২০ শে জুলাই থেকে টানা ২৫ দিন, ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে আটটি হাসপাতাল ঘুরেছিল পরিবার! স্রেফ ছেলেটিকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে মাত্র ৯ বছর বয়সেই প্রাণ হারান রাজস্থানের সেই দলিত স্কুল পড়ুয়া। রাজস্থানের জালোরের ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে দাবি করা হয়েছিল, একই পাত্র থেকে জল খাওয়ার জন্য মারা হয়নি ৯ বছরের ওই নাবালককে।
কিন্তু মৃত পড়ুয়ার বাবা দেবরাম মেঘওয়াল দাবি করেছেন, এক পাত্রে জল খাওয়ার জন্যই তাঁর ছেলেকে মারধর করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। ছেলের মারের পর বাবা দেবরাম মেঘওয়াল দাবি করেন, শিক্ষকের মারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ছেলে। প্রথমে বাড়ি থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বগোদার বজরং হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। দুদিন পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরে আবারও অসুস্থ বোধ করেন ইন্দ্র। পরিবার তাকে নিয়ে যায় ভীনমলের আস্থা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে সেখানেও দিন দুয়েক থাকার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাড়ি ফিরে আবারও একই ঘটনা! পরিবার তাকে ভিনমালের ত্রিবেণী হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে তাকে দু দিন ভর্তি করা হয়। তাকে বাড়িতে আনার একদিন পরে, ব্যথা আবারও বেড়ে যায় এবং পরিবার তাকে সুরানার একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে ডাক্তাররা তাকে ১৫৫ কিলোমিটার দূরে গুজরাটের একটি হাসপাতালে রেফার করে। চিকিত্সার পরে, ডাক্তাররা প্রায় ২৪ ঘন্টা পরীক্ষার পরে তাকে ছেড়ে দেন এবং পরিবার রাজস্থানে ফিরে আসে। ফের অসুস্থ বোধ করায় ডাক্তারদের পরামর্শে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্দ্রকে। রিপোর্ট অনুসারে, ১৩ আগস্ট সকাল ১১:৩০ মিনিটে মারা যাওয়ার আগে ইন্দ্রকে প্রায় ২৪ ঘন্টা আহমেদাবাদ হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। হাসপাতালের তরফে শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বাঁধা সহ শিশুর গলায় সংক্রমণের উল্লেখ করা হয়। চিকিৎসক আরও জানান, মৃত্যুর চূড়ান্ত কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: < ‘নৌকা থেকে উদ্ধার AK 47-গুলি-বিস্ফোরক’! জঙ্গি তত্ত্ব ওড়ালেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী >
এর পরেই শিশুর পরিবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনে। পুলিশ শিক্ষককে গ্রেফতারও করে। পরিবারের অভিযোগ টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগ আগেই উঠেছিল এবার রাজস্থানে দলিত শিশুর মৃত্যু নিয়ে আবারও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মৃত শিশুর পরিবার। পরিবারের দাবি গত ২০ জুলাই স্কুল চলাকালীন শিক্ষকের জন্য ‘সংরক্ষিত’ মাটির পাত্র থেকে ভুল করেই জল খেয়ে নেয় দলিত শিশুটি। আর তাতেই ক্ষেপে যান স্কুলের শিক্ষক, বেধড়ক মারধরে মৃত্যু হয় দলিত শিশুর। এই নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।
পরিবারের দাবি এর মধ্যে একাধিকবার শিক্ষক অভিযুক্ত চাইল সিং শিশুটির পরিবারকে টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটমাটের অনুরোধ করেন। এমনকী পুলিশের কাছে না যাওয়ারও অনুরোধ করেন। এর পাশাপাশি দলিত শিশুর চিকিৎসার সমস্ত খরচ দেওয়ার কথাও বলেন। মৃত শিশুটির পরিবারের আরও দাবি ‘ঘটনার পর, তাদের গ্রামের রাজপুতরা একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং পুলিশের কাছে না যেতে বলেছিল আমাদের’।
পাশাপাশি মৃত শিশুর কাকার অভিযোগ, ‘শিক্ষক গ্রেফতারের পর থেকেই আমরা গ্রামে ভয়ের মধ্যে বাস করছি। তিনি বলেন, আজও দলিতরা গ্রামে নির্যাতিত। চুল কাটতেও এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় নাপিতের কাছে। আমরা যখন পুলিশের কাছে এফআইআর করি তার পর থেকে আকারে ইঙ্গিতে নানা প্রকার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে’।
ইন্দ্রের বড় ভাই, একই স্কুলের ক্লাস ফাইভের ছাত্র পরিবারের এই বিষয়টির সঙ্গে একমত। সোমবার, জালোরের এসপি হর্ষ বর্ধন আগরওয়াল ইতিমধ্যেই স্কুলের ১০ জন পড়ুয়ার বয়ান রেকর্ড করেছেন। এসপি আগরওয়াল বলেছেন, তদন্ত চলছে। তবে জল খাওয়ার জন্য যে শিশুটিকে মারধর করা হয়েছে তার কোন প্রমাণ মেলেনি। ইন্দ্রের এক সহপাঠী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, একটি কাগজের টুকরো নিয়ে ঝামেলার জেরেই শিক্ষক তাদের দুজনকে মারধর করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সোমবার এসপির কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে রাজপুত সম্প্রদায়।
আত্মীয়রা দাবি করেন পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবারের একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং অবিলম্বে স্কুলের লাইসেন্স বাতিলেরও দাবি তোলা হয়েছে। দলিত শিশু মৃত্যুর ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে রাজস্থান সরকার। ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস-এর চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো রবিবার বলেছেন যে শিশুটির মৃত্যুর বিষয়ে রাজস্থান সরকারকে ইতিমধ্যেই একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সামনে আনা এবং দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করা একান্ত ভাবেই দরকার।