Advertisment

আসামে 'অসমিয়া-বাঙালি হিন্দু' বিয়েতে আর্থিক সাহায্য দিতে চায় সরকারি সংস্থা

আসামের "ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কল্যাণের জন্য" ১৯৯৬ সালে আসাম সরকার দ্বারা গঠিত হয় আসাম লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
assamese bengali marriage

আসামে হিন্দু বাঙালি এবং অসমিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহের ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার উদ্দেশ্যে চালু হলো নতুন ওয়েবসাইট। 'সমন্বয়' নামের এই ওয়েবসাইট রবিবার উদ্বোধন করেন আসাম লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (ALMDB) নামক সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান। এই ওয়েবসাইটের মূল উদ্দেশ্য হলো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে "সম্পর্ক মজবুত" করা, যার প্রস্তাব এর আগে দিয়েছিল ALMDB।

Advertisment

বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সদস্য অলোক ঘোষ বলেন, "আমরা দেখেছি যে এই রাজ্যে অজস্র (হিন্দু) অসমিয়া-বাঙালি বিয়ে হয়। এইসব দম্পতিরা প্রায়শই নানান সমস্যার মুখে পড়েন, যেমন পারিবারিক বিরোধিতা ইত্যাদি। তাই আমরা ওঁদের আর্থিক সাহায্য দিতে চাই - সে ৪০ হাজার হোক কী ৫০ হাজার। আমরা মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, এবং সংখ্যালঘু কল্যাণ ও উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, এবং আশা করছি, রাজ্য বাজেট ২০২০-২১ এ আমাদের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হবে।" আগামী ৪ মার্চ পেশ হওয়ার কথা আসামের ২০২০-২১ এর বাজেট।

আরও পড়ুন: ‘আসামের সব মাদ্রাসা এবং সংস্কৃত টোল বন্ধ করব’, আসামের শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে চাঞ্চল্য

রাজ্যের সংখ্যালঘু কল্যাণ ও উন্নয়ন মন্ত্রী রঞ্জিত দত্ত অবশ্য বলেছেন যে তিনি এই ধরনের কোনও প্রস্তাব এখনও পান নি, সুতরাং এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চান না। এদিকে অলোকবাবু তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সরকারি সাহায্য পাওয়া যাক বা না যাক। "প্রয়োজনে চাঁদা তুলে অর্থ সংগ্রহ করব আমরা," জানান তিনি।

আসামের "ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কল্যাণের জন্য" ১৯৯৬ সালে আসাম সরকার দ্বারা গঠিত হয় আসাম লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, ২০১৮ সাল থেকে যার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন অলোকবাবু। তাঁর কথায়, "দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে ছিল এই বোর্ড, কিন্তু আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সংখ্যালঘুদের সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।" অলোকবাবুর প্রস্তাবে ১৫টি মূর্তি স্থাপনেরও উল্লেখ রয়েছে। যেমন শিলিগুড়িতে ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকার মূর্তি। পাশাপাশি আসামের কিংবদন্তী সাহিত্যিক লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়া এবং তাঁর বাঙালি স্ত্রী তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর মূর্তির কথাও বলা হয়েছে।

অলোকবাবুর কথা অনুযায়ী, অসমিয়া-বাঙালি দম্পতিরা যদি আর্থিক সাহায্যপ্রার্থী হন, তবে তাঁদের ইনকাম সার্টিফিকেট এবং ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। "তিনদিনের মধ্যেই বেশ কিছু আবেদন জমা পড়েছে," দাবি অলোকবাবুর। তিনি আরও জানান যে তাঁরা সমীক্ষার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রায় দু'হাজার দম্পতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

আরও পড়ুন: উধাও আসাম এনআরসির তথ্য! তবে ‘সুরক্ষিতই রয়েছে’

একদিকে বিজেপি সরকার দ্বারা প্রণীত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) আসামের বাঙালি এবং অসমিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, অন্যদিকে অলোকবাবু বলছেন, তাঁর প্রস্তাবের সঙ্গে "সিএএ বা এনআরসি বা কোনও রাজনীতির যোগ নেই", এবং তাঁরা এই পরিকল্পনা করেছিলেন এক বছর আগে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬০ এবং ৭০-এর দশক থেকেই ভাষা সমস্যায় প্রায়শই জর্জরিত হয়েছে আসাম, যার জেরে একাধিক 'ভাষা দাঙ্গার' সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। সাম্প্রতিককালে আসামে রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস বা এনআরসি) প্রক্রিয়ার ফলে ফের একবার দগদগে হয়ে উঠেছে পুরোনো আঘাত।

সুতরাং লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রস্তাব যে সকলেই সাদরে গ্রহণ করছেন, এমন নয়। বঙ্গাইগাঁও শহরের হিন্দু বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতা তথা সারা আসাম বাঙালি ঐক্যমঞ্চের সদস্য অমৃত লাল বলছেন, "আমরা সর্বতোভাবে বাঙালি-অসমিয়া বিবাহকে সমর্থন করি, এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর অনেক উপায় রয়েছে, কিন্তু টাকা দিয়ে দম্পতিদের প্রলোভিত করার চেষ্টা অত্যন্ত অন্যায়।"

প্রস্তাবে আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের সাহায্যার্থে কোনও সংস্থান রয়েছে কিনা জানতে চাওয়ায় অলোকবাবু বলেন, তাঁরা "আপাতত" হিন্দুদের দিকেই নজর দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আসামে অসমিয়াভাষী এবং বাংলাভাষীদের সংখ্যা যথাক্রমে ১.৫ কোটি (মোট জনসংখ্যার ৪৮.৩ শতাংশ) এবং ৯০ লক্ষ (মোট জনসংখ্যার ২৮.৯ শতাংশ)।

Assam Accord caa
Advertisment