আইন বহির্ভূতভাবে ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অসমের পর এবার ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া উপকূলীয়বর্তী এলাকাতেও নাগরিক পঞ্জী তৈরি করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে পেশ করল ওড়িশা সরকারের শীর্ষস্থানীয় আমলাদের দ্বারা তৈরি আদালত নিযুক্ত একটি কমিটি। উল্লেখ্য, আদালতের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওড়িশা রাজ্যের জলাভূমি এবং সুরক্ষার তদারকি কমিটির কর্মকর্তারা উপকূলীয় জেলা কেন্দ্রপাড়াতে নাগরিক পঞ্জী প্রক্রিয়া শুরু করার সুপারিশ দেয় বলে জানা যাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হাতে আসা কিছু নথি থেকে জানা যায়, ওড়িশায় নাগরিকপঞ্জি শুরু করার পরামর্শ এসেছে আদালত বন্ধু মোহিত আগরওয়ালের কাছ থেকে। বর্তমানে মোহিত আগরওয়াল ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং চিলকা জলাভূমি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ওড়িশা হাইকোর্টকে সহায়তা করছেন। এদিকে, ৩ অগাস্ট স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা দেওয়া কমিটির চিঠিতে আদালত বন্ধু মোহিত আগরওয়ালের মতামতকেই তুলে ধরা হয়েছে, এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। এমনকী জানা যাচ্ছে, যে আধিকারিক এই চিঠিটি স্বরাষ্ট্র দফতরে পেশ করেছে সেখানে নাগরিক পঞ্জী নিয়ে কোনও পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন তিনি, এমনটাই খবর।
আরও পড়ুন- প্রয়াত সুষমা স্বরাজ
ঠিক কী লেখা হয়েছে চিঠিটিতে?
পরিবেশ বিষয়ক এবং বনবিভাগীয় প্রধান মুরুগেসান চিঠিটিতে লিখেছেন, "২৪ জুন বনবিভাগ এবং পরিবেশ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বে কমিটির চতুর্থ সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা জানানোর জন্য আমায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ভারত সরকারকে কেন্দ্রপাড়া জেলাতে নাগরিক পঞ্জী শুরু করার অনুমতি দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।" ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফোনে মুরুগেসান জানান যে কমিটি কেবলমাত্র এনআরসির অনুরোধটি গ্রহণ করে তা স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছে"। তিনি আরও বলেন, "নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। আদালত বন্ধুর তরফে আমাদের যে অনুরোধটি করা হয়েছিল তা আমরা স্বরাষ্ট্র দফতরে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র।"
আরও পড়ুন- কাশ্মীরিদের প্রতি দায়বদ্ধ: যতদূর প্রয়োজন ততদূর যাবে পাক সেনা
অন্যদিকে, বনবিভাগ এবং পরিবেশ বিষয়ক দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এস সি মহাপাত্র বলেন, "আমাদের এই কমিটি শুধুমাত্র জলাভূমি সংরক্ষণ নিয়েই উদ্বিগ্ন। শুধু যারা জবরদখলকারী আমরা তাঁদেরকেই উচ্ছেদ করছি। এর সঙ্গে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের কোনও সম্পর্ক নেই।" প্রসঙ্গত, আজ থেকে দু'বছর আগে এম কে বালাকৃষ্ণণ বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট দেশের পনেরোটি রাজ্যের শীর্ষ আদালতকে নির্দেশিকা দিয়ে জানায় যে, জলাভূমি এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য সুওমোটো জনস্বার্থ মামলা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর ওড়িশা হাইকোর্ট ভিতরকানিকা ন্যাশনাল পার্ক এবং চিলিকা হ্রদের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে আদালত বন্ধু হিসেবে মোহিত আগরওয়ালকে নিযুক্ত করে। উল্লেখ্য, আদালতের এই নির্দেশিকার পরেই ওড়িশাতে হাজার হাজার আইন বহির্ভূত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা রয়েছে, এই বিষয়টা সামনে চলে আসে। এখন আসামের মতো ওড়িশাতেও নাগরিক পঞ্জি কতোটা গ্রাহ্যকর হবে সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
Read the full story in English