Advertisment

'উত্তর-পূর্বকে নাগরিকত্ব বিলের বাইরে রাখুন', অমিত শাহকে অনুরোধ মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতেই তার এই অনুরোধ। বিলকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য 'আত্মহত্যা'র সমতুল্য বলেও আখ্যা দেন তিনি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Amit Shah

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

সারা দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করালেও এর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য গুলোকে এর আওতার বাইরে রাখুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে এই আবেদন করেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরাম থাঙ্গা। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতেই তার এই অনুরোধ। বিলকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য 'আত্মহত্যা'র সমতুল্য বলেও আখ্যা দেন তিনি।

Advertisment

সোমবার গুয়াহাটিতে নর্থ-ইস্ট ডেভলপমেন্ট এলায়েন্স (নেডার)-র বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেন তিনি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, নেডার আহ্বায়ক হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সহ উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জোরাম থাঙ্গা বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে নানান সমস্যায় ভুগছি। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতে শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা যেমন কাজের থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আমরা নানাভাবে হেনস্থা সম্মুখীন হয়েছি। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে লড়াই করে নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। ‌এবার যদি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সবাইকে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল সারাদেশে পাশ হোক, তবে আমরা চাই উত্তর-পূর্ব ভারতকে এর থেকে বাইরে রাখা হোক।

আরও পড়ুন: বাবরি ধ্বংস মামলায় কল্যাণ সিংকে সমন পাঠাতে আবেদন সিবিআইয়ের

আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিলটি পাস হওয়ার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা যদি নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে না আসে তবে আমার মনে হয় এটি আত্মহত্যার সমতুল্য। আমরা নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষা করতে যদি এক হয়ে না দাঁড়াই তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

সন্ধ্যায় দূরভাষ যোগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী জোরাম থাঙ্গা। তিনি তার বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যেই নর্থ-ইস্ট ডেভলপমেন্ট এলায়েন্সের সদস্য হয়েছি। তবে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির লোকেরা অনুপ্রবেশকারীদের' সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে এটা ভুললে চলবে না। মূলত অসমে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সব থেকে বেশি এবং এনআরসি হওয়ার পর তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা মিজোরামে এই সমস্যায় দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভুগছি। বাইরের লোকেরা এসে সমস্ত কাজের সুযোগ ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং আমাদের যুবপ্রজন্ম কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতি চর্চার অধিকার ও ধীরে ধীরে ক্ষীন হয়ে আসছে। অনুপ্রবেশকারীরা থাকায় অপরাধমূলক কাজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অসমে এনআরসি হওয়ার পর আমরা আশা করছি উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও এই প্রক্রিয়ায় বিদেশীদের সনাক্ত করা হবে। তবে এর আগে যদি নাগরিকত্ব বিল পাস করে সবাইকে এদেশে থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয় তবে আমরা আমাদের লড়াইয়ে হেরে যাবো। তাই আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে কথাটি তুলে ধরেছি। আমার কোথায় অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিরা সম্মতি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ‘বৈশাখী গেলে যাক, দেবশ্রীকে বিজেপিতে নিন’

উল্লেখ্য ১০ বছর বিরোধীর আসনে থাকার পর ২০১৮ সালে কংগ্রেসকে হারিয়ে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) আবার ক্ষমতায় আসে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন জোরাম থাঙ্গা। তার দল বিজেপির নেতৃত্বে থাকা নর্থ-ইস্ট ডেভলপমেন্ট এলায়েন্স (নেডা)-র সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রকাশ্যে বিজেপির বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করেছেন। এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনে নিজের কথাগুলো স্পষ্টভাবেই তুলে ধরেন প্রাক্তন এই ছাত্রনেতা।

অসমে এনআরসির তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই মিজোরাম, মণিপুর, মেঘালয় ইত্যাদি রাজ্যের স্থানীয়রা ইনার লাইন পারমিট প্রক্রিয়াটি আরও কঠোর করে দেওয়ার পক্ষেও অনেকে দাবি তোলেন। ইনার লাইন পারমিটের নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মানুষ ছাড়া কেউ সহজে রাজ্যে প্রবেশ করতে পারেনা। তারা রাজ্যে প্রবেশ করলেও সেখানে থাকাকালীন বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই চাইছেন এই বিধি নিষেধ গুলো মূলত বাঙ্গালীদের জন্য আরও কঠোর করে দেওয়া হোক।

national news amit shah nrc
Advertisment