নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় যখন উত্তাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সেই সময়ে এই ইস্যু নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল বাংলাদেশ। নাগরিকপঞ্জি যে একান্তই ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, এমনটাই জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী। তবে যেভাবে দেশে উত্তেজনার পরিস্থিতি ছড়াচ্ছে তাতে চিন্তিত পড়শি দেশ, এমন মন্তব্যই করেন হাসিনার দেশের মন্ত্রী। এদিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জ্বলছে যোগীরাজ্যে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রতিনিধিদল পাঠানো হচ্ছে তৃণমূলের তরফে। কিন্তু রবিবার নাগরিকত্ব বিরোধী সংশোধনী আইনে বিক্ষোভে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের প্রতিনিধি দলের দেখা করার অনুমতি দিল না উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। রবিবার একটি বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানালেন উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি ওপি সিং।
Read the full story in English
বিক্ষোভকারী-পুলিশ সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এই প্রেক্ষাপটে যোগী রাজ্যে দলের প্রতিনিধিদের পাঠায় তৃণমূল। দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে রবিবার লখনউ যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বিমানবন্দরেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার পার্ক সার্কাস ময়দানের সভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের সবাই যদি এক হয়ে লড়ে, তাহলে কী করবেন? কত খেলা দেখাবেন? কত গুলি চালাবেন? কত জেলে ভরবেন? দেশে খালি বিজেপি থাকবে, আর কেউ থাকবে না, এটা হতে পারে না’’। পাশাপাশি যোগী আদিত্যনাথকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘ওকে সিএম বলতে শেম (লজ্জা) লাগছে’’। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল প্রতিনিধি দলের উত্তরপ্রদেশ সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল।
Live Blog
Citizenship Act protests Live Updates, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় সরব দেশের সব প্রান্ত, সব খবরের লাইভ আপডেট দেখুন, Follow the Live Updates here:
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের পর থেকেই দেশজুড়ে দ্বেষের চিত্র। জামিয়া মিলিয়া-আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অত্যাচার সেই আগুনেই ঘৃতাহুতি দিয়েছে। সোচ্চার হয়েছে দেশের বিদ্বজ্জন থেকে ছাত্রছাত্রী, রাজনীতিকরা। আটক হয়েছেন কয়েক হাজার।
যে তিনটি দেশের নির্দিষ্ট ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্বের ব্যাপারে নয়া নাগরিকত্ব আইনে বিশেষ সুবিধা দেবার কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সংবিধানের ২৬ নং অনুচ্ছেদের মতই বাংলাদেশের সংবিধানে ৪১(বি) অনুচ্ছেদে সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতে সরকারি খরচে বা পৃষ্ঠপোষকতায় চলা কোনও প্রতিষ্ঠানে কোনও নির্দেশ দেওয়া যায় না, বাংলাদেশে কিন্তু নিজে ধর্ম সম্পর্কে ধর্মীয় নির্দেশ দেওয়া যায়। বাংলাদেশ নিজে কীভাবে নাগরিকত্ব দেয় এবং তাদের সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতা কীভাবে দেওয়া রয়েছে, তা একবার দেখে নেওয়া যাক। পড়ুন- বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন ও ইসলাম ধর্ম
ঢাকায় সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, "সিএবি (বর্তমানে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন) এবং এনআরসি (নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধক) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকার বারবার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে এগুলি তাঁদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও আইনি বিষয়। সেই কারণে তাঁরা এটি করছে।”
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় যখন উত্তাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সেই সময়ে এই ইস্যু নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল বাংলাদেশ। নাগরিকপঞ্জি যে একান্তই ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, এমনটাই জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী। তবে যেভাবে দেশে উত্তেজনার পরিস্থিতি ছড়াচ্ছে তাতে চিন্তিত পড়শি দেশ, এমন মন্তব্যই করেন হাসিনার দেশের মন্ত্রী। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চলতি বছরের জুলাই মাসেই এনআরসির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ১৩ জুলাই বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোমেন বলেছিলেন, “আমরা নিজেরাই প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কঠিন সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের পক্ষে আর কাউকে (উদ্বাস্তু) নেওয়া সম্ভব নয়। এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনবহুল দেশ বাংলাদেশ।”
উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি বলেছেন, 'আমরা জানতে পেরেছি যে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু রাজনৈতিক নেতা এখানে (লখনউ) সফর করতে চান। যেহেতু এখানে ১৪৪ ধারা আরোপিত করা হয়েছে তাই এমতো পরিস্থিতিতে আমরা তাঁদের অনুমতি দিতে পারি না। ওঁরা আসলে পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত হতে পারে।'