মঞ্চে সবেমাত্র বক্তৃতা করতে উঠেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকারজয়ী লেখক সলমন রুশদি । হটাৎ করেই সবার নজর এড়িয়ে মঞ্চে উঠে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করেন এক হামলাকারী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে ঘাড়ে গলায় পরপর ছুরির আঘাত চলে প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গোটা প্রেক্ষাগৃহের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। মুহূর্তের মধ্যেই ধরে ফেলা হয় আততায়ীকে। সালমান রুশদি গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে আপাতত ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি।
তবে চিকিৎসকদের অনুমান প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হলেও একটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে রুশদির। এদিকে প্রখ্যাত লেখ সলমন রুশদির ওপর আক্রমণের ঘটনার গর্জে উঠলেন বিশ্বের তাবড় বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে লেখক সাংবাদিক সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষ রুশদির ওপর হামলার ঘটনাকে "ভয়ংকর" বলে বর্ণনা করে রুশদির দ্রুত আরোগ্য প্রার্থনা করেছেন।
আরও পড়ুন: < নন্দীগ্রামে ‘তেরঙ্গা যাত্রা’য় পুলিশি ‘বাধা’, শাহকে লেখা চিঠিতে বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর >
অন্যদিকে বাংলাদেশের আরেক বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন "এমন কিছু ঘটবে তা কখনোই ভাবিনি" এবং যোগ করেছেন যে "যদি সালমান রুশদির উপর এহেন হামলা হয়, তবে ইসলামের সমালোচনাকারীদের ওপরেই যে কোন সময়ই হামলা হতে পারে” ।
কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতার রুশদির উপর "বর্বরোচিত হামলার" তীব্র নিন্দা করেছেন। ব্রিটিশ লেখক নিল গাইমান একটি টুইটে বলেছেন যে তিনি "তার বন্ধু (সালমান রুশদি)-এর ওপর ভয়ঙ্কর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছেন।
অন্যদিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখিকা এবং সমাজকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ এই হামলার নিন্দা করে বলেছেন, " আমাদের হত্যা করতে পারেন , কিন্তু লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের একের পর এক প্রতিবাদ জারি থাকবে”।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন “সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় আমি মর্মাহত”।
মুম্বইতে জন্মগ্রহণ করেন ঔপন্যাসিক রুশদি। এর আগেও তাঁর একাধিক লেখার কারণে ইরানি মুসলমানদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার পর বহু বছর আত্মগোপন করেছিলেন। শুক্রবার নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন মঞ্চে উঠে রুশদির ঘাড়ে এবং গলায় একের পর এক ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সূত্রের খবর টানা ১০-১২ বার তাঁকে কোপানর চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে হামলার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে । অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পর, রুশদি ভেন্টিলেটরে ছিলেন এবং শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা বলার মত অবস্থায় তিনি ছিলেন না। ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইয়ের কারণে ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি।
রুশদির বুক এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি,একটি ইমেলে মারফৎ সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন “সালমান সম্ভবত একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না এবং তার লিভারে গুরুতর চোট লেগেছে” ।
রুশদি বোম্বেতে একটি মুসলিম কাশ্মীরি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার চতুর্থ উপন্যাস 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস'-এর জন্য প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, যা সবচেয়ে বিশিষ্টভাবে ইরানের শক্তিশালী ধর্মগুরু এবং নেতা আয়াতুল্লাহ রুহোল্লা খোমেইনির কাছ থেকে, যিনি ঔপন্যাসিককে হত্যা করার জন্য মুসলমানদের আহ্বান জানিয়ে একটি ফতোয়া ঘোষণা করেছিলেন। ২০১২ সাল থেকে রুশদির মাথার দাম আরও বাড়ানো হয় ইরানের আধা-সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তরফে।