Advertisment

ফেরত পাঠানোর ঘটনা 'দুর্ভাগ্যজনক', আফগান মহিলা সাংসদের কাছে ক্ষমা চাইল ভারত

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরের জের, আফগান সাংসদের কাছে ক্ষমা চাইলেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ আফগান মহিলা সাংসদের

ভারতের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ করার একদিন পরেই ভুল মানল কেন্দ্র সরকার। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে সরকার। আফগান মহিলা সাংসদ রঙ্গিনা কারগারকে দিল্লি থেকে ফেরত পাঠানো অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসাবে স্বীকার করেছে কেন্দ্র। কারগারের কাছে যা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে ভারত সরকার। তাঁকে দ্রুত আপৎকালীন ভিসার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।

Advertisment

প্রসঙ্গত জানা গিয়েছে, গতকাল আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রসঙ্গটি ওঠে। কেন্দ্র নিজের ভুল বুঝতে পেরে আফগান সাংসদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্যসভায় কংগ্রেস দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, আনন্দ শর্মা এবং অধীররঞ্জন চৌধুরিরা বিষয়টি সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থাপন করেন।

নেতারা কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে জিজ্ঞেস করেন, একজন প্রতিষ্ঠিত আফগান রাজনীতিবিদের সঙ্গে কেন এমনটা করল বিদেশ মন্ত্রক, যেখানে উনি বহুবার ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারতে এসেছেন! সূত্রের খবর, সরকারের তরফে জানানো হয়, অভিবাসন দফতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল কারণ শোনা গিয়েছিল, তালিবান জঙ্গিরা কিছু ভারতীয় ভিসা-সহ পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। যাতে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট নিয়ে কেউ ভারতে ছদ্মবেশে না ঢুকে পড়ে তাই এই ব্যবস্থা করা হয়।

খাড়গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি সরকারের কাছে উপস্থাপন করি। বিদেশ মন্ত্রী বলেছেন, এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না। সরকার ভুল স্বীকার করেছে। কারগার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানিয়েছেন, বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান বিষয়ক দফতরের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আমাকে ফোন করেছিলেন। পুরো ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আর আমাকে আপৎকালীন ভিসার জন্য আবেদন করতে বলেছেন। আমি জানতে চেয়েছে, সরকারি পাসপোর্ট কি বৈধ নয়, তিনি তার কোনও উত্তর দেননি। আমি তাঁকে বলেছি, আমার মেয়ের জন্য ১৯ অগস্ট ই-ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তার কোনও খবর আসেনি।

আরও পড়ুন ‘এমন আচরণ আশা করিনি’, ভারতের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ আফগান মহিলা সাংসদের

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রঙ্গিনা কারগার, ফারইয়াব প্রদেশের ওলেসি জিরগার সাংসদ বলেছেন, গত ২০ অগস্ট ইস্তানবুল থেকে দুবাইয়ের একটি বিমানে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন তিনি। তাঁর কাছ কূটনৈতিক পাসপোর্টও রয়েছে। যার ফলে ভিসা ছাড়াই তিনি ভারতে আসতে পারেন। একদিন আগেই বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ভারতের একমাত্র লক্ষ্য হল আফগানিস্তান এবং সেই দেশের মানুষের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক অটুট রাখা। তার পরেও এই ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ!

১১ বছর ধরে কারগার সাংসদ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেছেন, এর আগে ভারতে তিনি বহুবার এসেছেন। একই পাসপোর্ট দেখিয়েই তিনি ঢোকেন দেশে। এর আগে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার অভিবাসন আধিকারিক তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে ছাড়া হবে বলে জানানো হয়। দুঘণ্টা পর একই বিমানে তাঁকে ইস্তানবুলে ফেরত পাঠানো হয়।

৩৬ বছরের কারগারের অভিযোগ, “আমাকে ফেরত পাঠানো হয়। অপরাধীর মতো আমার সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে। দুবাইয়ে আমার পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি আমাকে। ইস্তানবুলে নামার পর সেটা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, আমার সঙ্গে ওরা যেটা করল সেটা ঠিক নয়। কাবুলের পরিস্থিতি খারাপ, আমি ভেবেছিলাম ভারত সরকার একজন আফগান মহিলাকে সাহায্য করবে। কেন আমাকে ফেরত পাঠানো হল, তাঁর কোনও কারণ জানানো হয়নি।”

আরও পড়ুন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার সময় এসেছে’, বিস্ফোরণের কড়া নিন্দা করে বার্তা ভারতের

কয়েকদিন আগেই প্রথম আফগান শিখ মহিলা সাংসদ আনারকলি কৌর হোনারইয়ার এবং আরেক শিখ সাংসদ নরিন্দর সিং খালসা ভারতে এসেছেন। এরা দুজনেই ভারতীয় উদ্ধারকারী বিমানে আসেন। কারগারের দাবি, “ওই বিমানগুলি ভারতীয় এবং আফগান ভারতীয়দের জন্য ছিল। আফগান শরণার্থীদের জন্য নয়।” তিনি বলেছেন, ২০ অগস্ট দক্ষিণ দিল্লির হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল তাঁর। তারপর ২২ অগস্ট ইস্তানবুল ফেরার বিমানের টিকিট ছিল।

ভারতে তিনি একাই আসেন। স্বামী ফাহিম ও চার সন্তান ইস্তানবুলেই রয়েছে। জুলাই মাস থেকে সেখানেই ছিলেন তাঁরা। কারগার দুঃখ করে বলেছেন, “গান্ধিজির ভারতের কাছে এটা আশা করিনি। আমরা বরাবর ভারতের বন্ধু। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক উন্নত। ঐতিহাসিকও বটে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে একজন মহিলা তথা সাংসদের সঙ্গে এমন ব্যবহার আশা করা যায় না। এয়াপোর্টে ওরা আমাকে বলেন, দুঃখিত, আপনার জন্য কিছু করতে পারব না।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন  টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

S jaishankar MEA Afghan MP
Advertisment