সিবিআই ডিরেক্টরের অপসারণ কি আইনসিদ্ধ, তারকা খচিত সুপ্রিম সওয়ালে প্রশ্ন অমীমাংসিত

অ্যাটর্নি জেনারেল কে.কে. বেণুগোপাল বলেন, সিবিআই ডিরেক্টার পদের নিয়োগকর্তা কেন্দ্রীয় সরকার। 'সিলেকশন কমিটি' এবং নিয়োগকারী সংস্থা এক নয়। 'সিলেকশন কমিটি' কেবল নাম প্রস্তাব করে। এরপর কেন্দ্র নিয়োগ করে।

অ্যাটর্নি জেনারেল কে.কে. বেণুগোপাল বলেন, সিবিআই ডিরেক্টার পদের নিয়োগকর্তা কেন্দ্রীয় সরকার। 'সিলেকশন কমিটি' এবং নিয়োগকারী সংস্থা এক নয়। 'সিলেকশন কমিটি' কেবল নাম প্রস্তাব করে। এরপর কেন্দ্র নিয়োগ করে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভার্মা আদালতকে জানান, তাঁকে দুই বছরের নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য ওই পদে (সিবিআই ডিরেক্টর) নিয়োগ করা হয়েছিল এবং এর মধ্যে তাঁকে বদলি করা যায় না।

সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করে ছুটিতে পাঠানোর কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অলোক ভার্মা। এরপর সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)-কে ভার্মার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতে সিভিসি-র সেই রিপোর্ট জমা পড়ার পর সে বিষয়ে ভার্মার জবাবও নথিভূক্ত করেছে আদালত। এরপর সেই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এজলাস ছিল কার্যত আইন জগতের তারকা খচিত।

Advertisment

সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে অলোক ভার্মাকে অপসারিত করার কেন্দ্রীয় নির্দেশ কি আদৌ আইনসিদ্ধ, মূলত এই প্রশ্নেই আইনের নানা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরলেন দেশের প্রথম সারির আইনজ্ঞরা। তাঁদের সওয়াল ও প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের প্রশ্নে এদিনের এজলাসে তৈরি হয়েছে একাধিক নাটকীয় মুহূর্ত। এই 'কোর্টরুম ড্রামায়' কে, কী যুক্তি ও প্রতিযুক্তি তুলে ধরলেন, জেনে নিন-

অলোক ভার্মা ও ফলি এস নরিম্যান

Advertisment

ভার্মা আদালতকে জানান, তাঁকে দুই বছরের নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য ওই পদে (সিবিআই ডিরেক্টর) নিয়োগ করা হয়েছিল এবং এর মধ্যে তাঁকে বদলি করা যায় না। এরপরই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস.কে. কাউল এবং বিচারপতি কে.এম. জোসেফের ডিভিশন বেঞ্চকে ভার্মার আইনজীবী ফলি এস নরিম্যান বলেন, ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মক্কেল সিবিআই ডিরেক্টরের পদে বসেন এবং "আইন অনুযায়ী ২ বছরের আগে তাঁকে ওই পদ থেকে সরানো যায় না"।

আরও পড়ুন- কংগ্রেস যুব সভাপতি পদে সোমেনপুত্র রোহনের হারের আড়ালে কে?

প্রবীণ আইনজ্ঞ নরিম্যান আরও বলেন, "বিণীত নারিন রায়ের একটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ব্যখ্যা থাকা প্রয়োজন। না হলে, নারিন রায় বা আইনের কোনও দরকারই নেই। এ ক্ষেত্রে ভার্মাকে বদলি করা হয়নি, বরং তাঁর সব ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।"

বিণীত নারিন রায় কী?

উচ্চ পদস্থ সরকারি আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের ক্ষেত্রে বিণীত নারিন বিচারের প্রসঙ্গ চলে আসে। ১৯৯৭ সালের আগে সিবিআই প্রধানের পদে আসীন থাকার কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। এর ফলে সরকার যে কোনও সময় সিবিআই ডিরেক্টরকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারত। কিন্তু, বিণীত নারিন রায়ে বলা হয়, সিবিআই-এর শীর্ষ পদে নিয়োগের পর অন্তত দুই বছর বাধ্যতামুলকভাবে পদে থাকবেন একজন আইপিএস অফিসার। এরফলে পদ হারানোর ভয় গ্রাস করবে না ওই অফিসারকে এবং তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। এদিন সুপ্রিম কোর্টে সেই বিণীত নারিন রায়ের কথাই উল্লেখ করেন ফলি নরিম্যান।

বিণীত নারিন রায়ের পাশাপাশি, সিবিআই ডিরেক্টরের নিয়োগ ও অপসারণের শর্তাবলী এবং দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট'১৯৪৬-এর একাধিক অনুচ্ছেদও তুলে ধরেন আইনজীবী নরিম্যান।

ভার্মার জবাব কেন মিডিয়ায় ফাঁস হল?

