লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার একগুচ্ছ ‘সন্দেহজনক’ আর্থিক লেনদেনের পর্দা ফাঁস করেছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নজরদারি সংস্থা ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক। এই রিপোর্টের নাম দেওয়া হয়েছে ফিনসেন ফাইলস। 'সন্দেহজনক' এই লেনদেনে নাম উঠে এসেছে ভারতীয় একাধিক ব্যাঙ্ক ও ধনকুবেরের। আর তারপরই নড়েচড়ে বসে এ দেশের প্রশাসন। পুরো বিষয়টিকে ভারতের আর্থিক নজরদারি সংস্থার নজরে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিগত তিন মাস ধরে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনর নথি (সাসপিসিয়াস অ্যাকটিভিটি রিপোর্টস বা এসএআর) সংক্রান্ত রিপোর্টে নজর রেখেছিল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
Advertisment
এসএআর রিপোর্ট বলছে, কীভাবে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদরা কর ফাঁকি দেন এবং বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করেন! ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’–র তদন্তমূলক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভারতীয় বংশদ্ভুত হীরে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রথমসারির স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থা, ঋণ খেলাপি স্টিল সংস্থা সহ আর্থিক অপরাধে যুক্ত বহু ব্যক্তি বা সংস্থার নাম উঠে এসেছে ফিনসেন পেপারে। আইপিএল–এর একটি টিমের স্পনসরের নামও তালিকায় রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, টাকা নেওয়া বা পাঠানোর জন্য ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির অভ্যন্তরীণ শাখাগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাঙ্কের বিদেশি শাখাগুলিকেও কাজে লাগিয়ে আর্থিক লেনদেন চালানো হয়েছে। এসএআর রিপোর্ট বলছে, শুধু ভারত থেকেই ৩,০২১টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। মোট অঙ্কের পরিমাণ ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। পাশাপাশি আরও হাজার হাজার লেনদেনে ভারত–যোগ রয়েছে।
রিপোর্টে উল্লেখ, ১৯৯৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই লেনদেনগুলো করা হয়েছিল।
সরকারি শীর্ষ আধিকারিকরা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছিলেন, ফিনসেন ফাইলে যেসব ব্যাঙ্ক বা ব্যক্তির নাম সন্দেহজনক লেনদেনের তালিকায় উঠছে এসেছে তা খতিয়ে দেখছে এ দেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টালিজেন্স ইউনিট। প্রাথমিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের রিপোর্টে যে ২৮ ব্যাঙ্ক ও ৪০৬ লেনদেনের উল্লেখ রয়েছে তার ভিত্তিতে একটি তথ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
শুরুতেই সন্দেহজনক লেনদেন ফিনসেন রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলোকে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখিত লেনদেন সংক্রান্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। একাধিক ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, রিপোর্টে উল্লেখিত লেনদেন হয়েছিল। তবে, সেগুলো স্থানীয় শাখা বা বিদেশে স্থিত করেসপন্ডেন্স শাখার মাধ্যমে হয়েছে।
এর পরবর্তী ধাপের কাজ বর্তামানে চলছে। সূত্রের খবর, এবার ব্যাঙ্কগুলোর থেকে জানতে চাওয়া হবে যে যেসব লেনদেন সন্দেহজনক তালিকাভুক্ত তা কি ব্যাঙ্কগুলো পৃথকভাবে নজরদারির আওতায় রেখেছে? যদি না রেখে থাকে, তবে কেন?
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ৪০৬ সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোতে এসেছে ৪৮২,১৮ মিলিয়ান মার্কিন ডলার ও এখান থেকে বিদেশে গিয়েছে ৪০৬.২৭ মিলিয়ান মার্কিন ডলার।
দ্য ইন়্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুসারে ভারতের ৪৪ ব্যাঙ্ক থেকে সন্দেহজনক একাধিক লেনদেন হয়েছে, যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তদন্তে ধরা পড়ছে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ফিনসেন ফাইলস্ কোনও অপরাধের প্রমাণ নয়। শুধুই লাল সঙ্কেত মাত্র। অর্থাৎ নজরদারি সংস্থাকে শুধু এটুকুই জানান দেওয়া যে, তাদের অগোচরে চলছে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ! আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা বুঝতে ফিনসেন নথি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় কোনও অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে এই নথি ব্যবহার করা যায় না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।