ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (NRC)-র কাছে জমা পড়া ৩.২৯ কোটি আবেদনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লক্ষ আসামবাসির নাম খারিজ হয়ে গেল কমিশনের দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত ড্রাফটে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত প্রথম ড্রাফটে ১.৯০ কোটি মানুষের নাম ছিল।
ওদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আজ যেটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি একটি ড্রাফট বা খসড়া মাত্র, চূড়ান্ত NRC নয়। চূড়ান্ত তালিকা সংশ্লিষ্ট সবার দাবি এবং আপত্তি মেনেই প্রকাশিত হবে। কাজেই কেউ যেন অনাবশ্যক আতঙ্ক এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করেন।
আজ গুয়াহাটিতে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রেজিস্ট্রার জেনারেল শৈলেশ বলেন, যাঁদের নাম চূড়ান্ত ড্রাফটে নেই তাঁদের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে। "আজ আসাম তথা ভারতের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক দিন। এই সুবৃহৎ কর্মকাণ্ড, যার আকারের নিরিখে অন্য কোনো প্রকল্পের সঙ্গে তুলনাই হয় না, একটি আদ্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন করা হয়েছে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ, পক্ষপাতহীন, এবং অত্যন্ত সাবধানে পরিচালিত।"
আরও পড়ুন, এন আর সি: নো-ম্যানস-ল্যান্ডের দিকে পা বাড়িয়ে
শৈলেশ বলেন, ২,৮৯,৮৩,৬৭৭-টি নাম নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার যোগ্য মনে করেছে কমিশন। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য অনুসরণ করেই আবার বলেন যে তালিকায় যেসব বাসিন্দার নাম ওঠে নি, তাঁদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালেও পাঠানো হবে না, বা ডিটেনশন সেন্টারেও নিয়ে যাওয়া হবে না যতক্ষণ না তাঁদের আপিলের সমস্ত সুযোগ শেষ হয়ে যায়। অগাস্ট মাসের ৩০ তারিখ থেকে আপিল এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিলের সময়সীমা শুরু হবে, যা চলবে সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত। শৈলেশের বক্তব্য, "কোনো প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের ভয়ের বা আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।"
আজ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে কি তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁরা ভোট দিতে পারবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শৈলেশ বলেন, "নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করার দায়িত্ব আমাদের নয়। NRC-র হয়ে এটুকু বলতে পারি, কোনরকম ভয়ের বা বিভ্রান্তির কারণ নেই।"
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (উত্তর পূর্বাঞ্চল) সত্যেন্দ্র গর্গ বলেন, যাঁদের নাম প্রথম ড্রাফটে ছিল অথচ চূড়ান্ত ড্রাফটে নেই, তাঁদের প্রত্যেককে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।"
পাশাপাশি তিনি এই গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনরকম বিশৃঙ্খলা না ছড়ানোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, "আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এবং এই মর্মে রাজ্য সরকারকে যথাযোগ্য আশ্বাস দিয়েছি। কেউ আইন ভঙ্গ করলে আমরা কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।"
পরিশেষে, ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর আগে থেকে যেসব ভারতীয় নাগরিক আসামে বসবাস করছেন, তাঁদের সবার নাম কমিশনের তালিকাভুক্ত হবে।