Advertisment

হাইওয়েতে ট্রাক ফেলে চম্পট চালকদের, এখনও বন্ধ বহু রাজ্যের সীমানা

"আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, অত্যাবশ্যকীয় এবং অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাকের রাস্তা দ্রুত খালি করে দিন, নাহলে কিছুদিনের মধ্যেই দেশের সব বড় শহরে জিনিসপত্রের চরম আকাল দেখা দেবে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
lockdown coronavirus

সোমবার চণ্ডীগড়ের বাইরে ট্রাকের সারি। ছবি: জয়পাল সিং, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

রবিবার কেন্দ্রের তরফে অত্যাবশ্যকীয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি একাধিক রাজ্যের সীমান্ত, যার ফলে এখনও আটকে রয়েছে অসংখ্য ট্রাক। সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো পরিবহনকারীদের পক্ষে বিশাল মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল থেকে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, এবং ঝাড়খণ্ড অভিমুখে ফেরত যাওয়া।

Advertisment

ট্রাক মালিকরা বলছেন, নানা রাজ্যের সীমান্তে ট্রাকের ভিড় জমে যাওয়ার ফলে নিজেদের শহর বা গ্রামে পালিয়ে গেছেন অর্ধেকের বেশি চালক। অনেকে গাড়িটা পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান নি, হাইওয়ের ওপরেই অসুরক্ষিত অবস্থায় ফেলে চলে গেছেন কোটি কোটি টাকার পণ্য। একাধিক পরিবহনকারী জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র-মধ্যপ্রদেশ সীমান্ত এবং অন্যান্য কিছু জায়গা থেকেও হাইওয়ের পাশে পড়ে থাকা ট্রাক লুঠ হওয়ার খবর এসেছে।

lockdown coronavirus অনির্দিষ্টকালের জন্য দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে দাঁড়িয়ে ট্রাক। তাই কেবিনে বসেই রান্না-খাওয়া সারছেন উত্তরপ্রদেশের ট্রাক চালক মূলচাঁদ যাদব। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ট্র্যাফিক জ্যাম-এর খবর এসেছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের সীমান্ত বরাবর হাইওয়ে এবং রাজ্যগুলিতে প্রবেশ করার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট থেকেই। অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেসের সভাপতি কুলতরণ সিং আটওয়াল জানাচ্ছেন, "মহারাষ্ট্রের কিছু জায়গায় ফল আর শাকসবজি, এবং পাঞ্জাবের কিছু গ্রামে চাল আর আটা লুঠ হওয়ার খবর পেয়েছি আমরা। আমাদের খালি ট্রাকে করে অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছি, কিন্তু এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে কিছুই বলছেন না।" কোনও ট্রাক চালক যদি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে শ্রমিকদের তাঁর গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যান, তবে তাঁর হাতে স্থানীয় পুলিশের চালান ধরানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্ক: পরিযায়ী শ্রমিকদের কাউন্সেলিংয়ের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের 

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, এবং রাজস্থান থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন দিল্লিতে। আটওয়াল বলেন, "আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, অত্যাবশ্যকীয় এবং অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাকের রাস্তা দ্রুত খালি করে দিন, নাহলে কিছুদিনের মধ্যেই দেশের সব বড় শহরে জিনিসপত্রের চরম আকাল দেখা দেবে। সরকার নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম। আমাদের প্রায় ৫০ শতাংশ ট্রাক চালক নিজেদের গ্রামে পালিয়ে গেছেন।"

প্রতিটি বড় শহর থেকে গ্রামাঞ্চল অভিমুখে বিপুল সংখ্যক মানুষের যাত্রার ফলে শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে শহরগুলিতে, যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন ট্রাক মালিক এবং মুদির দোকানে মাল সরবরাহকারীরা। পাটনার এক পরিবহণ সংস্থার মালিক জানাচ্ছেন, দুই ট্রাক বোঝাই ওষুধ যথাস্থানে পৌঁছনো সত্ত্বেও মাল নামানোর মতো শ্রমিক নেই। দিল্লি এবং জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (দিল্লি-এনসিআর) পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে বহু দোকানে দেখা দিয়েছে আটা, বিস্কুট, এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় 'প্যাকেজড ফুড'-এর অভাব।

