ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাইয়ের মত শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার বছর ৪৭-এর রেখা শর্মার। উপত্যকায় জঙ্গি হামলা রুখতে হাতে তুলে নিয়েছেন বন্দুক। জম্মুর আপার ডাংরি গ্রামের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দলকে তাদের এলাকায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আর সেই শিবিরেই অস্ত্র হাতে সামনে সারিতে দাঁড়িয়ে রেখা। রেখা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ,"ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাই যেমন তাঁর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, আমরা ডাংরির মহিলারাও পাকিস্তানের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।"
কেন হাতে তুলে নিয়েছেন বন্দুক? তাও অকপটেই জানিয়েছেন রেখা। তিনি বলেন, আশেপাশের গ্রামের এক বিধবার কান্না সহ্য করতে না পেরেই তাঁর এমন সিদ্ধান্ত। চলতি বছরের প্রথম ২ দিনে দুই ছেলেকে জঙ্গি হানায় হারান তিনি। তাঁর ডুকরে ওঠা সেই কান্না নাড়া দিয়ে গিয়েছিল রেখাকে। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং বি.এড. বিএসসি ডিগ্রিধারী তিন সন্তানের মা রেখা শর্মা বলেছেন, "জঙ্গিরা আমার বাড়ি, আমার গ্রাম এবং আমার মাতৃভূমি রক্তাক্ত করেছে… আমরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেব।" রেখা বলেন, যে তার প্রতিবেশী সুরজ দেবী কয়েক বছর আগে তার স্বামীকে হারান , তার দুই সন্তান দীপক শর্মা এবং প্রিন্স শর্মা শিক্ষিত। দুজনেই গণিতে এমএসসি পাস। ভাল চাকরিও করেন। দুজনেই চলতি বছর জঙ্গি হানায় নিহত হন। এরপর আমি প্রতিজ্ঞা করি, এই মৃত্যুর বদলা আমাকে নিতেই হবে"।
আরও পড়ুন: < রাজকীয় ‘গঙ্গা বিলাসে’ চোখধাঁধানো পরিষেবা,পাঁচতারা প্রমোদতরীতে কী কী সুবিধা পাবেন পর্যটকরা? >
সেদিনের সেই ঘটনা বাকরুদ্ধ করে রেখাকে। রেখা বলেন, "সেদিন আমি কিছুই করতে পারিনি কারণ আমি বন্দুক চালাতে জানতাম না।" রেখা স্বামী রণধীর কুমার শর্মা একজন ব্যবসায়ী। তার বড় ছেলে স্নাতক শেষ করে ব্যবসা করছে, মেয়ে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করছে এবং ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। আদতে দিল্লির বাসিন্দা রেখা ১৯৯৭ সালে বিয়ের পর ডাংরিতে আসেন।
রেখার কথায়, 'সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলায় দীপক ও প্রিন্সসহ সাতজন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর আবারও অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে'। আমি গ্রামের অন্যান্য মহিলাদেরকেও অস্ত্র ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রশিক্ষণ নিতে রাজি করব'। রেখার বাবা প্রয়াত কৃষ্ণ লাল দিল্লি পুলিশে কর্মরত ছিলেন, শ্বশুর প্রয়াত মেলা রাম জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। আপার ডাংরি গ্রামে সন্ত্রাসী হামলার পর, জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা গ্রামবাসীদের ডোডার মতো গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন। এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে গ্রাম প্রতিরক্ষা গার্ড।