Advertisment

২৬-১১ হামলার চক্রী চেহারা বদলে ফেলেছে: সূত্র

"আমাদের চার্জশিটে যে জারার শাহের নাম ছিল,  সে আসলে আব্দুল ওয়াজিদ নয়, সে হল সাজিদ মীর। মীরকে আড়াল করছিল আইএসআই এবং পাক কর্তৃপক্ষ ওয়াজিদকে গ্রেফতার করেছিল চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য।’’

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

২৬/১১/০৮ তারিখে ছবিটি তুলেছিলেন গণেশ শিরসেকার, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এ যেন সেই হিন্দি সিনেমার গল্প। ওয়ান্টেড জঙ্গি সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তাকে চিনতে পারছে না গোয়েন্দারা, কারণ সে বদলে ফেলেছে তার চেহারা। রুপোলি পর্দার কল্পকাহিনিতে বাস্তবের ছায়াই মেলে, এমনটা দাবি করে থাকেন অনেকেই।

Advertisment

২৬-১১ র মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী সার্জারি করিয়ে বদলে ফেলেছে তার চেহারা, নিরাপত্তাবাহিনীর বরিষ্ঠ সূত্র  ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এমনটাই জানিয়েছে।

মুম্বই হামলার পরিকল্পনা এবং রূপায়ণে বড়সড় ভূমিকা ছিল লশকর এ তৈবা জঙ্গি সাজিদ মীর ওরফে সাজ্জাদ মীরের। গত দু বছর ধরে সে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নিরাপত্তা দফতরের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘সাজিদ মীর নিজের চেহারা বদলে ফেলেছে এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। মীর লশকর এ তৈবার করাচি প্রজেক্টের মাথা ছিল। তার পরিকল্পনা ছিল ২৬-১১র ধাঁচে ড্যানিশ সংবাদপত্র Jyllands-Posten এর ওপর হামলা চালানো। এই সংবাদপত্রটি নবী হজরত মুহম্মদের কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে কাজে লাগিয়ে ভারত এবং ডেনমার্ক দু জায়গাতেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল সাজিদ মীরের। কিন্তু ২৬-১১ হামলার পর লশকর এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে পড়ায় ডেনমার্ক হামলার ছক বানচাল করা হয়।’’

আরও পড়ুন, শুজাত বুখারি হত্যায় অভিযুক্ত জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত

লশকর এ তৈবার আরেক সদস্য আবদুর রহমান  সৈয়দের নামেও ২৬-১১ হামলার ঘটনায় চার্জশিট দিয়েছিল মুম্বই পুলিশ। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন এই অফিসার এখন লাহোরে আইএসআইয়ের ছত্রছায়ায় রয়েছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ২০০৮ -এর ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে মুম্বই হামলায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মুম্বই পুলিশের ওয়ান্টেড জারার শাহ নামের এক ব্যক্তিও। তার বিরুদ্ধে হামলায় অর্থনৈতিক এবং রশদের ব্যাপারে সাহায্য করার অভিযোগ ছিল।

তবে সূত্র বলছে, জারার শাহকে গ্রেফতার করার ঘটনা নেহাৎই চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। মুম্বই পুলিশ আসলে খুঁজছিল মীরকেই।

ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘২৬-১১ হামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি সাতজনকে গ্রেফতার করেছিল। এদের মধ্যে ছিল পাক অধিকৃত পঞ্জাব প্রদেশের শেখপুরার বালিন্দা আবদুল ওয়াজিদ। ওয়াজিদ দাবি করেছিল সে-ই জারার শাহ, যাকে খুঁজছিল ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী। আমাদের চার্জশিটে যে জারার শাহের নাম ছিল,  সে আসলে আব্দুল ওয়াজিদ নয়, সে হল সাজিদ মীর। মীরকে আড়াল করছিল আইএসআই এবং পাক কর্তৃপক্ষ ওয়াজিদকে গ্রেফতার করেছিল চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। সাজিদ মীরই যে জারার শাহ সে সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

২৬-১১ র চার্জশিটে ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী জানিয়েছিল যে শাহ VoIP (Voice over Internet Protocol) পরিষেবার মাধ্যমে নিউ জার্সির একটি কোম্পানি মারফৎ হামলার জন্য চাঁদা জোগাড় করেছিল।

সৈয়দের ব্যাপারে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘সৈয়দ যখন অবসর নেয় তখন সে ছিল বালোচের ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের একজন মেজর। মীরের মতই ২০০৮ এর মুম্বই হামলার পরিকল্পনা এবং রূপায়ণের ব্যাপারে সে দায়ী। এখন সৈয়দ লাহোরে রয়েছে, তাকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

মুম্বই পুলিশ তাদের চার্জশিটে জানিয়েছিল, মীর এবং সৈয়দ পাকিস্তানের একটি কন্ট্রোলরুম থেকে আজমল কসাব সহ ১০ জঙ্গিকে হামলার সময়ে নির্দেশ পাঠিয়েছিল।

26/11 handler had gone under scalpel to change look আজমল কসাব, মুম্বই হামলার একমাত্র জঙ্গি যাকে জীবিতাবস্থায় পাকড়াও করা হয়েছিল

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান গোয়েন্দা দফতর  লশকর এ তৈবার কম্যান্ডার জাকিউর রহমান লকভি ও আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তান। তাদের বিরুদ্ধে মুম্বই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের ফেডারেল এজেন্সি তাদের প্রথম চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু সে চার্জশিটে লশকর এ তৈবার প্রধান সঈদের নাম ছিল না। এদিকে ভারতের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল এই হামলার মূল চক্রী ছিল সঈদ। এ সম্পর্কিত ডসিয়েরও পাক সরকারকে দিয়েছিল ভারত সরকার।

পাকিস্তানে ২৬-১১ বিচার বহুবার স্থগিত করে দেওযা হয়েছে। মামলা চলাকালীন অন্তত ৯ জন বিচারককে বদল করা হয়েছে। ২০১৩ সালে এ মামলার সরকারি আইনজীবী চৌধরি জুলফিকর আলিকে গুলি করে খুন করা হয়। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, বিচারপ্রক্রিয়া আটকে গেছে ভারতের জন্য। এ ব্যাপারে নিরাপত্তাজনিত কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের তরফ থেকে ২৪ জন সাক্ষীকে ভারতে পাঠিয়ে তাদের বয়ান লিপিবদ্ধ করা এবং প্রমাণ জোগাড় করার অনুরোধও ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।

২০১৫ সালে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ২ মাসের মধ্যে মামলার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়। সে বছরের এপ্রিল মাসে লকভিকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৬ সন্দেহভাজন রাওয়ালপিণ্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি থাকে। পাক সরকার এখনও লকভির জামিন চ্যালেঞ্জ করেনি।

Read the Full Story in English

26/11 Terrorist
Advertisment