Advertisment

দুই দশকে ১২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু! ভারতে সর্পদংশনের বলি সর্বাধিক

সারা বিশ্বের সাপের কামড়ে মৃত্যুর ৫০ শতাংশ ভারতেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রতীকী ছবি

গ্রামাঞ্চল প্রধান দেশ ভারতবর্ষ। গ্রামীণ নানান স্তরে বন-জঙ্গল-নদী-পুকুরের সন্নিবেশ এবং তার সঙ্গে নানান কীটপতঙ্গ এবং সরীসৃপের উদ্বেগ! সারা ভারতে ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে শুধুমাত্র সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ১২ লক্ষ মানুষের। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ ও মুম্বইয়ের আইসিএমআর ল্যাবরেটরি এবং মহারাষ্ট্র রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগের একটি নতুন গবেষণায় সাপের কামড়ে মৃত্যুর বিষয়টিতে সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব তুলে ধরা হয়েছে। সাপ এবং সাপের কামড় সম্পর্কে অনেকেরই জ্ঞান নেই, তাই এটি ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

Advertisment

বেশ কিছু ক্রান্তীয় দেশে সাপের কামড়ের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সাপের কামড়কে উচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবহেলিত রোগ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রায় ৫৪ লক্ষ মানুষ সাপের কামড়ের আওতায় অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে বিষক্রিয়া ঘটে ১৮ থেকে ২৭ লক্ষ মানুষের, মৃত্যু হয় ৮০,০০০ থেকে ১৪ লক্ষ মানুষের এবং অনেক মানুষ নানান অস্থায়ী অক্ষমতায় ভোগেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নয়নশীল দেশগুলির মানুষ দীর্ঘমেয়াদী জটিলতায় যেমন বিকৃতি, সংকোচন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা, রেনাল জটিলতা, মানসিক কষ্ট এইসব সমস্যায় ভোগেন।

সারা বিশ্বের সাপের কামড়ে মৃত্যুর ৫০ শতাংশ ভারতেই। কৃষক, শ্রমিক, শিকারি, রাখাল, সাপ উদ্ধারকারী, আদিবাসী এবং গ্রামের অধিবাসীরা যাঁদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সীমিত উপলব্ধি রয়েছে তারা সাপের কামড়ের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী। সচেতনতার অভাব, সাপের কামড় রোধে অপর্যাপ্ত জ্ঞান এবং সম্প্রদায়ের পাশাপাশি পেরিফেরাল স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা, জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা পেতে দেরি হয় তাদের। সাপের বিষরোধক ওষুধ (এএসভি) পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত মেডিক্যাল অফিসার না পাওয়ায় সর্পদংশনে অধিক সংখ্যক মৃত্যু হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক, ২০৩০ সালের মধ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যু সংখ্যা যাতে কমানো যায় সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে এর অনেক আগে থেকেই আইসিএমআর-এনআইআরআরএইচ এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগ, মহারাষ্ট্রের গবেষকরা ২০১৩ সাল থেকে কমিউনিটি সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সক্ষমতা নির্মাণ শুরু করেছিলেন এবং সর্পদংশনে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের অর্থায়নে জাতীয় গবেষণার মাধ্যমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ICMR।

আরও পড়ুন জনসন অ্যান্ড জনসনের সিঙ্গল ডোজ কোভিড টিকার অনুমোদন দিল ভারত

মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় দাহানু গ্রামে কমিউনিটি সচেতনতার স্বরূপ ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে গবেষণা করা হয়। প্রধান তদন্তকারী এবং গবেষণার সংশ্লিষ্ট লেখক ডা. রাহুল গজভিয়ে বলেন, সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য সম্প্রদায়ের সদস্যদের সচেতনতা, সাপের কামড় প্রতিরোধ, প্রাথমিক চিকিৎসা অনুশীলন এবং স্বাস্থ্যসেবার নানান আচরণ বোঝা এবং জ্ঞান মূল্যায়ন করা ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। দাহানুর ঐতিহ্যগত বিশ্বাস নিরাময়কারী, সাপ উদ্ধারকারী এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মধ্যে সাপের কামড়ের ব্যবস্থাপনা অনুশীলন প্রদানও করা হয়। এর পর থেকেই সাপের কামড়ে মৃত্যু ক্রমশই কমতে থেকে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকেই এই অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে প্রাণ বাঁচিয়েছেন নিজেদের। সতর্কতা, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং এর থেকে মুক্তির উপায় সঙ্গে সুস্থ থাকার জন্য সঠিক প্রয়োগ এবং অনুশীলন যথেষ্টই কাজে এসছে। ২০১৪ সালে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪.৪% সেখানে ২০১৭ সালে তার প্রভাব কমে ০.৪ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্রাম বাংলার নানান স্তরে কুসংস্কারের অন্ত নেই! অনেকেই বিশ্বাস করেন সাপের দেবতা, তেঁতুলের বীজ এবং চুম্বক দিয়ে বিষ বের করার উপর অনেকেই নির্ভর করতেন। দাহানু ব্লকের বেশিরভাগ মানুষই, সাপের কামড়ের ফলে নানান জটিলতা যেমন কিডনির সমস্যা, দৃষ্টিজনিত সমস্যা এসব বিষয়ে একদমই অবগত ছিলেন না। কুসংস্কারের রোগ সারানো একেবারেই সম্ভব নয়! গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, সাপের কামড়ে আক্রান্তদের কাঁচা লঙ্কা, লঙ্কাগুঁড়ো, লবণ, চিনি খেতে দিলে যদি তাঁরা স্বাদ শনাক্ত করতে পারে তবে এটি একটি বিষাক্ত সাপের কামড় নয় কিন্তু যদি তাঁরা স্বাদ শনাক্ত করতে অক্ষম হয় তবে এটি বিষাক্ত সাপের কামড়। আরেকজন বাসিন্দা বলেছেন, কামড়ের পর যদি শিকার পাঁচ ধাপও হাঁটতে না পারে এবং তৎক্ষণাৎ মৃত্যু ঘটে, তাহলে এটি বিষাক্ত সাপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে, সাপের কামড় সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্তি হওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলাকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলিতে বিষাক্ত ও অ-বিষাক্ত সাপ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সাপের কামড়ের চিকিৎসায় কোন আইইসি (তথ্য, শিক্ষা এবং যোগাযোগ) ছিল না। অধ্যয়ন দলের সহ-গবেষক, ভারতের জনস্বাস্থ্য বিভাগ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে সাপের কামড় ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। মানুষের স্বার্থে এবং সুস্থতায় দেশের নানান স্তরে এই বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Snakebite
Advertisment