সিভিসি-র পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে ভার্মার জবাব কেন মিডিয়ায় ফাঁস হল, এই প্রশ্ন তুলে এর আগের দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল প্রধানবিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত বলেছিল, এই বিচারপ্রার্থীরা আদপে কেউ বিচার পাওয়ার যোগ্যই নয়। সেদিন প্রধান বিচারপতির ক্ষোভের মুখে পড়ে কার্যত চুপ করে গেলেও, এদিন এই বিষয়ে মুখ খোলেন পোড় খাওয়া আইনজীবী ফলি নরিম্যান। এদিন তিনি বলেন, সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হলফনামার বিষয়বস্তু প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেতে পারে না আদালত। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতেরই ২০১২ সালের একটি রায়ের উল্লেখ করেছেন নরিম্যান। এরপর তিনি বলেন, আদালত অবশ্য নিষেধ করলে, তা নিশ্চিতভাবে মানা হত।

আরও পড়ুন- সিঙ্গুর থেকেই লাল পতাকার মিছিল, আজ গন্তব্য রাজভবন

সিবালের সওয়াল

লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের হয়ে সওয়াল করতে উঠে আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল বলেন, সিবিআই প্রধানকে নিয়োগের ক্ষমতা যখন 'সিলেকশন কমিটির হাতে', তাহলে অপসারণের ক্ষমতাও কেবল তাদেরই। উল্লেখ্য, সিবিআই ডিরেক্টরের 'সিলেকশন কমিটি'তে থাকেন প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা। প্রসঙ্গত, সিবিআই প্রধানের পদ থেকে ভার্মাকে সরিয়ে মোদী সরকার সিবিআই আইন ভঙ্গ করেছে বলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন খাড়গে। সিবাল আরও বলেন, সিভিসি আইনের ৮(১)(এ)(বি) ধারা অনুযায়ী, এই সংস্থা কোনও ভাবেই সিবিআই ডিরেক্টরকে পদ থেকে সরানোর সুপারিশ করতে পারে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল কে.কে. বেণুগোপালের সওয়াল

কেন্দ্রের হয়ে সওয়াল করতে নেমে অ্যাটর্নি জেনারেল (এজি) তথা দেশের অন্যতম বর্ষীয়ান আইনজীবী কে.কে. বেণুগোপাল বলেন, সিবিআই ডিরেক্টার পদের নিয়োগকর্তা কেন্দ্রীয় সরকার। 'সিলেকশন কমিটি' এবং নিয়োগকারী সংস্থা এক নয়। 'সিলেকশন কমিটি' কেবল নাম প্রস্তাব করে। এরপর কেন্দ্র নিয়োগ করে। ফলে, অপসারণ করার ক্ষমতাও নিয়োগকারী হিসাবে কেন্দ্রের হাতেই। এরপরই প্রধানবিচারপতি জানতে চান, "প্রশাসন এবং দেখভালের দায়িত্ব যখন কেন্দ্রীয় সরকারের, তাহলে সিভিসি কীভাবে অপসারণের সুপারিশ করে"? এর উত্তরে এজি বলেন, ভার্মাকে বদলি করে দেওয়া হয়নি, বরং তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। এরপরই দিল্লি স্পেশাল পুলিশ অ্যাক্ট বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে এজি জানানা, সিভিসি এবং কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রক যৌথভাবে সব সরকারি আধিকারিকদের উপর নজরদারি চালায়। সব শেষে তিনি বেলন, "আজ পর্যন্ত সিবিআই ডিরেক্টর পদের মর্যাদা এবং যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন ভার্মা"।

আরও পড়ুন-সিংহের আক্রমণে মৃত্যু, গির অরণ্যে পর্যটক প্রবেশ নিষেধ

এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৫ ডিসেম্বর।

উল্লেখ্য, সিবিআই-এর তৎকালীন স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এফআইআর করেন অলোক ভার্মা। এরপর ভার্মার বিরুদ্ধে মাংস ব্যবসায়ী মঈন কুরেশির থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনেন আস্থানা। সিবিআই-এর দুই শীর্ষ কর্তার এহেন দ্বন্দ্ব চরমে উঠতেই ২৩ অক্টোবর মধ্য রাতে এক নির্দেশিকা জারি করে দুই অফিসারকেই পদ থেকে সরিয়ে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সিবিআই প্রধানের দায়িত্ব পান এম নাগেশ্বর রাও।

Read the full story in English

cbi