মোদী সরকারের জমানায় মাত্র দু'বছরে ঋণের জ্বালা আর বেকারত্বে ২৫ হাজার ভারতীয় আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৮ থেকে ২০২০-র মধ্যে এইসব আত্মহত্যাগুলো ঘটেছে। এবার রাজ্যসভায় তা স্বীকার করে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। যা কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতারই প্রমাণ বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, অতিমারীর বছর ২০২০ সালে দেশে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। ওই বছর বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ৩,৫৪৮ জন।
সব মিলিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৯,১৪০ জন বেকারত্বের জ্বালায় আর ১৬,০৯১ জন ঋণের জালে জর্জরিত হতে আত্মহত্যার পথে হেঁটেছেন। বাজেট বিতর্কে বেকারত্ব নিয়ে বলতে গিয়ে রাজ্যসভায় এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তিনি এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে এমনটা জানান। তিনি যে মনগড়া কোনও তথ্য না। বরং, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যই রাজ্যসভায় দিচ্ছেন, লিখিত জবাবে সেকথাও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে বেকারত্বের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২,৭৪১। আর, ২০১৯ সালে সেটাই বেড়ে হয় ২,৮৫১।
আর দেশে ঋণের জ্বালায় আত্মহত্যার ঘটনা ২০১৮ সালে ছিল ৪,৯৭০ জন। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫,৯০৮ জন। আর, ২০২০ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫,২১৩ জন। লিখিত জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এবারের বাজেট অধিবেশনে বারবার বেকারত্বের প্রসঙ্গ উঠেছে। বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদরা বারবার অভিযোগ করেছেন, বাজেট সুরাহা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। করোনা আবহে দেশে কর্মহীনতার সংখ্যা বেড়েছে।
আরও পড়ুন- কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির চালে উত্তরপ্রদেশে বেকায়দায় বিজেপি
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের লাগাতার চাপের মুখে রাই জানিয়েছেন, সরকারের বিষয়টির ওপর নজর আছে। বেকারত্ব এবং ঋণে জর্জরিত হয়ে যাতে নাগরিকরা মানসিক ভাবে ভেঙে না-পড়েন, সরকার সেটা দেখছে। পাশাপাশি, কর্মসংস্থানের সুযোগও যাতে সৃষ্টি হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্র। তিনি জানান, মানসিক স্বাস্থ্য আরও মজবুত করতে সরকার দেশের ৬৯২ জেলায় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালাচ্ছে। একইসঙ্গে দেশজুড়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচিরও প্রসার ঘটাচ্ছে। এই সব কর্মসূচিতে আত্মহত্যা প্রতিরোধ, কর্মক্ষেত্রে চাপ হ্রাস, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্কুল-কলেজে কাউন্সেলিংয়ের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি বেকারত্ব ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন। রাহুলের অভিযোগ ছিল, গত ৫০ বছরে দেশে বেকারত্বের হার শীর্ষে পৌঁছেছে। রাহুল দাবি করেছিলেন, ইউপিএ সরকার ১০ বছরে দেশের ২৭ কোটি নাগরিককে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিল। আর, নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানায় ইতিমধ্যেই দেশের ২৩ কোটি নাগরিক বেকারত্বের মুখে পড়েছে। রাহুলের সেই দাবি যে নেহাত মিথ্যে নয়, তা যেন এবার প্রমাণ করে দিল কেন্দ্রীয় সরকারেরই দেওয়া বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান।
Read story in English