সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড হলেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের তরফ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "শুভ্রাংশুকে দল থেকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হল। তাঁর ব্যবহার দলবিরোধী। অনেক দিন ধরেই এই ব্যবহার চলছিল। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল দল"। প্রসঙ্গত আজই সাংবাদিক বৈঠক করে পরোক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে আক্রমণ করেছিলেন বীজপুরের বিধায়ক। তৃণমূলের এই '৬ বছরের জন্য সাস্পেন্ড"এর সিদ্ধান্তকে কার্যত 'বহিষ্কার'এর সমান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- বাবার কাছে হেরে গিয়েছি, মন্তব্য মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর
বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই বাংলা-সহ গোটা দেশে বিপুল জয় পায় বিজেপি। এমনকী বাংলাতেও ১৮টি আসন দখল করে গেরুয়া শিবর। এরপরই আজ সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন বাংলায় বিজেপির এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর মুকুল রায়ের পুত্র। শুভ্রাংশু এদিন বলেন, ‘‘গর্ব বোধ করি বাবাকে নিয়ে। অনেকে বলেছিলেন, লক্ষ লক্ষ মুকুল রায় তৈরি করবেন। যে (মুকুল) দল তৈরি করেছিল, সেই দলকে তছনছ করে দিল। কাঁচরাপাড়ার সেই কাঁচা ছেলেই তাঁর কাঁচা মাথা দিয়ে চাণক্যের বুদ্ধিতে সারা বাংলা চষে বেড়ালেন’’। কার্যত এই বক্তব্যের পরেই নড়েচড়ে বসে তৃণমূল। সাংবাদিক বৈঠকে এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তিনি এই দলে থেকে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের প্রশংসা করছেন নিজের দলকে হেয় করে। সুদীর্ঘ সময় ধরে দল তা লক্ষ্য করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধায়ের অনুমোদনের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে"।
আরও পড়ুন- যে তৃণমূল তৈরি করেছিল, সেই দলকে তছনছ করে দিল: শুভ্রাংশু
প্রসঙ্গত, মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানোর পর থেকেই রীতিমতো অস্বস্তিতে ছিলেন শুভ্রাংশু।তৃণমূল দলের প্রতি তাঁর 'দায়বদ্ধতা'র কথা বারবার জনসমক্ষেও বলেছেন তিনি। কিন্তু, এরপরও দল তাঁকে 'সন্দেহের চোখে' দেখে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বীজপুরের সাংসদ। নির্বাচন চলাকালীন তাঁর বিজেপিতে যোগ দান প্রসঙ্গে একাধিকবার জল্পনাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এর আগে দলের অন্দরে তাঁর অস্বস্তির কথা একাধিকবার বললেও, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে কখনও খামতি ছিল না। কিন্তু, এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শুভ্রাংশু বলেন, মুকুল সম্পর্কে মমতার 'গদ্দার' শব্দ প্রয়োগ মানুষ ভালভাবে নেয়নি। অর্থাৎ, নেত্রীর প্রতিও এদিন সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছে শুভ্রাংশুর গলায়। আর এরপরই তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সামনে আসে। তবে, রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, শুভ্রাংশুর বিজেপিতে যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বরং, এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে স্বয়ং শুভ্রাংশুই তৃণমূলকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে। আর তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁর বিধায়ক পদও আপাতত থাকছে, কারণ তিনি নিজে দলত্যাগ করেননি।