীরা যোনিধারীদের  সঙ্গে ধুমধাম করে শুল, প্রজনন হল, আবার মেল বাচ্চা জন্মে ম্যাস্কুলাইন শিশ্ন ফলাতে লাগল অন্যের ঘরে জন্ম নেওয়া ফেমিনাইন ফিমেল বাচ্চার ওপর। চাকা চলতে লাগল গড়গড়িয়ে  উৎপাদনের পর পুনরুৎপাদনের পর পুনঃ পুনরুৎপাদন। সবাই খুশি; আপনি-আমি, পরিবার ও পিতা মিলে সেক্স-জেন্ডারের হদ্দমুদ্দ করে ফেললাম বেশ।

আর সেই যারা স্ক্রিপ্ট উল্টে দেবার চেষ্টা করছে ক্রমাগত, তাদের কোথায় জায়গা হবে তবে? অপরের খোপে? একটু যদি সেই খোপে নাক গলিয়ে দেখতে চাই কী এমন আছে সেখানে তবে দেখতে পাব দুনিয়ার অপরকে এক হওয়ানোর বিরাট কর্মকাণ্ড চলছে।  সেখানে জমা পড়েছে রাজ্যের কিম্ভূত; কারো শরীরে স্পষ্ট শিশ্ন বা স্পষ্ট যোনি নেই, বা আছে একত্র সমাবেশে, বা শরীরের ভিতরে রয়ে গেছে কিছু রহস্য, ক্রোমোসোম বা হরমোন ভিন্নতর বিন্যাসে অন্য গল্প লিখছে হয়ত। কেউ শিশ্ন বা যোনি পেয়েও সোজা পথে হেঁটে ম্যাস্কুলাইন বা ফেমিনাইন জেন্ডারে পৌঁছাতে না চেয়ে একে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়ছে, শিশ্ন বলছে নারী হব, যোনি বলছে পুরুষ, কেউ আবার বলছে দুইই হব, কেউ বলছে আরও অধিক কিছু, কেউ এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ভাসছে -  তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা – মন সবই জানে, প্রশ্ন হল, আপনি সে কথা শুনতে, জানতে, বা মানতে রাজি আছেন কিনা!

আচ্ছা, এই যে এতো মানুষকে গলিয়ে দেওয়া হল ‘অপর’ ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে, তারা সবাই সহবাস  করবে বলে আশা করি আমরা? নাকি - ‘আমরা’র ঘরের মধ্যে সহবাস হলেই ঢের, আর ‘অপর’ নিয়ে ভাবতে পারিনা বাপু – এর বাইরে আর কিছু ভেবেই উঠতে পারি না! ‘আমরা’ ঘরে থাকে প্রথম সেক্স মেল, যে সাক্সেস্ফুলি ম্যাস্কুলাইন জেন্ডারে পৌঁছে গিয়ে সাক্সেস্ফুলি ফেমিনিন জেন্ডার হয়ে উঠতে পেরেছে এমন দ্বিতীয় সেক্স ফিমেলের সঙ্গে সাক্সেস্ফুল সহবাস ও প্রজনন করে। ‘অপর’ ঘরে থাকে যারা তারা এ’ঘরের লোকদের বলে সিসজেন্ডার মানুষ, আর এ’ঘরের সিসমানুষরা ও’ঘরের কিম্ভূতদের বলে ট্র্যান্সজেন্ডার মানুষ।  এভাবেই নতুন স্লোগান তৈরি হয়, যোগের বদলে - দলে দলে ভাগ দিন!

আরও পড়ুন : ইলা আসছে, কী বললেন অন্যতম চরিত্রাভিনেতা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ঋদ্ধি সেন!

