শতাব্দী প্রাচীন বিবাদে ইতি টেনে অযোধ্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে গড়ে উঠবে রাম মন্দির। এ জন্য সরকারকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ট্রাস্ট গড়তে হবে। সেই ট্রাস্টই দেখভাল করবে মন্দির নির্মাণের বিষয়টি। সুপ্রিম রায় ঘিরে রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে ও মামলায় অংশগ্রহণকারী সংগঠন সদস্যদের উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন প্রশ্ন হল, এই ট্রাস্টে কারা থাকবেন? ইতিমধ্যেই তা নিয়ে হিন্দু সংগঠনগুলির মধ্যে মতপার্থক্য ও বাকযুদ্ধ প্রকাশ্যে।
এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও রাম জন্মভূমি ন্যাসের সভাপতি নৃত্য গোপাল দাস বলেন, 'মন্দির নির্মাণের জন্য নতুন করে ট্রাস্ট গঠনের প্রয়োজন নেই। এই কাজের জন্য ন্যাস রয়েছে, এটিই একটি ট্রাস্ট। এছাড়া এতে নির্মোহী আখড়ার মতো সংগঠনগুলি অংশ নিতে পারে।' কিন্তু, এই প্রস্তাবে রাজি নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নির্মোহী আখড়ার মহন্ত ধীরেন্দ্র দাস। তাঁর কথায়, 'আমরা রাম জন্মভূমি ন্যাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কি করে একজন আসা করতে পারেন যে নির্মোহী আখড়া, ন্যাস গঠিত ট্রাস্টের অংশীদার হবে? পারলে ওরা ওই ট্রাস্ট বিলোপ করে আমাদের ট্রাস্টের অংশীদার হোক।' মহন্ত ধীরেন্দ্র দাসের কথায়, সরকার প্রয়োজনীয় সমাধান করে ট্রাস্টে সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করক।
আরও পড়ুন: অযোধ্যা রায়ের বিশ্লেষণ: নয়া রাম মন্দিরের দেখভাল করবে ট্রাস্ট
অযোধ্যা রায়ে ৫ বিচারপতি একমত হয়ে জানিয়ে দেন ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমি রাম মন্দির গঠনের জন্য একটি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হবে। রায়ে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে নির্মোহী আখড়াকে সেবাইত হিসাবে এক তৃতীয়াংশ জমির স্বত্ব দিয়েছিল, সে আখড়ার আর কোনও অধিকার নেই। আখড়ার দাবি খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সুপ্রিম রায়ে, বিতর্কীত জমিতে নির্মোহী আখড়ার ঐতিহাসিক অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। কেন্দ্র গঠীত ট্রাস্টে তাদের রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আযোধ্যার আখড়াগুলির মধ্যে অন্যতম দিগম্বর আখড়া। এই আখড়ারই প্রধান ছিলেন পরমহংস রামচন্দ্র দাস। যিনি রাম জন্মভূমি ন্যাসের সভাপতিও ছিলেন। ২০০৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এহেন আখড়ার বর্তমান প্রধান মহন্ত সুরেশ দাস জানিয়েছেন, আগামী বুধবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বর্তমান ট্রাস্ট যাতে মন্দির নির্মাণ করতে না পারে তার জন্য আবেদন করবেন। যা রাম জন্মভূমি ন্যাসের দাবির বিরোধী।
আরও পড়ুন: বাবরি ধ্বংস মামলার রায় হতে পারে আগামী এপ্রিলে
রায়ে বলা হয়েছে, ৯ই নভেম্বর থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ১৯৯৩ সালের অযোধ্যা আইনের ৬ ও ৭ নম্বর ধারার আওতায় কেন্দ্রকে ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। এই ট্রাস্টই রাম মন্দির গঠনের কাজ দেখভাল করবে। ট্রাস্টের কার্যকারীতায় মন্দির নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলি যেন অন্তর্ভূক্ত থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলা হয়েছে।
রাম জন্মভূমি ন্যাসের সভাপতি নৃত্য গোপাল দাস সরকার গঠিত ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, 'কেন ওই ট্রাস্ট গঠন করা হবে ও কেনই বা তার অংশীদার হবো?' অন্যদিকে দিগম্বর আখড়ার প্রধানের কথায়, 'অযোধ্যা রায় অত্যন্ত ভোলো।' গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'নতুন ট্রাস্ট গঠন করা খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ মন্দির নির্মাণ কেবল সরকারের কাজ নয়।'
Read the full story in English