শনিবার প্রকাশিত আসামের এনআরসি তালিকা থেকে খাঁটি ভারতীয় নাগরিকরা বাদ পড়েছেন বলে শোরগোল তুলে দিয়েছেন রাজ্যের সব জেলার সব রংয়ের রাজনৈতিক দলের বিধায়করা।
বিধায়করা বলছেন যাঁদের নাম ভুলবশত বাদ পড়েছে তাঁরা যাতে রাজ্যের বিদেশি ট্রাইবুনালে আবেদন জানাতে পারেন, সে ব্যাপারে তালিকাছুটদের পাশে দাঁড়াবেন তাঁরা।
রবিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বেশ কিছু বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছিল এ ব্যাপারে। কেউই নিজের বিধানসভা এলাকা থেকে কতজনের নাম বাদ পড়েছে, তার হিসেব দিতে পারেননি। সকলেই বলেছেন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সব জেলার বিজেপির বিধায়করাও দলীয় লাইন অনুসারে এনআরসি-র তুমুল সমালোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন, বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এনআরসির ধর্মীয় মেরুকরণ করছে: সুস্মিতা দেব
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি তথা নমনি আসামের সরভোগ বিধানসভা এলাকার বিধায়ক রঞ্জিত দাস জানিয়েছেন, "আমার বিধানসভা এলাকায় বেশ কিছু এমন ঘটানা ঘটেছে যেখানে একই পরিবারের কারও কারও নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, কারও কারও নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। অন্য জায়গা থেকে বিয়ে হয়ে এই বিধানসভায় এসেছেন এরকম বহু মহিলার নাম বাদ পড়েছে। হিন্দু মুসলিম দু ধরনের তালিকাছুটরাই আমার কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি সকলকেই বিদেশি ট্রাইবুনালে আবেদন করতে বলেছি। যদি কেউ বাদ পড়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলে আবেদন না-জানান, তাহলে সে ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকবে।"
এআইডিএউএফ এর বিধায় অনন্ত কুমার মালো তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত নমনি আসামের অভয়পুরী দক্ষিণের বিধায়ক। তাঁর নাম এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাঁর পরিবারের অন্য সকলেই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
"এটা একটা এনআরসি? আপনিই বলুন", রাগে ফুঁসছিলেন অনন্ত। "হাজার হাজার সত্যিকারের ভারতীয়ের নাম বাদ পড়েছে, বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুদের নাম। এদিকে এত এত বিদেশি বেআইনির নাম উঠেছে।"
মরিগাঁও বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক রামকান্ত দেওরি ঠিক করে বলতে পারলেন না তাঁর নাম তালিকায় আছে না নেই। "আমি চেক করিনি, আমার কিছু যায় আসে না। আমি জানি বহু বাংলাদেশির নাম উঠেছে, বহু খাঁটি ভারতীয়ের নাম বাদ পড়েছে।" বললেন রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত এই বিধায়ক।
ঢেকিয়াজুলির বিধায়ক রামকান্তের বিজেপি সতীর্থ অশোক সিংঘল বলেছেন, "অনেকগুলি তালিকাছুটের ঘটনা রয়েছে। আমি চেষ্টা করছি তালিকাছুটদের ব্যাপারে সমস্ত তথ্য একত্রিত করবার।"
উজান আসামের মূলত অসমিয়াভাষী এলাকার বিধায়করা বলেছেন তাঁদের বিধানসভা এলাকায় তালিকাছুটদের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম।
শিবসাগর জেলার নাজিরা বিধানসভার বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া বলেছেন, "আমার এলাকায় বাঙালি তফশিলি জাতির একটা সম্প্রদায় রয়েছে। তাদের অনেকেই বাদ পড়েছে। কিছু মুসলিম বাদ পড়েছে। অসমিয়া জনগণের প্রায় সকলেরই নাম রয়েছে তালিকায়।"
আরও পড়ুন, কী হলো, কবে হলো: আসাম এনআরসি নির্ঘণ্ট
গোলাঘাটের কংগ্রেস বিধায়ক অজন্তা নিয়োগ বললেন তাঁর এলাকা থেকে কতজন বাদ পড়েছেন, তার হিসাব তিনি এখনই দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, "আমার এখানে প্রায় সকলেই অসমিয়া, তাদের প্রায় সকলেরই নাম উঠেছে। আদিবাসী মানুষদেরও নাম উঠেছে - কেউ কেউ এখনও দেখেনি তাদের নাম উঠেছে কিনা। আমি তালিকাছুটের বিস্তারিত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি।"
কিন্তু হিন্দু বাঙালি, যারা বিজেপির ভোটব্যাঙ্কও বটে, তাদের নাম বহু সংখ্যায় বাদ পড়ায় দলের মাথা ব্যথা বেড়েছে।
আসামের হোজাই জেলার বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের বিধানসভা এলাকায় তালিকাছুটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল খসড়া এনআরসি তালিকায়। তিনি বলেছেন, "আমার জেলায় খসড়াতেও সবচেয়ে বেশি তালিকাছুট ছিল, এবারেও তাই থাকবে। আমি একটা সংখ্যা পাওয়ার চেষ্টা করছি।"
শিলচরের বরাক উপত্যকার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার বিজেপি বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল বললেন, "আমার স্ত্রীর নাম খসড়ায় ছিল না। সে এখন বাইরে, অ্যাপ্লিকেশন নম্বরও তার কাছে, ফলে অনলাইনে তার স্ট্যাটাস জানতে পারিনি। কিন্তু আমার পরিবারের কথা যদি বাদও দিই আমার এলাকার বহু বাঙালি হিন্দু বাদ পড়েছেন। এই এনআরসি আমরা মানব না। এনআরসি-তে বহু বেআইনি বিদেশি ঢিকেছে, বহু খাঁটি ভারতীয় বাদ পড়েছে। আমার কাছে এর কোনও মূল্য নেই।"
আরও পড়ুন, ‘কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়াটা উদ্দেশ্য নয়’ বললেন নাগরিক পঞ্জীর নেপথ্য নায়ক
বরাক উপত্যকার উত্তর করিমগঞ্জের একই রকম বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বললেন, "এনআরসি মানুষকে হেনস্থা করছে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এনআরসি আপডেট করার প্রক্রিয়ায় জোর দেওয়া হয়েছে কিন্তু পুরো সময় জুড়েই বিজেপি সরকার বসে ছিল। এর আগেও আমরা বলেছি বাঙালি হিন্দুদের নাম বাদ পড়বে, কেউ কর্ণপাত করেনি। আমার এলাকার এক পরিবারের আটজন একই লিগ্যাসি সার্টিফিকেট দিয়েছিল, পাঁচজনের নাম এসেছে, তিনজনের নাম বাদ পড়েছে।"
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার বিধায়করাও বলছেন তাঁদের এলাকার বহু খাঁটি নাগরিকের নাম তালিকাছুট ১৯ লক্ষের মধ্যে রয়েছে।
নমনি আসামের ধুবড়ির বিলাসিপাড়া কেন্দ্রের এআইডিইউএফ বিধায় হাফিজ় বশির আহমেদ বললেন, "একজন খাঁটি ভারতীয়ের নামও যদি বাদ পড়ে তাহলে এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্টির কোনও জায়গা থাকা উচিত নয়।"
নগাঁওয়ের ধিং বিধানসভার এআইডিইউএফ বিধায়ক আমিনুস ইসলাম বললেন, "তালিকাছুটের বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেক বাবামায়ের নাম ঢুকেছে, ছেলেমেয়ের নাম বাদ পড়েছে।"
Read the Full Story in English