বছর দুয়েকের মধ্যে ভারতের কাছে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে চলেছে। ৪২ টি স্কোয়াড্রন রাখার অনুমতি থাকলেও ২০২১-এর মধ্যে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ২৬-এর কাছাকাছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাফাল ও (লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট বা এলসিএ) তেজসের মতন আসন্ন কিছু নতুন বিমান বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত হলেও স্কোয়াড্রনের সংখ্যা বাড়বে না।
ওই একই সময়ে পাকিস্তানের কাছে থাকবে ২৫ টি স্কোয়াড্রন, এবং চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বায়ুসেনার কাছে ভারতের মোকাবিলা করার জন্য আনুমানিক ৪২ টি স্কোয়াড্রন থাকার সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, একটি স্কোয়াড্রনে সাধারণত ১৮ টি যুদ্ধবিমান থাকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে সরকারি নথি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসা গিয়েছে, যে বর্তমানে ভারতের কাছে ৩০ টি স্কোয়াড্রন থাকলেও ২০২১-২২ এর মধ্যে সংখ্যাটা কমে ২৬-এ নেমে আসবে। ততদিনে সোভিয়েত জমানার ৬টি এমআইজি যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন বাতিল হয়ে যাবে। তার পরিবর্তে ব্যবহারযোগ্য মাত্র দুটি স্কোয়াড্রন প্রতিস্থাপিত করা হবে। একটি ফরাসি রাফাল যুদ্ধ বিমান, অন্যটি হ্যাল-এর তৈরি এলসিএ তেজস।
আপাতত অনুমান করা হচ্ছে, স্কোয়াড্রনের সংখ্যা এখনকার মতো ৩০-এ আসতে ২০২৭ পর্যন্ত সময় লাগবে। ততদিনে এলসিএ তেজসের চারটির বেশি স্কোয়াড্রন প্রস্তুত হয়ে যাবে। তবে তেজসের এই ৮৩ টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনা এবং হ্যালের মধ্যে এখনও চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া বাকি।
নথিপত্র অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে যা বোঝা যাচ্ছে, ২০৩৭ সালের মধ্যে স্কোয়াড্রন সংখ্যা দাঁড়াবে ২১, এবং ২০৪২ এর মধ্যে সেই সংখ্যা কমে হবে ১৯। ঘাটতি মেটাতে এলসিএ তেজসের মার্ক ১ ও মার্ক ২ এর ১৮ টি স্কোয়াড্রন বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, সঙ্গে বিদেশী যুদ্ধবিমানের ছ'টি স্কোয়াড্রন, যার প্রাথমিক তত্ত্ব-তালাশ শুরু হয় গত বছর।
আরও পড়ুন, রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের হাতে অর্থমন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে ভারতীয় বায়ুসেনার মুখপাত্র গ্রুপ ক্যাপ্টেন অনুপম ব্যানার্জিকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে ইমেইল এবং টেক্সট মেসেজ করা হলেও জবাব মেলেনি।
সর্বাধিক ৪২টি স্কোয়াড্রন ভারতের কাছে শেষবারের মতো ছিল ২০০২ সালে। কিন্তু ১৯৯৯ এর কার্গিল যুদ্ধের পরপরই বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়, যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি বজায় রাখতে সাতটি মিডিয়াম মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমএমআরসিএ) বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
২০০৭-এ ১২৬ টি এমএমআরসিএ-র জন্য টেন্ডার আহ্বান করে তৎকালীন ইউপিএ সরকার। এয়ারফোর্সের ট্রায়ালের পরে বাছা হয় রাফালেকে, এবং তিন বছর ধরে আলাপ আলোচনার পর ২০১৫ সালের জুন মাসে তা বাতিল হয়ে যায়।
ওদিকে ২০১৫ সালের এপ্রিলে এনডিএ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার। যুদ্ধবিমানের ঘাটতি মেটাতে সেই সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর সুইডিশ গ্রিপেন অথবা মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করলেও চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি, বরং ডিসেম্বর ২০১৭ তে হ্যাল-কে বলা হয় ৮৩ টি তেজস সরবরাহ করতে। কিন্তু এই বিমানগুলি সময়মত সরবরাহ না হওয়ায় স্কোয়াড্রন সংখ্যা আরও কমেছে।
এই মুহূর্তে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে এলসিএ তেজসের একটিই স্কোয়াড্রন রয়েছে, যা প্রায় আট বছর দেরিতে এসেছে। আরেকটি স্কোয়াড্রন (চূড়ান্ত অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত) আসতে চলেছে ২০২১ এর মধ্যে। এই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তে।
তেজস মার্ক ১এ মডেলের ৮৩ টি বিমান সংক্রান্ত চুক্তি আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চুক্তি সই হওয়ার তিন বছর পর প্রথম মার্ক ১এ বিমানটি ব্যবহারযোগ্য হবে। হ্যালের আশা, বছরে ১৮ টি তেজস বিমান তৈরি করতে পারবে তারা।