লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় আসামে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে এবং কিছু সংগঠন মঙ্গলবার রাজ্যব্যাপী বনধও পালন করছে। তবে রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় এর প্রভাব কম দেখা গিয়েছে। উপত্যকার মূল শহর শিলচরে জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। তবে শহরের বাইরে মূলত মুসলমান এবং পাহাড়ি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় জোরালো প্রতিবাদ চোখে পড়েছে। কাছাড় জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৭০ জন বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছেন। হাইলাকান্দিতে ৮০ জন এবং করিমগঞ্জে ৫০ জন বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ-সহ অনেকেই।
এদিন সকালে বনধের কোনও লক্ষ্মণ টের পাওয়া যায়নি এবং জনজীবন স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়। তবে বেলা বাড়তেই কিছু কিছু এলাকায় প্রতিবাদ শুরু হতে দেখা যায়। শিলচর শহর সংলগ্ন রংপুর, বাশকান্দি, লক্ষ্মীপুর ইত্যাদি এলাকায় মণিপুরী, ডিমাসা-সহ বিভিন্ন জনজাতির বসবাস রয়েছে। এসব এলাকায় ক্যাব বিরোধী আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। মঙ্গলবার বনধকে সামনে রেখে এলাকাগুলোয় তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলা হয়। কেউ কেউ রাস্তা আটক টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন। এদিকে শিলচর সংলগ্ন সোনাই এলাকায় একইভাবে ক্যাব বিরোধী আন্দোলন চোখে পড়ে। সোনাই বিধানসভা সমষ্টিতে মুসলমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। বিজেপি সরকারের একমাত্র মুসলমান বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর এই সমষ্টি থেকে আসেন। বিধায়ক সরাসরি নাগরিকত্ব বিলের সমর্থনে মাঠে নামলেও জনমনে প্রবল রোষ রয়েছে। এর প্রতিফলন মঙ্গলবারের বনধে দেখা গেছে। এই সমষ্টির বিভিন্ন এলাকায় এদিন টায়ার জ্বালানো, রাস্তা অবরোধ বা বিরোধী স্লোগান চোখে পড়ে। তবে বিশাল পুলিশ ও সেনাবাহিনী ব্যবহার করে সড়ক অবরোধ এবং প্রতিবাদগুলো আটকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা হয়। আসাম ইন্ডিজিনিয়াস পিপলস প্রটেকশন কমিটির সভাপতি হেরাজিৎ সিংহের নেতৃত্বে কাছাড়ের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্যাব বিরোধী আন্দোলন চলে আসছে। তাদের আন্দোলন থেকেই একসময় ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া ওয়েলকাম চায়না’ স্লোগান উঠেছিল। মঙ্গলবার সকালে বাশকান্দি এলাকা থেকে হেরাজিৎ সিংহ-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে বিজেপির শরিক দল অসম গণপরিষদের সদস্য কাছাড়ে বিল বিরোধী আন্দোলনে শামিল হন।
আরও পড়ুন: ক্যাবের প্রতিবাদে দেশের উত্তর-পূর্বে বনধ, বিপর্যস্ত জনজীবন

সংগঠনের আরেক সদস্য সহদেব রাজবংশী বলেন, এই আন্দোলন শুধুমাত্র আজকেই শেষ হয়ে যাবে না। আমরা প্রত্যেক মানুষের কাছে বিরোধী মনোভাব পৌঁছে দেব। আমরা সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েছি এই বিল পাস করবেন না, তবু তারা আমাদের কথা অপেক্ষা করে এটি চালু করতে চাইছেন। আমরা আজ এই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, এখনও যদি আপনারা পিছপা না হন, তাহলে রাজ্যের প্রত্যেক ব্যক্তি আপনাদের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলবে।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার মুগ্ধজ্যোতি দেবমহন্ত জানিয়েছেন, বনধের নামে অশান্তি ছড়ানোয় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন, আসু এবং বিজেপির শরিকদল অসম গণপরিষদের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: ক্যাব পাশ হলে নিজেকে মুসলিম ঘোষণা করবেন সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার
এদিকে হাইলাকান্দি জেলায় বনধের প্রভাব দেখা গেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্ধের ফলে জনজীবন স্তব্ধ ছিল। সরকারি কার্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বনধের প্রভাব পড়েছে। প্রায় ৮০ জন বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছেন। সীমান্ত জেলা করিমগঞ্জেও বন্ধের প্রভাব হাইলাকান্দির মতোই দেখা গেছে। প্রাক্তন বিধায়ক আহমেদের নেতৃত্বে এদিন জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ প্রদর্শন হয়েছে। সেখানেও অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন।
সাধারণ জনজীবনে বনধের প্রভাব যাতে না পড়ে তার জন্য আগে থেকেই বেশ কয়েকটি সংগঠন এগিয়ে এসেছিল। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় ডাকা বনধ মানবে না বলে জানিয়েছিল শিলচর ফুড গ্রেইন্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-সহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংস্থা। সোমবার তাঁরা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় কেউ বনধ মানলেও তাঁরা এর তীব্র বিরোধিতা করে সমস্ত দোকানপাট খোলা রাখবেন। পাশাপাশি বরাক উপত্যকার প্রত্যেক মানুষকে বনধের তীব্র বিরোধিতা করার জন্য আহ্বান জানান তাঁরা। মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দীপক পাল এদিন বলেন, ‘‘শিলচর মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-সহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এর তীব্র বিরোধিতা করবে’’। মঙ্গলবার শিলচর শহরের মূল ব্যবসায়ী এলাকা ফটকবাজারে একদল যুবক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের কথায়, অনেকেই দোকানপাট বন্ধ রাখেন তবে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের তৎপরতায় সেগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়। সাধারণ বাজার এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বনধের খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি এদিন।