হিন্দিকে ভারতের “সর্বজনীন” ভাষা করে দেওয়ার কথা বলে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক বাড়িয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রতিবাদে সরব বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির মন্তব্যে আরএসএসের ইচ্ছাপূরণের ইঙ্গিত পাচ্ছে বিরোধী শিবির। গর্জে উঠছে দাক্ষিণাত্যে বিজেপির জোটসঙ্গী এআইএডিএমকে, পিএমকেও। সংবেদনশীল বিষয় হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দিয়েছে কংগ্রেস।
হিন্দি দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শনিবার আবেদন জানিয়েছেন, যাতে হিন্দিকে ভারতের “সর্বজনীন” ভাষা করে দেওয়া হয়। একটি টুইটার পোস্টের মাধ্যমে শাহ বলেন, দেশে এমন একটি সর্বজনীন ভাষার প্রয়োজন যা “আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের পরিচিতির ছাপ” রেখে যায়। তাঁর আরও বক্তব্য, হিন্দির ক্ষমতা আছে “দেশকে এক সূত্রে ঐক্যবদ্ধ” করার।
আরও পড়ুন: একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে দুধ-মুরগি, ভোপালে প্রতিবাদ বিজেপির
“ভারত নানা ভাষার দেশ, এবং প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে এমন একটি সর্বজনীন ভাষার প্রয়োজন যা ভারতের পরিচিতি হয়ে উঠবে। আজ যদি এমন একটিও ভাষা থেকে থাকে, যা এক সূত্রে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, তা হলো হিন্দি, যা কিনা ভারতে সবচেয়ে বেশি বলা এবং বোঝা হয়,” তাঁর টুইটে লেখেন শাহ। তাঁর বক্তব্যের পক্ষে শাহ তুলে ধরেন মহাত্মা গান্ধী, বাল গঙ্গাধর তিলক, বিনোবা ভাবের মত মানুষদের হিন্দিতে দক্ষতার বিষয়টি। হাল আমলের উগাহরণ হিসাবে বলা হয়, প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী, সুষমা স্বরাজ এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথাও।
হিন্দিকে ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস থেকে এআইএডিএমকে। কংগ্রেসে, সংবেদনশীল বিষয়ে ইন্ধন দিতে পরামর্শ দিয়েছে। দলের প্রথম সারির নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদের কথায়, 'স্বাধীনতার পর দেশের সংবিধান নির্মাতারা যে পথ বাতলেছেন তার বদল উচিত হবে না। বিতর্কিত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে তা অশান্তির কারণ হতে পারে।' মনে করেন হাত শিবিরের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা।
দ্বিতীয় মোদী সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর মানুষটির মন্তব্যের সমালোচনা করেছে বাম দলগুলিও। সিপিআইয়ের তরফে বলা হয়েছে, অমিত শাহের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। তাঁর কথার ছত্রে ছত্রে আরএসএসের আদর্শ প্রকাশ পেয়েছে। মেরুকরণের রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে হিন্দিকে ব্যবহার না করার
জন্য বিজেপিকে অনুরোধ করে এই কমিউনিস্ট দলটি। তাদের মতে, দেশে ২২টি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সবগুলিই ভারতের ভাষা। পাশাপাশি, সিপিএম টুইটে জানিয়েছে, 'আরএসএসের এক দেশ এক ভাষার ভাবনা বাস্তবায়িত করতেই হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। যা খুবই লজ্জাজনক।' নিজেদের মাতৃভাষায় টুইট করে কুমারস্বামী জানিয়েছেন, 'দেশের ওপর জোর করে হিন্দি চাপালে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হবে'।
আরও পড়ুন: ইমরানের অস্বস্তি বাড়িয়ে হিউস্টনে মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাবনা
নিন্দার গর্জে উঠেছে দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলি। ডিএমকে থেকে এআইএডিএমকে, পিএমকে অমিত শাহের মন্তব্যের বিরোধীতা করেছে। কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিন। তিনি বলেছেন, 'অত্যন্ত আতঙ্কের বিষয়।' তাঁর কথায়, 'ভারতের শক্তি বহুত্ববাদ। বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য দেশের সংস্কৃতি। এটাকে মুথে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা মেনে নেওয়া হবে না।'
তামিলনাড়ুর ভাষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রী পান্দিয়ারাজনের মতে দেশের মাত্র ৪৫ শতাংশ মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন। যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমডিএমকে প্রধান ভাইকো বলেন, 'ভারতকে যদি হিন্দিভাষী রাষ্ট্র হতে হয় তবে কেবল হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোরই তার অংশ হওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই লড়েছিল তামিলনাড়ুর শাসক দল এআিএডিএমকে, পিএমকে।
Read the full story in English