ঘটা করে কেন্দ্র ভারতীয় প্রতিরক্ষায় নজাওয়ান নিয়োগে অগ্নিপথ প্রকল্পের সূচনা করেছে। যাকে কেন্দ্র করে উত্তাল বিহার। রাজ্যের আধ ডজনেরও বেশি জেলায় অগ্নিপথ বিরোধী উত্তাপ ছড়িয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা রেল, সড়ক অবরোধ করেছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। পুরনো সেনা নিয়োগ ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি করছে বিক্ষোভকারীরা।
ভাগলপুরের এক চাকরি প্রার্থীর প্রশ্ন, 'চার বছরের জন্য নিয়োগ ব্যবস্থা মানব না। এতে চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। বলা হচ্ছে এই প্রকল্পে তরুণরা চাকরি পাবে। কিন্তু অবসরও তো মাত্রা চার বছরেই হবে। তারপর আমরা কী করব?'
বিক্ষোভ সকালের দিকে ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। আরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি রেল ইঞ্জিনে আগুন ধরাতে এলে বিক্ষোভকারীদের নিশানা করে কাঁদানে গ্য়াসের সেল ছোড়ে ভোজপুরে পুলিশ। বিক্ষোভের জেরে আধ ডজন ট্রেন দেরিতে চলছে। স্টেশনের বহু চেয়ার উপড়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। নানা জায়গায় অবরোধ আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছে চাকরিপ্রার্থীরা।
আরও পড়ুন- Explained: সেনা নিয়োগে ‘অগ্নিপথ’, কী এই প্রকল্প, কীভাবে করবে নিয়োগ?
ছাপড়ায়, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশ ধাওয়া করার আগেই স্থানীয় বাজারের একটি কাপড়ের দোকানের জানালার কাঁচ ভেঙে তারা। বিক্রেতারা জানান, শিক্ষার্থীরা যখন বাজারের সড়কে নেমে তাণ্ডব করছিল তখন রাস্তায় কোনও পুলিশ ছিল না।
মুঙ্গেরে, বিক্ষোভকারীরা মুঙ্গের হয়ে পাটনা এবং হাওড়াকে সংযুক্তকারী ৮০ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সহরসায়, ছাত্ররা সহরসা-মানসী রুটে রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
বিহার পুলিশ সদর দফতরের একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকের কথায়, বিক্ষোভকারীরা রেল ও সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে না। তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে স্টেশন এবং অন্যান্য স্থানে প্রায় ২৫ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- শুরুতেই চক্ষুশূল, অগ্নিপথের সমালোচনায় মুখর প্রাক্তন সেনা জওয়ানরা
চলতি সপ্তাহে মঙ্গলবারই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। যা কার্যত সেনার মধ্যেই আলাদা বাহিনীর জন্ম দিতে চলেছে। এই প্রকল্পে নিযুক্ত জওয়ানদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’। দু’বছর ধরে দেশে সেনা নিয়োগ বন্ধ। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দেড় লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। যা নিয়ে বিরোধীরা বারবার কটাক্ষ করছে সরকারকে। তার মধ্যেই ঘোষিত হল এই নতুন প্রকল্প।
নতুন অগ্নিপথ প্রকল্পে বছরে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ হবে। বেশিরভাগেরই কর্মজীবনের মেয়াদ থাকবে মাত্র চার বছর। প্রতিবছর যা নিয়োগ হবে, তার মাত্র ২৫ শতাংশ আরও ১৫ বছর কাজের সুযোগ পাবেন। বর্তমানে দেশের সেনাবাহিনীতে জওয়ানের সংখ্যা ১৩ লক্ষেরও বেশি। নতুন প্রকল্পে সেখানে বছরে নিয়োগ হবে মাত্র ১২ হাজার জওয়ান। বছরে দু’বার নিয়োগ হলে, সংখ্যাটা দাঁড়াবে ২৪ হাজার। তাও মাত্র ১৫ বছরের জন্য। এতে পেনশন নিয়ে সরকারের উদ্বেগ কমবে। পেনশন নিয়ে সেনাকর্মীদের দাবি দীর্ঘদিনের। নতুন প্রকল্পের সাহায্যে সেই দাবিকেও ঘুরিয়ে পাশ কাটানো যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, এতে স্থায়ী সেনার সংখ্যা কমবে বলে উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে।