Advertisment

মোদী সরকারের প্রস্তাবিত ১০% সংরক্ষণ কে পাবে? কেন পাবে? কীভাবে সম্ভব?

সাধারণ শ্রেণির অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ সংরক্ষণকে বৈধ করতে গেলে সরকারকে ভারতীয় সংবিধানের ১৫ ও ১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ সংরক্ষণও আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখ পড়বে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ফাইল ছবি।

চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সাধারণ শ্রেণির (জেনারেল কাস্ট) জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিলে অনুমোদন দিয়েছে মোদী মন্ত্রিসভা। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং সরকারি চাকরিতে এই সংরক্ষণ কার্যকর হবে। সোমবার মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসতেই সংরক্ষণ ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই প্রতিবেদনে সেসব প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হল।

Advertisment

১০ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় কে কে?

সাধারণ শ্রেণি (জেনারেল কাস্ট) বলতে স্বাভাবিকভাবে অ-দলিত, অন্যান্য অনগ্রসর জাতি (ওবিসি) এবং উপজাতি (ট্রাইবাল) সম্প্রদায়ের বাইরে মূলত উচ্চবর্ণের ভারতীয় নাগরিকদের কথাই বোঝানো হয়েছে। এই ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেসব পরিবারের সব সদস্যের মিলিত বার্ষিক আয় আট লক্ষ টাকার কম, ও যাদের পাঁচ একরের কম কৃষি জমি রয়েছে, সেই পরিবারের সদস্যরাই কেবল 'অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সাধারণ শ্রেণি' হিসাবে বিবেচিত হবেন এবং সংরক্ষণের আওতায় ঠাঁই পাবেন। পাঁচ একরের বেশি কৃষিজমি অথবা ১ হাজার বর্গফুট বা এর থেকে বেশি আয়তনের আবাসিক ফ্ল্যাট অথবা বিজ্ঞাপিত (নোটিফায়েড) পৌর এলাকায় ১০০ গজের বসবাসযোগ্য জমি অথবা বিজ্ঞাপিত নয় এমন (আদার দ্যান নোটিফায়েড) পৌর এলাকায় ২০০ গজের বসবাসযোগ্য জমির মালিকানাধীন পরিবারের কোনও সদস্য এই ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন না।

আরও পড়ুন - দায়িত্বে পুনর্বহাল ভার্মা, রাফাল নিয়ে মোদীকে আক্রমণ রাহুলের

অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সাধারণ শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ কি অভিনব?

এই ধরনের সংরক্ষণের ধারণা একেবারেই অভিনব নয়। ২০০৮ সালে কেরালার ভি. এস. অচ্যুতানন্দ সরকারও সাধারণ শ্রেণির অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য স্নাতক স্তরে ১০ শতাংশ এবং সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ৭.৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ বিষয়ে একটি আবেদন সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে রয়েছে।

উচ্চবর্ণের গরিবদের সংরক্ষণ দেওয়ার জন্য ২০০৮ সালে কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছিলেন উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্য়মন্ত্রী মায়াবতী।

সাধারণ শ্রেণির অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য ১৪ শতাংশ সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করতে ২০০৮ ও ২০১৫ সালে বিল পাশ করেছে রাজস্থান বিধানসভাও।

এই সংরক্ষণকে কীভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব?

সাধারণ শ্রেণির অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ সংরক্ষণকে বৈধ করতে গেলে সরকারকে ভারতীয় সংবিধানের ১৫ ও ১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। উল্লেখ্য, ১৫তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ এবং জন্মস্থানের ভিত্তিতে বিভাজনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সকলকে সমান সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে সংবিধানের ১৬তম অনুচ্ছেদে। ফলে, আলোচ্য সংরক্ষণকে বাস্তবায়িত করতে এই দুই অনুচ্ছেদের সংশোধন অপরিহার্য।

আরও পড়ুন -দুদিনের ভারত বনধ্: কয়েকটি জরুরি তথ্য

কীভাবে হবে সংবিধান সংশোধন?

সংসদের উভয় কক্ষে কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদসদ্যের উপস্থিতি এবং ভোটদানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনী বিলটিকে পাশ করাতে হবে। এরপর দেশের কমপক্ষে অর্ধেক সংখ্যক রাজ্য আইনসভাতেও ওই বিলটিকে অনুমোদিত হতে হবে।

প্রসঙ্গত, সংরক্ষিত আসনের শতকরা হিসাবটিও আদালতের বিচার সাপেক্ষ। এম.আর. বালাজি এবং অন্যান্য বনাম স্টেট অব মাইসোর (১৯৬২) মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, "সাধারণ ক্ষেত্রে এবং বৃহত্তর পরিধীতে, বিশেষ ব্যবস্থা ৫০ শতাংশের কম হওয়া উচিত"। এরপর ইন্দিরা সেহনয় প্রমুখ বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য (১৯৯২)-সহ একাধিক মামলার প্রেক্ষিতে (সংরক্ষণের ক্ষেত্রে) একটি উর্ধ্বসীমার কথা বারবার উল্লেখ করেছে আদালত। এই মুহূর্তে মোদী সরকারের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সাধারণ শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ, ৫০ শতাংশের উর্ধ্বসীমাকে ছাড়িয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুতে ৬৯ শতাংশ সংরক্ষণ প্রচলিত আছে। বলা হয়, নবম তফশিলের ক্ষমতা বলে এই সংরক্ষণ স্বীকৃত হয়েছে বলে তা আদালতের বিচার্য নয়। তবে, আই. আর. কোয়েলহো বনাম স্টেট অব তামিলনাড়ু (২০০৭) মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রুলিং-এ বলা হয়, যেসব আইন সংবিধানের মূল কাঠামোকে আঘাত করে, তা আদালতের বিচার্য হওয়া উচিত। এমনকী, ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৪-এর পর যেসব আইন নবম তফশিলে যুক্ত হয়েছে সেগুলিও আদালতের বিচার্য বলে মন্তব্য করে শীর্ষ আদালত।

ফলে, প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ সংরক্ষণও আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখ পড়বে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

আরও পড়ুন- ‘গ্রেফতার করে দমানো যাবে না, কালও বনধ করব’

এখনই কেন এই সংরক্ষণের কথা বলছে সরকার?

মাস তিনেকের মধ্যেই দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচন। এদিকে, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড় এবং রাজস্থান- এই তিন রাজ্যের সদস্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যূত হয়েছে বিজেপি। ফলে, দেশের সাধারণ নির্বচনে ক্ষমতায় টিকে থাকার বিষয়ে আশঙ্কিত গেরুয়া শিবির।

মনে করা হচ্ছে, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে উচ্চবর্ণের ক্ষোভ এবং দূরে সরে যাওয়ার ফলেই বিজেপি-কে পরাজিত হতে হয়েছে। এর পাশাপাশি, দলিতদের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি এবং সুপ্রিম কোর্টের তপশিলি জাতি ও উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের কয়েকটি ধারাকে জামিনযোগ্য করলেও, কেন্দ্রর সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করাকে ভাল চোখে দেখেনি ভোটারদের একাংশ। এছাড়া, বিগত কয়েক বছর ধরে গুজরাটে পতিদার সম্প্রদায়, রাজস্থানে জাঠে, মহারাষ্ট্রে মারাঠা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে কাপুসরা সংরক্ষণের দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছে। এসব কিছুর ফলশ্রুতি হিসাবেই মোদী সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি-সহ একাধিক বিরোধী দল এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানালেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এই সংরক্ষণকে 'গিমিক' হিসাবে ব্যবহার করতেই 'তড়িঘড়ি' সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।

Read the full story in English

Advertisment