আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি) অর্থাৎ নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলো শনিবার, ৩১ অগাস্ট। তালিকায় রয়েছে ৩.১১ কোটিরও বেশি নাম, যেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩.৩ কোটি। গত বছর প্রকাশিত খসড়া তালিকা থেকে বাদ গিয়েছিল ৪০ লক্ষ নাম, চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ল ১৯ লক্ষের বেশি নাম।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল শুক্রবার রাজ্যবাসীর প্রতি শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান। তাঁর বক্তব্য, যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাঁদের প্রতি, এবং তাঁরা তালিকা প্রকাশের ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাতে পারেন। এর আগে আবেদন জানানোর মেয়াদ ছিল ৬০ দিন।
আসাম এনআরসি: চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পূর্বকথন
১৯৫০: দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের ঢল সামলাতে লাগু হয় অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) আইন
১৯৫১: স্বাধীন ভারতের প্রথম জনগণনা (সেন্সাস) করা হয়, যার ভিত্তিতে তৈরি হয় প্রথম এনআরসি
১৯৫৭: অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) আইন বাতিল
১৯৬৪-৬৫: ফের একবার ধর্মীয় নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থীদের ভারতে প্রবেশ
১৯৭১: পূর্ব পাকিস্তানে দাঙ্গা, যুদ্ধ, ফলে আরও একবার শরণার্থীদের প্রবেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম
১৯৭৯-৮৫: বিদেশীদের চিহ্নিতকরণ, ভোটাধিকার রদ, এবং নির্বাসনের দাবিতে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং অল আসাম গণ সংগ্রাম পরিষদের (এএজিএসপি) ছয় বছর ব্যাপী আন্দোলন
১৯৮৩: মধ্য আসামের নেলি-তে ভয়াবহ গণহত্যা, মৃত ৩ হাজারের বেশি মানুষ, অধিকাংশই প্রাক-স্বাধীন ভারতবর্ষে আসা বাংলাদেশীদের বংশধর। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী (ট্রাইব্যুনাল দ্বারা নির্ধারণ) আইন পাশ
আরও পড়ুন: ‘কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়াটা উদ্দেশ্য নয়’ বললেন নাগরিক পঞ্জীর নেপথ্য নায়ক
১৯৮৫: তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উপস্থিতিতে কেন্দ্র, রাজ্য, আসু এবং এএজিএসপি-র মধ্যে স্বাক্ষরিত আসাম চুক্তি (আসাম অ্যাকর্ড)। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর পর আসামে প্রবেশকারী বিদেশীদের বহিষ্কার করা হবে
১৯৯৭: যেসব ভোটদাতার ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, তাঁদের নামের পাশে 'D' (doubtful) লেখার সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের
২০০৫: অবৈধ অনুপ্রবেশকারী (ট্রাইব্যুনাল দ্বারা নির্ধারণ) আইন অসাংবিধানিক, রায় সুপ্রিম কোর্টের। কেন্দ্র, রাজ্য, এবং আসু-র ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ১৯৫১ সালের এনআরসি আপডেট করার সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় না
২০০৯: আসাম পাবলিক ওয়ার্কস (এপিডবলু) নামে এক এনজিও-র তরফে ভোটার তালিকা থেকে বিদেশীদের নাম কেটে দেওয়ার এবং এনআরসি আপডেট করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা
২০১০: বরপেটা এবং চায়গাঁওয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু নতুন এনআরসি প্রক্রিয়া। প্রকল্প সফল চায়গাঁওয়ে, বরপেটায় হিংসায় মৃত চার। প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা
২০১৩: এপিডবলু-এর আবেদন গৃহীত সুপ্রিম কোর্টে, কেন্দ্র এবং রাজ্যকে এনআরসি আপডেট করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ। এনআরসি স্টেট কোঅরডিনেটরের অফিস চালু
২০১৫: এনআরসি আপডেট প্রক্রিয়া শুরু
২০১৭: ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত্রে প্রকাশিত খসড়া এনআরসি, ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ১.৯ কোটি জনের নাম সমেত
৩০ জুলাই, ২০১৮: দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশ, এবার ২.৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ৪০ লক্ষ জনের নাম বাতিল
২৬ জুন, ২০১৯: আরও ১,০২,৪৬২ টি বাতিল নামের খসড়া তালিকা প্রকাশ
৩১ অগাস্ট, ২০১৯: চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশ