প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন দেখা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যাওয়ার পর ছাত্রছাত্রী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে তথাকথিত হুমকির প্রেক্ষিতে দুদিনের ছুটি ঘোষণা করল বেঙ্গালুরুর সৃষ্টি ইন্সটিটিউট অফ আর্ট ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি।
ইয়েলাহাঙ্কা নিউ টাউনে অবস্থিত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং কর্মীদের "সম্ভাব্য বিপদের" কথা উল্লেখ করে ছুটি ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে পাঠানো একটি ই-মেইল বার্তায় প্রতিষ্ঠানটির এগজিকিউটিভ প্রশাসক জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার কোনো ক্লাস হবে না।
মঙ্গলবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে। অভিযোগ, কলেজ ক্যাম্পাসের উল্টোদিকের দেওয়ালে প্রধানমন্ত্রীর নামে লিখন দেখা যাওয়ার পর বিজেপি কর্মীরা পড়ুয়াদের "হেনস্থা করে এবং হুমকি দেয়"। দেওয়ালে মোদীর ছবি এঁকে তার তলায় লেখা হয়েছে "সব চাঙ্গা সি" (সব ঠিক আছে)।
পড়ুয়াদের পাঠানো ই-মেইলে লেখা হয়েছে, "আমরা বুঝতে পারছি যে বর্তমান সময়টা কঠিন, এবং আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে হাঁটব, আমাদের সামনে যা সমস্যা, তা নিয়ে সকলে কথা বলব।"
আরও পড়ুন: বাংলা ও কেরালায় এখনই এনপিআর নয়
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক এস আর বিশ্বনাথের নেতৃত্বে জনা দশেক ব্যক্তি ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়। ওই ছাত্রের কথায়, "যেসব রাজনৈতিক নেতা বিধায়কের সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা মিলে নিরাপত্তা কর্মীদের হুমকি দিয়ে দাবি করতে থাকেন যেন তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়, কারণ এন৫ ক্যাম্পাসের উল্টোদিকের দেওয়াল লিখন নিয়ে তাঁরা কথা বলতে চান। এই লিখন কার কাজ, সে সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত না হলেও কলেজ এবং ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন।"
ওই ছাত্র আরও যোগ করে, "ততক্ষণে ক্যাম্পাসের বাইরে পার্ক করা বেশিরভাগ গাড়িই তুলে নিয়ে গেছে ট্র্যাফিক পুলিশ। কয়েকটা গাড়ি যে স্টুডেন্টদেরই, সেটা বুঝে উঠতে না উঠতেই ওই দলের কেউ কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বলতে থাকে যে ছোট জামা পরা বা রাস্তায় ধূমপান করা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী।"
প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এন৫ ক্যাম্পাসের "মেন গেটের ওপর জবরদস্তি হামলা" করেন বিজেপি বিধায়ক এস আর বিশ্বনাথ। বিধায়ককে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে তিনি বলেন, "আমরা জোর খাটাতে চাইলে খাটাতে পারতাম, ওরা আমাদের প্রতিরোধ করতে পারত না।"
গাড়ি পার্কিং সম্পর্কে পড়ুয়াদের বক্তব্য, বহুবছর ধরে রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে আসছেন সৃষ্টি ইন্সটিটিউটের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, "স্টুডেন্ট এবং স্টাফের সদস্যরা কী হচ্ছে জানতে চাইলে ওরা গাড়ি ভাংচুর করার হুমকি দেয়, এবং প্রথমে আমাদের সঙ্গে কোনও কথাই বলতে চায় না।"
আরও পড়ুন: ‘জিন্নার স্বপ্নপূরণে এগোচ্ছেন মোদী!’
মঙ্গলবার স্থানীয় বাসিন্দা রাঘবেন্দ্র সকাল সাড়ে দশটায় একটি সরকারি অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেন যে, ক্যাম্পাসের বাইরের ফুটপাথে রাখা পড়ুয়াদের গাড়িগুলি ইয়েলাহাঙ্কা নিউ টাউন ফেজ ৫-এর বাসিন্দাদের অসুবিধার সৃষ্টি করছে। ওই অভিযোগে দেওয়াল লিখনের কথাও বলা হয়।
স্থানীয় পৌরপিতা সতীশ এম খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বলেন, প্রধান সমস্যা হলো ফুটপাথে গাড়ি রাখার, যার ফলে যাতায়াতের অসুবিধে হচ্ছে স্থানীয়দের। সঙ্গে তিনি যোগ করেন, "প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দেওয়াল লিখনেও মনে আঘাত পেয়েছেন অনেক দলীয় কর্মী, অতএব তার ওপর রঙ করে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেও ওই এলাকার বাসিন্দারা প্রায়শই অভিযোগ জানিয়েছেন যে স্টুডেন্টরা রাতে ফুটপাথের ওপর বসে মদ-সিগারেট খায়। কেউ কেউ তাদের পোশাক নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছেন, যদিও আমি মনে করি ওটা ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।"
ইয়েলাহাঙ্কার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ আরও অভিযোগ করেছেন যে ইন্সটিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের করা দেওয়াল লিখন নিয়ে একাধিক নালিশ এসেছে। "মোদী-বিরোধী পেইন্টিংয়ের বিষয়টি নিয়ে কলেজকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সম্পত্তি নষ্ট না করে স্টুডেন্টরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রতিবাদ করুক," বলেন বিশ্বনাথ।
এক ছাত্রের কথায়, "কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবরই জনস্বার্থ বিষয়ক ইস্যুতে আমাদের পাশে থেকেছেন। কলেজের মধ্যেই সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ) এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি) সংক্রান্ত আলচনাসভা করা হয়েছে আইনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, যাতে আমরা বিশদে বুঝি ব্যাপারটা, কিন্তু কোনোকিছুই চাপিয়ে দেওয়া হয়নি আমাদের ওপর।"
পড়ুয়ারা জানিয়েছে যে মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে দেখা করে কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দেন যেন তারা নির্দিষ্ট 'ড্রেস কোড' বা পোশাক বিধি মেনে চলে, এবং বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে না থাকে। এক শিক্ষকের কথায়, "ছাত্রছাত্রীদের বলা হয়েছে প্রকাশ্য জমায়েত না করতে। এবং স্থানীয় বাসিন্দা বা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে তাদের বলা হয়েছে যেন পার্কিং আইন না ভাঙে বা ধূমপান না করে।"