বহুরকম শাখাপ্রশাখা বিস্তারের পর সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ কাণ্ডে এফআইআর দায়ের করল খোদ সিবিআই। আস্থানা এখন সিবিআইয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে রয়েছেন। এফআইআরে নাম রয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা, RAW-এর কর্তা সামন্ত কুমার গোয়েলেরও, তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। গত মঙ্গলবারই সিবিআই এফআইআর দায়ের করেছে। মঈন কুরেশি দুর্নীতিকাণ্ডে গঠিত বিশেষ তদন্ত দলের দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ আস্থানা। সেই তদন্তের সময়েই এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আস্থানা ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, সিবিআই-এর তরফে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে টেলিফোনের কথোপকথন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, টাকাপয়সার গতিবিধি এবং একটি বিবৃতি পেশ করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে রাকেশ আস্থানাকে করা মেসেজের উত্তর মেলেনি। গত ২১ সেপ্টেম্বর সিবিআই সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে জানিয়েছিল যে তারা আস্থানার বিরুদ্ধে ৬টি দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে। সিবিআই এও জানিয়েছিল যে রাকেশ আস্থানা সিবিআইয়ের শীর্ষপদাসীন অলোক ভার্মার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে চলেছেন এবং সিভিসি-র কাছে অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে অসার অভিযোগ জানিয়ে চলেছেন।
আরও পড়ুন, সিবিআইয়ের ২ নং কর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত! নজরে পলাতক ব্যবসায়ী
সিভিসি-র কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের দ্বারস্থ হন রাকেশ আস্থানা। তিনি সরকারকে চিঠি লিখে জানান যে সিবিআই ডিরেক্টর তাঁর কাজে বাধা দিচ্ছেন, তদন্তে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন এবং তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন।
হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ী সানা সতীশের অভিযোগের ভিত্তিতে দুবাইবাসী এক এজেন্ট মনোজ প্রসাদকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এর পরেই আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর করে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। কুরেশি দুর্নীতি মামলায় সানা সতীশের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়েছিল। প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সানা সতীশের বাড়িতে হানা দেয় আয়কর দফতর। কুরেশির ব্ল্যাকবেরি ফোন থেকে পাওয়া (বিবিএম) মেসেজের জেরে ইউপিএসসি-র সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর এ পি সিং।
তিন বছর পর, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিবিআই একটি মামলা দায়ের করে। আস্থানার নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত দল যে মামালগুলির তদন্ত করছিল এটি তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন, বিজয় মালিয়াকে আটকানোর দরকার নেই, লিখিত ভাবে জানিয়েছিল সিবিআই
গত ৪ অক্টোবর সতীশ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দেওয়া বয়ানে আস্থানা, প্রসাদ এবং প্রসাদের আত্মীয় সোমেশ শ্রীবাস্তবের নাম করে বিস্তারিতভাবে জানান যে সিবিআই মামলার আওতার বাইরে থাকার জন্য তিনি ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে খেপে খেপে মোট ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন। সতীশের অভিযোগ সিবিআই আধিকারিকরা আরও টাকা দেওয়ার জন্য তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন। মনোজ প্রসাদের নির্দেশ মতো বিশেষ তদন্তদলের জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গত ৯ অক্টোবর তিনি ২৫ লক্ষ টাকা দেন বলে অভিযোগ। এর পর তিনি দুবাই থেকে দিল্লি আসেন ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা তুলতে, তখনই সিবিআই তাঁকে আটক করে।
এফআইআরে বলা হয়েছে RAW-এর দুনং কর্তা গোয়েল মনোজ এবং সোমেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, সিবিআই তাঁকে অভিযুক্ত না করলেও এ মামলায় তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।