মাত্র একটা ফেসবুক পোস্ট! আর তার জন্যই সৌদির জেলে ঠাঁই হয়েছিল ভারতীয় যুবকের। কর্ণাটকের উডুপি জেলার বাসিন্দা হরিশ বাঙ্গেরা জীবনটাই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু উড়ুপি পুলিশ তদন্ত করে বের করে, যুবকের নামে ফেক প্রোফাইল থেকে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। বুধবার জেলমুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন হরিশ। ভারতে ফিরে যেন ধরে প্রাণ এল তাঁর।
পেশায় এসি মেকানিক হরিশ অর্থ উপার্জনের আশায় গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু তাঁর জীবনে যে বিভীষিকা আসবে স্বপ্নেও ভাবেননি হরিশ। গত ২০১৯ সালে ২২ ডিসেম্বর সৌদির দাম্মাম শহরে কাজ করার সময় গ্রেফতার হন ৩৪ বছরের এই যুবক। তার তিনদিন আগে তিনি একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন, যাতে তিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করার জন্য এবং এনআরসি প্রণয়নের জন্য ভারত সরকারের প্রশংসা করেন। যার জেরে মালিকের রোষে পড়েন তিনি।
হরিশ পরে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আমি পরে একটি ভিডিও পোস্ট করি ফেসবুক পোস্ট করি শেয়ার করার জন্য। তাতে আমি ক্ষমা চেয়ে নিই। সেখানে এটাও বলি, যে পোস্ট আমি শেয়ার করেছিলাম তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। পরে আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দিই। কিন্তু আমার নামে আরও একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সৌদির ক্রাউন প্রিস মহম্মদ বিন সলমন এবং একটি সম্প্রদায়ের নামে আপত্তিজনক পোস্ট করা হয়। যার জেরে আমাকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন শুঁকেই ধরিয়ে দিত বিস্ফোরক, কাবুল থেকে ভারতে ফিরল মায়া-ববি-রুবি
এই ঘটনার পর উড়ুপিতে হরিশের স্ত্রী সুমনা জেলা পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। জানান, অপরিচিত কেউ হরিশের নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে এই পোস্টটি করে। গত বছর অক্টোবরে স্থানীয় পুলিশ আবদুল হায়েজ ও আবদুল থুয়েজ নামে দুই ভাইকে গ্রেফতার করে মুদবিদ্রি গ্রাম থেকে। তদন্তে জানা যায়, এই দুজন হরিশের নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তাঁর উপর প্রতিহিংসায় এই অপরাধ করে।
ঘটনায় দশদিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার এন বিষ্ণুবর্ধন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, চার্জশিট আরবি ভাষায় ভাষান্তর করে সৌদি কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয় বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে। গত মঙ্গলবার সৌদি জেল থেকে মুক্তি পান হরিশ। গতকাল বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হরিশ। ১৯ মাস পর নিজের চার বছরের মেয়ের মুখ দেখে চোখের জল বাঁধ মানেনি। বলেন, অন্যের অপরাধে আমাকে জঙ্গি বানানো হয়েছিল। আমি আর আমার পরিবার বিভীষিকার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। ৬০৪ দিন জেলে থাকার পর আর সৌদিতে কাজে যাওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন হরিশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন