রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে 'রাবণ দহন' দেখতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে অমৃতসরের জোরা ফাটক এলাকার প্রায় ৫৯ জনের। আহতের সংখ্যাও প্রচুর। ইতিমধ্যে এই দুর্ঘটনার 'দায়' নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু, প্রত্যক্ষদর্শী এবং এলাকাবাসীরা বলছেন, "প্রতি বছরই তো এমনটা হয়"!
অমৃতসরের এই এলাকার বস্তিগুলিতে বসবাস মূলত নিম্নমধ্যবিত্তদের। শুক্রবারের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির অধিকাংশেরই পেশা কাঠ পালিশ করা, রঙের কাজ অথবা শৌচালয় ও আবর্জনা পরিস্কার। প্রধানত বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে আসা এই পরিবারগুলি কয়েক দশক ধরে জোরা ফাটক এলাকার রেল লাইনের ধারে বসবাস করছেন। দেহাতি নিম্মবিত্ত জীবনে খাটাখাটনির পর বিনোদনের সুযোগ তেমন নেই। এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রত্যেক বছরই এই এলাকায় রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে ঠিক এভাবেই 'রাবণ দহন' দেখা হয়। কিন্তু, কখনও এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রতিবারই সতর্ক করা হত বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। তবু সে সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলত দশাননের দহন পর্ব দর্শন।
আরও পড়ুন- রেল লাইনের পাশে দশেরা উদযাপনের কথা জানতই না রেল কর্তৃপক্ষ
দুর্ঘটনায় নিহতদের চিতা। এক্সপ্রেস ফটো: গুরমিত সিং।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দশেরার উত্সবে 'রাবণ দহন' দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন জোরা ফাটক এলাকার অসংখ্য মানুষ। কিন্তু, রেল লাইনের উপর থেকে ভাল ভাবে 'দহন' দেখা যায় বলে প্রায় শ তিনেক মানুষ চলে এসেছিলেন সেখানেই। মোবাইল ফোনে ছবি-ভিডিও তোলা হচ্ছিল দেদার। এরপর রাবণের গায়ে আগুন লাগানোর পর বাজি ফাটতে থাকে, ফলে আগুন ছিটকে আসতে শুরু করেছিল। সে সময় প্রায় ওই ৩০০ মানুষ রেল লাইনের মধ্যে আরও ঢুকে আসে। আর ঠিক তখনই তীব্র গতিতে ৭৪৬৪৩ জলন্ধর-অমৃতসর ডিএমইউ লোকাল চলে আসে। পাশের লাইনেও গাড়ি চলে আসায় সরেও যেতে পারেনি উপস্থিত মানুষ। আর ঠিক তখনই ট্রেনের চাকার নীচে পড়ে মৃত্যু হয় ৫৯ জনের।
আরও পড়ুন- পাঞ্জাব জুড়ে শোকের ছায়া, ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ অমরিন্দর সিং সরকারের
এদিকে, অমৃতসর সিভিল হসপিটাল-সহ অন্যান্য হাসপাতালে নিহতদের চিহ্নিত করতে ও ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করছেন শোকে পাগল পরিজনেরা। বেশ কয়েকটি দেহ আবার এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে যে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। তিনি ইতিমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। আর রাজ্য সরকারের এই অবস্থানকেই কাঠগড়ায় তুলেছে সে রাজ্যের বিরোধী নেতা সুখবীর সিং বাদল। তাঁর অভিযোগ, চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা থেকেই স্পষ্ট যে সরকার এই দুর্ঘটনাকে হালকাভাবে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বয়ানের ভিত্তিতে কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে এই দুর্ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে শিরমোণি অকালি দলের এই শীর্ষ নেতা।
Read this story in English