সাংবাদিক প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তথা সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পদাক এম.জে. আকবরের করা ফৌজদারি মানহানির মামলা গ্রহণ করল দিল্লির একটি আদালত। ভারতীয় দন্ডবিধির ৫০০ ধারায় এই মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, ভারতীয় দন্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী, অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে দু’বছরের কারাদন্ড অথবা জরিমানা কিংবা পরিস্থির বিচার করে দুটি একই সঙ্গে হতে পারে। ৩১ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এম.জে. আকবর ও অন্যান্য সাক্ষীদের বয়ান শুনবে আদালত।
এদিন আকবরের হয়ে এজলাসে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী গীতা লুথরা। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সমর বিশালের এজলাসে তিনি বলেন, প্রিমা রামানির এই টুইট তাঁর মক্কেলের সুনামের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। এ জন্যই এম.জে. আকবরকে বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে (১৭ অক্টোবর বিকালে পদত্যাগ করেছেন) বলে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এদিন আদালতে গীতা লুথরা আরও বলেন, ৪০ বছর ধরে আকবর তিল তিল করে যে সুনাম অর্জন করেছেন, তা মারাত্ম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রামানির এমন অভিযোগে। তাই ফৌজদারি মানহানির যে আবেদন আকবর করেছেন, তা গ্রহণ করা হোক। উল্লেখ্য, ১৫ অক্টোবর, সোমবার দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ আদালতে প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধরায় মামলা করেছিলেন প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- #MeToo মামলা করে চুপ করাতে চাইছেন আকবর, লড়াই জারি থাকবে: প্রিয়া রামানি
প্রসঙ্গত, ইংরেজি সংবাদ পত্রের সম্পাদক থেকে রাজনীতিক এবং মন্ত্রী হয়ে ওঠা আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগে সরব হয়েছেন 'এশিয়ান এজ'-এ তাঁর সঙ্গে কাজ করা কমপক্ষে ১৫ মহিলা। এঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রিয়া রমানিই আকবরের নাম প্রকাশ্যে এনে অভিযোগ করেন। ৮ অক্টোবর করা এক টুইটে রমানি লেখেন যে, গত বছর এক নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, এক সম্পাদক চাকরির ইন্টারভিউ-এর জন্য তাঁকে হোটেলের ঘরে ডেকে বিছানায় বসতে বলেন। আর সেই সম্পাদক হলেন এম.জে. আকবর। রমানির এই অভিযোগের পরই দেশ জুড়ে এবং বিশেষত রাজনৈতিক মহলে হইচই পড়ে যায়। কংগ্রেস সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রশ্ন করে, তিনি রমানির বিরুদ্ধে আকবরের এই আইনি পদক্ষেপকে সমর্থন করেন কি না? তবে আকবর এইসব অভিযোগকে 'বানানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে খারিজ করে দিয়েছেন। এরপরই অবশ্য বুধবার মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি নেন আকবর। তিনি জানিয়েছেন, "ব্যক্তিগত ক্ষমতাতেই এ লড়াই লড়ব"। উল্লেখ্য, আকবরই মোদী সরকারের প্রথম মন্ত্রী যিনি যৌন হেনস্থার অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করলেন।
আরও পড়ুন- #Me Too: আকবরের মামলায় তীব্রতর মিটু-র অভিঘাত
আকবরের আইনি পথে হাঁটার খবর পেয়ে প্রিয়া জানিয়েছিলেন, এসবই তাঁকে ভয় পাওয়াতে করা হচ্ছে। কিন্তু, তিনি এ লড়াই জারি রাখবেন। এদিকে অন্যন্য অভিযোগকারিণীরাও আদালতকে তাঁদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা শোনার জন্য আবেদন করেছেন।
এদিকে, ভারতের 'এডিটর'স গিল্ড' এম.জে. আকবরকে মামলা প্রত্যাহর করতে বলেছে। তাদের সাফ কথা, হয় আকবর প্রিয়া রমানির বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিক, নাহলে তারা অভিযোগকারিণীদের আইনি সাহায্য দেব। পাশাপাশি, যেসব মহিলা সাংবাদিক আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানিয়েছে গিল্ড। গিল্ড মনে করছে, "নিউজ রুমে লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে তাঁদের (অভিযোগকারিণীদের) ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য"। উল্লেখ্য, একদা এই এডিটর'স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া-র প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন স্বয়ং এম.জে. আকবরই। তবে, গিল্ডের সাম্প্রতিক এই বিবৃতির প্রেক্ষিতে আকবরের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও সামনে আসেনি।
Read this story in English