Advertisment

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে রায় লোকসভায়

অধীর চৌধুরী বলেন, 'প্রশাসন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মুসলমানদের নিশানা করছে।' বিরোধীদের উদ্দেশ্য শাহ বলেন, 'আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব। কিন্তু আপনারা ওয়াকআউট করবেন না।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে রায় দিল লোকসভা। ২৯৩-৮২ ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে গেল ক্যাব।

Advertisment

publive-image লোকসভায় পাস হল নাগরিকত্ব সমশোধনাী বিল।

এদিন শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি পেশ করেন। বিলটি সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে নয় বলে এদিন স্পষ্ট করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯-এর বিরুদ্ধে সরব বিরোধী শিবির। এই বিলকে বিজেপির 'বিভাজনের রাজনীতির' কৌশল বলে তোপ দেগেছে বিরোধিরা। এদিনও শুরু থেকেই কংগ্রেস সহ বিরোধিরা বিলের বিপক্ষে সোচ্চার হয়। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, 'প্রশাসন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মুসলমানদের নিশানা করছে।' চেঁচামেচির মধ্যেই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে অমিত শাহ বলেন, 'আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব। কিন্তু আপনারা ওয়াকআউট করবেন না।'

বিলের বিরোধিতায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, '৩৭০ ধারা বিলোপের সময় বলা হয়েছিল এক দেশ-এক সংবিধান। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ত্রিপুরার অনেক জায়গাকে অন্তর্ভক্ত করা হয়নি। এই বিল বিভাজনের উদ্দেশ্য করা হচ্ছে, যা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী।'

'আজ আমাদের কেন বিল প্রয়োজন হচ্ছে? কারণ স্বাধীনতার পর ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না করলে আজ আমাদের এই বিল আনতে হত না। কংগ্রেস আসলে দেশভাগ করেছিল ধর্মের ভিত্তিতে।' বলেন অমিত শাহ।

গত বুধবারই প্রস্তাবিত বিলটিকে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। লোকসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতার বিচারে এই বিল পাশ করাতে বিজেপিকে বেগ পেতে হল না । তবে, রাজ্যসভায় ক্যাব পাস করানোই গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। রাজ্যসভায় এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। যদিও এবার রাজ্যসভায় বিল পাশ করাতে মরিয়া বিজেপি। এক্ষেত্রে ফ্লোর ম্যানেজমেন্টের দিকে নজর দিয়েছেন মোদী-শাহরা। তারা মনে করছেন বেশ কিছু দল সভায় উপস্থিত না থেকে পদ্ম শিবিরের সুবিধা করে দিতে পারে।

আগামী ১১ই ডিসেম্বর সরকারপক্ষ এই বিল রাজ্যসভায় পেশ করতে পারে। উল্লেখ্য, ১৩-ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। চলতি অধিবেশনেই সংসদে ক্যাব পাস করাতে মরিয়া কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি।

আরও পড়ুন: অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মণিপুরের ইনার লাইন পারমিট ভুক্ত এলাকায় লাগু হবে না ক্যাব

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি। উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে এই বিলের ফলে বহুসংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টে যাবে জনবিন্যাসের ধরন, কাজের সুযোগ কমবে, এবং নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রীর সঙ্গে প্রস্তাবিত ক্যাব নিয়ে আলোচনা করেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী সহ উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা। সেখানেই ইনার লাইন পারমিট বৃদ্ধি বা রাজ্যগুলিতে প্রবেশ ও প্রস্থানের ক্ষেত্র পুনর্গঠনের কথা বলা হয়। ক্যাবের ফলে সেই ওইসব রাজ্যের ক্ষতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন অমিত শাহ। এমনটাই দাবি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের।

publive-image

ইতিমধ্যেই তাদের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির কথা মাথায় রেখে বিলে সামান্য রদবদল করা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করেছে, তাতে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের ইনার লাইন পারমিটভুক্ত এলাকা এবং উত্তর পূর্বের ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকাগুলিকে বাদ রাখা হয়েছে। এর অর্থ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের আওতায় যাঁরা ভারতীয় নাগরিক হবেন, তাঁরা অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের বাসিন্দা হতে পারবেন না। ইতিমধ্যেই যাঁরা ভারতীয় নাগরিক, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই বিধিনিষেধ লাগু হবে। একই সঙ্গে আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার বড় অংশ ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত হবার কারণে এই বিলের আওতা থেকে বাদ থাকবে।

কী রয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী ২০১৯ বিলে...

নাগরিকত্ব বিলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টান অবৈধ অভিবাসীদের যাতে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া যায়, সে কারণেই এই সংশোধনী। বর্তমান আইনে কোনও অভিবাসী ১২ মাস টানা ভারতে বাস করার পর, এবং বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে বাস করার পর নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারেন। এই সংশোধনী অনুসারে, উক্ত তিনটি দেশ থেকে আসা ওই নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ১১ বছরের সময়সীমা কমিয়ে ৫ বছর করবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: রাস্তায় দাঁড়িয়ে এনআরসি সমর্থন করব, সকলকে নাগরিকত্ব দিন: মমতা

লোকসভায় এ বিল প্রথমবার পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়। ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় সরকার সংযত হয় এবং ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি। সংসদের কার্য প্রণালী অনুসারে লোকসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্য সভায় পেশ না হলে তামাদি হয়ে যায়। সে নিয়ম অনুসারে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিলটি খারিজ হয়ে যায়।

এ বিল নিয়ে প্রধান আপত্তির বিষয় হল এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী। তবে সরকারের বক্তব্য, মুসলিম প্রধান বিদেশে যেসব সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে হিংসার শিকার হন তাঁদের নাগরিকত্বদানই এ বিলের লক্ষ্য।

Read the full story in English

Citizenship Bill amit shah nrc
Advertisment