সিসমানুষের দলের দিকে তাকাই যখন তখন স্পষ্ট দেখি দলটা আসলে গায়ের জোরে বানানো, ঠিক যেমন ‘অপর’ ঘরের ট্র্যান্সমানুষদের ধরে বেঁধে এক ঘরে ঢোকানো হয়েছে, তেমনি। দলটা তৈরি হয়েছে তাদের নিয়ে যারা নিজেদের ট্র্যান্সমানুষ বলে না, এবং যাদের জন্মকালীন সেক্স-তকমার সঙ্গে পরবর্তীকালের জেন্ডার-তকমার বিরোধ নেই। ব্যাপারটা কঠিন। যদি ধরে নিই দুটো নেসেসারিলিএকসঙ্গেই ঘটবে সবসময়, তাহলে বোধহয় ভুল হবে। মানে, হতে পারে আমি যোনি ইত্যাদি নিয়ে জন্মালাম বলেই পরবর্তীকালে নারীর সামাজিক লিঙ্গভূমিকা পালন করতে লাগলাম নিখুঁতভাবে, যার অন্যতম মূল করনীয় হল আবশ্যিক বিষম-নিয়মতান্ত্রিকতা পালন ও প্রজনন - সেক্ষেত্রে আমি ঠিকঠাক সিসজেন্ডার মেয়েমানুষ বটে। কিন্তু চা আর চুমুকের মধ্যে ফারাক তো বিস্তর; আমার যোনি/শিশ্ন-সমেত ফি/মেল শরীর পরবর্তীকালে ‘নারী’/’পুরুষ’ তকমা গ্রহণ করল বটে, সে নিজেকে ট্র্যান্সমানুষ বলল না বটে, কিন্তু তার মানেই কি নারী/পুরুষ-এর সামাজিক লিঙ্গভূমিকা পালন করে ফেলল? তার মানেই কি আবশ্যিক বিষম-নিয়মতান্ত্রিকতা ঘটাল? বিয়ে করল?শিশ্ন-যোনির প্রবেশমূলক যৌনতাই শুধু করল? পুনঃ পুনঃ পুনরুৎপাদন চালিয়ে যেতে লাগল? না যদি করি এসব তাহলেও কি আমি সিস?

কিম্ভূত নানারকম হয়, যেমন ট্র্যান্স-সিস, যেমন নারী-পুরুষ, যেমন বিষম-সম, যেমন মেল-ফিমেল  – সব দলেই বেহুদা পাব্লিকের অভাব নেই।  যেখানে যতো দল তৈরি হচ্ছে – হচ্ছে, কারন সংগঠিত হওয়া জরুরি - ততোই কিম্ভূত বেহুদার সংখ্যা বাড়ছে। কারন দল বা তকমা বা পরিচয় যাই বলি না কেন, সবেরই নিয়ম থাকে, অবশ্য পালনীয় নানা কর্তব্য থাকে, তরতম থাকে। যেমন ট্র্যান্স যদি একটা তকমা হয়, সেখানকার পালনীয় কর্তব্য হতে পারে উল্টোদিকের জেন্ডার-ভূমিকা টু দ্য টি মেনে চলা।  অর্থাৎ সিসপুরুষের থেকেও বেশি ম্যাস্কুলাইন বা সিসনারীর থেকেও বেশি ফেমিনাইন হওয়া। তাতে আসলে আমি কার হাত শক্ত করলাম, কোন পিতা মুচকি হেসে অলক্ষ্যে আমার পিঠ চাপড়ে দিলেন তা নিয়ে আর ভাবলাম না। যে ট্র্যান্স তার শরীরকে যতটা বদলে ফেলতে পারবে উল্টোদিকে, সে তত বেশি ‘তম’ হয়ে উঠবে, ঠিক যেমন যে নারী থেকে নারী’তর’ হবার পথ হল গর্ভে সন্তান ধারণ, যে ধরেনি বা পারেনি বা চায়নি তার সিসনারীত্বে সংশয় থাকছে। আর যেসব সিসমানুষ বিষমকামীই নয়, বা আবশ্যিক বিষমকামিতায় বিশ্বাস করে না, যারা একগামী নয়, যারা অ-কামী বা কিঙ্কি বা বিডিএসএম প্র্যাকটিসে আছে তারা কোথায়? কোন দলে?

বিভাজিত বিভাজিত বিভাজিত হতে হতে শুওরের মাংস-ও হতে পারছি না, ভাবছি নিরামিষ খাওয়া ও নিয়মিত গোচনা পান করতে শুরু করব!

Webjalsha editorial
Advertisment