বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল পাকিস্তানের অন্যতম শহর লাহোর। লাহোরের দাতা দরবার নামের এক সুফি উপাসনা গৃহের বাইরে সকাল ৮.৪৫ নাগাদ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয় জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন পুলিশকর্মী। বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও অনেকে জখম হয়েছেন বলে খবর। পাঞ্জাবের আইন মন্ত্রী বাশারত রাজা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
বিস্ফোরণের খবর সংবাদ সংস্থা এপি-কে জানিয়েছে পাকিস্তানের পুলিশ। বিস্ফোরণে জখমদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘ডন’ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি তালিবানের একটি গোষ্ঠী। হিজবুল আহরার জঙ্গি গোষ্ঠীর মুখপাত্র আব্দুল আজিজ ইউসফজাইয়ের বক্তব্য, "হামলার সময় পুলিশের কাছাকাছি কোনও সাধারণ নাগরিক ছিলেন না।"
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বিস্ফোরণ, নিহত কমপক্ষে ১৬
লাহোর পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীদের নিশানা করা হয়েছিল। বিস্ফোরণের সময় সুফি সৌধের ভিতরে ও বাইরে প্রচুর মানুষ ছিলেন। বিস্ফোরণের জেরে পুলিশের গাড়ি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে ছবি ধরা পড়েছে টিভি ফুটেজে। এই ছবি দেখেই মনে করা হচ্ছে যে, পুলিশকেই টার্গেট করা হয়েছিল। এ ঘটনা প্রসঙ্গে পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র নায়েব হায়দার জানিয়েছেন, পুলিশ আধিকারিক-সহ অনেকে জখম হয়েছেন।
এছাড়াও পাঞ্জাব পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল আরিফ নওয়াজ জানিয়েছেন, ঘটনাটি একটি আত্মঘাতী হামলা, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল এলিট ফোর্সের একটি গাড়ি, যা দাঁড় করানো থাকে সুফি সন্ত আলি হজবারির দরগার সামনে। এই দরগাটিকেই লোকমুখে দাতা দরবার বলা হয়। নওয়াজ জানান, ওই গাড়ির কাছাকাছি এসে নিজেকে উড়িয়ে দেয় আত্মঘাতী বোমারু, যার ফলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পাঁচজন পুলিশকর্মী, গুরুতর আহত হন আরও চারজন। মৃতদের মধ্যে একজন নিরাপত্তা রক্ষী এবং দুজন সাধারণ নাগরিক রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
মেয়ো হসপিটালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট ইয়ার মুহম্মদ বলেছেন মৃতের সংখ্যা আপাতত নয়জন। "আমরা ন'টি দেহ পেয়েছি, যার মধ্যে পুলিশকর্মীও রয়েছেন। ছ'জন আহতের অবস্থা সঙ্কটজনক, এবং ডাক্তাররা তাঁদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।"
অন্যদিকে, রেডিও পাকিস্তান জানাচ্ছে যে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লাহোর বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা করে কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন। ইমরান খান শোকার্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন হামলায় আহতদের সেরা চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়।
বিস্ফোরণের পর থেকে দাতা দরবারের প্রবেশপথ সিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী এই দরগায় আসেন। এর আগে ২০১০ সালে এই দরগায় আরও একটি আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যার পর কড়া পাহারা বসে এই তীর্থস্থানে।
আরও উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসেই পাকিস্তানের কোয়েটা জেলায় হাজারগঞ্জি এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যু হয়।
Read the full story in English