প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাবে অব্যাহত মৃত্যুমিছিল। রবিবারের ভারী বৃষ্টিপাতে হিমাচল প্রদেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৪, আর পাঞ্জাবে প্রাণহানির সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৩। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি বৃষ্টিপাতের জেরেই হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবে এই মৃত্যমিছিল। এবারের বর্ষায় রবিবারই ছিল পাঞ্জাবের আর্দ্রতম দিন। পঞ্চ নদীর দেশে এদিন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১৩০০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, হিমাচল প্রদেশেও স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১০৬৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু, হঠাৎ এই মেঘ ভাঙা বৃষ্টিপাতের কারণ কী? মৌসম ভবনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের এই দুই রাজ্যে ঘনীভূত নিম্মচাপের কারণেই উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যদুটিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে, উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য এখনও আশ্বাসবাণী শোনাতে পারেনি আইএমডি-এর কর্তারা। আইএমডি-র পুনে আঞ্চলিক শাখার এক আধিকারিক বলেন, "এখনও পশ্চিমীবায়ুর প্রভাবে ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে নিম্মচাপ। তাই সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চন্ডীগড় এবং দিল্লিতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন- কথা যদি হয় তবে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই: রাজনাথ সিং
এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, হিমাচল প্রদেশে সিমলায় মৃতের সংখ্যা ৯, সোলানে ৫, কুলু, সিরমার, চাম্বাতে ২ জন করে এবং উনা, স্পিতি ভ্যালিতে ১জন। এমতাবস্থায় কাংরার নূরপুর এবং সোলানের নালাগড়ে উদ্ধারকার্যের জন্য পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল। সেই দলের এক আধিকারিক সূত্রে খবর, বৃষ্টি বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৯০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে, পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার খান্নাতে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে বাড়ির ছাদ ভেঙ্গে মৃত্যু হয়েছে পরিবারের তিন জনের, মৃতদের মধ্যে রয়েছে ৯ বছরের এক বালকও। স্থানীয় সূত্রে খবর, রাতে খাবার খেতে বসেছিল ওই পরিবারটি। আচমকাই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বাজ পড়ে বাড়ির ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান সুরজিত সিং (৩৭), তাঁর স্ত্রী বলবিন্দর কৌর (৩৫) এবং ছেলে গুরপ্রীত সিং (৯)। আশ্চর্যজনকভাবে এই ঘটনায় বেঁচে যায় তাঁদের এগারো বছরের মেয়ে সিমরানজিৎ কৌর।
আরও পড়ুন- উপত্যকায় আজ ফের বিদ্যারম্ভ, মোটের উপর বিচ্ছিন্ন টেলি যোগাযোগ
এই ভারী বৃষ্টিপাতের পরই পাঞ্জাবের আট জেলার ২৫০টি গ্রামে জারি করা হয়েছে মাঝারি বন্যা সর্তকতা। রবিবারের এই ভারী বৃষ্টিপাতের পর রোপার হেড ওয়ার্কার্স বাধ থেকে প্রায় ২.৪০ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে শতদ্রু নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভাকরানাঙ্গাল বাঁধের ক্ষমতা সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। এমনকী পাঞ্জাবের তিনটি বাঁধের জলের স্তরও দ্রুত বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা।
পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হয়ে পড়ায় যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। বেশ কয়েকটি জেলায় স্কুল বন্ধ রাখারও নির্দেশ জারি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বর্ষায় বৃষ্টির ঘাটতি নিয়ে দিন কাটানো পাঞ্জাবের এমন পরিস্থিতি কল্পনাও করতে পারছে না স্থানীয়েরা।
আরও পড়ুন- ভারতের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার ফ্যাসিস্টদের হাতে, আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ ইমরান খানের
অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্মচাপের জেরে পূর্ব উপকূল এবং পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় উপকূলে ভারী বর্ষণের আগাম সতর্কতাও জারি করা হয়েছিল। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে নিম্নচাপের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিকের জেলাগুলিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ায় বজ্র বিদ্যুৎ সহ ভারী থেকে অতি ভারী (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটারের) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। অন্যদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়া বিহার ঝাড়খন্ড, ওড়িশায় ২১ অগাস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কথা জানানো হয়েছে আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে।
Read the full story in English