প্রায় দুবছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত। চিনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশের উপর "অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা" এখনও জারী রয়েছে। আর তার জেরেই সংকটের মুখে হাজার হাজার মেডিকেল পড়ুয়ারা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে। অফলাইন ক্লাস করতে করতে আজ তারা রীতিমত ক্লান্ত। তাদের দাবি এবার অন্তত অনলাইন ক্লাসটা চালু করা হোক।
এমন অনেক পড়ুয়া রয়েছেন যাদের কোর্স প্রায় শেষের মুখে। ইন্টার্নের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। এদিকে আবারও চিনে বেড়েছে করোনা সংকট। একাধিক শহরে জারী করা হয়েছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না চিনের একাধিক মেডিকেল কলেজের ভারতীয় পড়ুয়ারা। চিনের জিলিন শহরের বেহুয়া ইউনিভার্সিটির মেডিকেল পড়ুয়া বছর ২১ এর হর্ষ ব্যাস ২০২০ সালে করোনার সময় ভারতে ফিরে এসেছেন সেই থেকে কলেজে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
এক সাক্ষাতকারে হর্ষ বলেন, "২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভারতে আসি, মার্চেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, করোনার বাড়বাড়ন্ত সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। সেই সময় আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম আজ তৃতীয় বর্ষ আমার। সবটাই হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু এর ফলে অনেক কিছু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস অফলাইনে হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তার উপায় নেই। প্রায় দু বছরের বেশি সময় ধরে দেশে আটকে রয়েছি। কবে ফিরতে পারব জানিনা, নতুন করে করোনা বাড়ায় আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে তলিয়ে গেল”। সেই সঙ্গে ব্যাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আমরা হাজার হাজার পড়ুয়া শুধু এটা জানতে চাই, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশের উপর "অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা" কবে উঠবে? চীন ছাড়া একাধিক দেশ আবার অফলাইন ক্লাস শুরু করেছে। আমরা জানিনা কেন আমাদের এখনও সেদেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না”।
জিনজিয়াং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জয়পুরের অভয় পাঠানিয়া ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "গত দু বছরে ইতিমধ্যেই আমরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমরা অফলাইন ক্লাসে ফিরে যেতে চাই। তিই বলেন, অনলাইন ক্লাস শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের এমবিবিএস ডিগ্রির তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত তাত্ত্বিক ধারণা প্রদান করে। চতুর্থ এবং শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেনিংয়ের জন্য হাতে কলমে কাজ শেখাটা বিশেষ ভাবে দরকার। অনলাইনে এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়"।
ভারতীয় দূতাবাসের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ২০ হাজারের বেশি ছাত্র করোনাকালীন পরিস্থিতিতে চিন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। ইউক্রেনের মত চিনেও কোর্স ফি কম হওয়ার কারণে ভারতীয় পড়ুয়াদের কাছে চীন অন্যতম পছন্দের দেশ। সেদের ডাক্তারি পড়ার খরচ প্রতি বছর ভারতীয় মুদ্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা। ভারতের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এই কোর্স ফি বার্ষিক ৪ লাখ থেকে 20 কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে অপর একটি কারণ ভারতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অনেকেই এদেশে সুযোগ না পেয়ে চীন অথবা ইউক্রেনকেই ডাক্তারি পড়ার জন্য বেছে নেন।
আরো পড়ুন: ফের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে চিঠি কেন্দ্রের
ঘনশ্যাম যাদব ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ চায়নার মেডিকেল পড়ুয়া। তিনি বলেন, “অনলাইন ক্লাসে যাবতীয় বিষয় শেখাতে তার বেশ কিছু অসুবিধা হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্টাডি মেটিরিয়াল পাওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে তার”। তার কথায়, “বেশ কিছু চিনা অ্যাপ ভারত সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। সেই অ্যাপেই অনেক কলেজে এখনও ক্লাস হচ্ছে। ফলে অনেকের ক্ষেত্রে এটা সমস্যার। কারণ WeChat, SuperStar এবং DingTalk (Ding Ding) এই অ্যাপগুলি অ্যাক্সেস করার জন্য আমাদের একটি VPN এর সঙ্গে কানেক্ট করতে হয়, যার ফলে প্রায়শই অডিও এবং ভিডিও সংক্রান্ত কিছু সমস্যা থেকেই যায়”। পড়ুয়াদের দাবি সঠিক যোগাযোগের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত চিন্তিত তারা। সেই সঙ্গে পড়ুয়ার অভিযোগ করেছেন সেদেশের মেডিকেল কলেজগুলিও পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদাসীন"।
শিহেজি ইউনিভার্সিটির এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রোহিত কুমার যাদব বলেন , অনলাইন ক্লাসে কারণে কোর্সের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভবনা রয়েছে কলেজ গুলির সেক্ষেত্রে আমাদের খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত এক অথবা দু বছর নষ্ট হবে। যার ফলে ক্ষতি হবে আমদের ভবিষ্যৎই”।
Read full story in English