পুরোদমে চলছে না বিগবাস্কেট বা গ্রোফার্স-এর মতো অনলাইন বিপণিও। গ্রোফার্স তো অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে শ্রমিক 'ধার' নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পর্যন্ত। গ্রোফার্স-এর সিইও আলবিন্দর ঢিন্ডসা টুইট করে যা লিখেছেন, তার অর্থ দাঁড়ায়, "আপনার সংস্থায় যদি এমন কিছু অতিরিক্ত অদক্ষ শ্রমিক যাঁরা কিছু বাড়তি রোজগার করতে চান + নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে চান, দয়া করে গ্রোফার্স-এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা সমস্ত শহরে আমাদের গুদামঘরে কর্মী নিয়োগ করছি। প্রয়োজন - স্মার্টফোনের সঙ্গে পরিচিতি। পরিবহণ আমরা দেব।" ঢিন্ডসা আরও জানিয়েছেন, বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্র থেকে এক ব্যাচ শ্রমিককে ইতিমধ্যেই নিয়োগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: খাবার প্রচুর, সমস্যা মানুষের কাছে পৌঁছনো

সংস্থার গ্রাহকদের উদ্দেশে একটি মেইলে গ্রোফার্স-এর কাস্টমার বিভাগের শীর্ষকর্তা সুনীত গুপ্তা লিখেছেন, "লকডাউনের ফলে আমাদের কিছু ডেলিভারি পার্টনার কিছুদিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন। আমরা তাঁদের অনুরোধ জানিয়েছি তাঁরা যেন আমাদের কাছে ফিরে আসেন, এবং আশ্বাস দিয়েছি যে তাঁদের এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে উন্নত মানের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি আমরা। তবে ১০০ শতাংশ গতিতে কাজ চালু হতে আরও কিছুদিন লাগবে আমাদের... এই মুহূর্তে আমাদের ক্ষমতার চেয়ে অনেকটাই কম কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা, যেহেতু সমস্ত গুদামের জন্য পারমিট লাগছে, এবং প্রত্যেক ডেলিভারি কর্মীর জন্য পাস লাগছে। আপাতত আমাদের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মীর জন্য আমরা পাস যোগাড় করেছি, বাকিদের পাস জারি করার কাজ চলছে।"

পাশাপাশি, বিগবাস্কেট জানিয়েছে যে ২৫ মার্চ তারা তাদের পূর্ণ সামর্থ্যের ১০ শতাংশে কাজ করেছে, ২৯ মার্চ যে হার দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে। এক বিবৃতিতে এই সংস্থা জানিয়েছে, "আমাদের মানবসম্পদ বিভাগ কর্মী নিয়োগ করা ও তাঁদের ধরে রাখার ওপর মনোনিবেশ করছে, যাতে আমরা আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারি।"

lockdown coronavirus দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে দাঁড়িয়ে ট্রাকের সারি। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও আছে। শহরের সীমানার মধ্যে রেস্তোরাঁ অথবা খাবার ডেলিভারি করা সংস্থারা খাবার প্যাক করার সরঞ্জাম বা খাবারের সঙ্গে দেওয়ার কাঁটা-চামচ ইত্যাদি পাচ্ছে না। যেহেতু এগুলিকে প্রথমে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী হিসেবে দেখা হয় নি। বেঙ্গালুরুর এক রেস্তোরাঁ-মালিক জানাচ্ছেন, "খাবারের ক্ষেত্রে কাঁচা মালকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু সিলভার ফয়েল বা প্লাস্টিকের কাঁটা-চামচ ওই তালিকায় ছিল না। যোগাড় করতে খুব কষ্ট করতে হয়েছে।"

এইসব রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে যেসব কর্মী কাজ করেন, তাঁরাও প্রথমে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েন। বিশেষ করে ভয় ছিল কাজে বা বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে পড়ার। নয়ডার এক রেস্তোরাঁ মালিক বলছেন, "আমরা আপাতত আমাদের কিছু স্টাফের জন্য সাময়িক বন্দোবস্ত করে দিয়েছি। যেহেতু এখন রেস্তোরাঁয় খেতে কেউই আসছেন না, আমাদের কর্মীরা এখন রেস্তোরাঁতেই খাওয়া-ঘুম সারছেন।"

একইরকম সমস্যা হয়েছিল সুইগি এবং জোমাটোর মতো ফুড ডেলিভারি অ্যাপের। কিছু শহরে ডেলিভারির দায়িত্ব তৃতীয় কোনও সংস্থাকে দিয়েছে এই দুই বড় সংস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, "অর্ডার ডেলিভারি করতে যাওয়ার সময় আমাদের ছেলেদের সমস্যা হচ্ছে না, যেহেতু সঙ্গে খাবার থাকছে, কার্ফু পাসও আছে। সমস্যা হচ্ছে রেস্তোরাঁ বা নিজেদের কাজের জায়গায় ফেরত যাওয়ার সময়। খুব কষ্ট হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে যে ওরা কাজেই বেরিয়েছে।"

বিভিন্ন টেলিকম টাওয়ারের জন্য ডিজেল-বাহী ট্রাক এবং মিনি-ট্রাক চালকরাও একই কথা বলছেন। টাওয়ার পর্যন্ত যেতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভয়ে অফিসে ফিরতে হচ্ছে নানারকম ঘুরপথে।

coronavirus
Advertisment