'বৈষম্যমূলক', নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া রাষ্ট্রসংঘের
ইতিমধ্যেই এই আইন ঘিরে আশান্তি ছড়িয়েছে উত্তর পূর্ব ভারতে। যার জেরে ভারতে ঘুরতে আসা তাদের পর্যটকদের উদ্দেশ্যে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ইতিমধ্যেই এই আইন ঘিরে আশান্তি ছড়িয়েছে উত্তর পূর্ব ভারতে। যার জেরে ভারতে ঘুরতে আসা তাদের পর্যটকদের উদ্দেশ্যে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে সোচ্চার উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি।
এবার 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রসংঘ। নতুন আইনকে মৌলিকভাবে 'বৈষম্যমূলক' বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠনের মানবাধিকার দফতর। 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯'-এ ভারতীয় সংবিধানের 'সমানাধিকারের প্রতিশ্রুতি' খুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই আইন ঘিরে আশান্তি ছড়িয়েছে উত্তর পূর্ব ভারতে। যার জেরে ভারতে ঘুরতে আসা তাদের পর্যটকদের উদ্দেশ্যে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। সাময়িকভাবে আসামে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। ভারতের সংবাদ মাধ্যম নজরে রেখে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে পর্যটকদের ঘোরাফেরার নির্দেশ দিয়েছে ব্রিটেন।
Advertisment
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্রের তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত নাগরিকদের সমানাধিকার ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারত নাগরিকদের সমানাধিকার রক্ষা করবে বলে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার কনভেনশন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সাক্ষর করেছিল। কিন্তু, 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯'-এ সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার দফতর। জেনেভায় অ্যান্তোনিও গুতেরেসের অতিরিক্ত মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। গোটা দেশে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টির উপর নজর রাখা হয়েছে। এই আইনের ফলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের স্বার্থ সুরক্ষিত নয়।
আগামী ১৮ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেদেশের বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও এবং প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এসপারের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন রাজনাথ ও জয়শঙ্কর। তার আগে ভারতের নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথেষ্ট তাৎপবাহী বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আনুষ্ঠানিকভাবে এপ্রসঙ্গে দিল্লি কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও মোদী প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে সূত্রের খবর।
এর আগে সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পরই ‘ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনে’র অভিযোগে মার্কিন সরকারের কাছে অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ জানায় মার্কিন কমিশন। লোকসভায় ক্যাব পাসের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউএসসিআইআরএফের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, “ক্যাবের মাধ্যমে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু ধর্মের উপর ভিত্তি করেই আইনি যোগ্যতামান নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে মুসলিমদের এই ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। ক্যাব আদতে ভুল পথে এগনোর জন্য এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ। ভারতের যে ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী সুমহান অতীত রয়েছে, এই বিল তার পরিপন্থী। ধর্মীয় বিশ্বাসের উর্ধে উঠে সমানাধিকারের যে দর্শন ভারতীয় সংবিধান সুনিশ্চিত করেছে, এই বিল সেদিক থেকেও বিপরীতধর্মী।”
এর জবাব দিতে দেরি করেনি নয়াদিল্লি। ‘সঠিকও নয়, শংসায়িতও নয়’, মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) মন্তব্যর কয়েক ঘন্টা কাটতে না কাটতেই অমিত শাহের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মন্তব্যর জবাব দেয় ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেন, “ইউএসসিআইআরএফের যে অবস্থান তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যে বিষয়ে কমিশনের জ্ঞান সীমিত এবং হস্তক্ষেপের কোনও আধিকার নেই, সেই বিষয়ে কমিশনের এমন পক্ষপাতদুষ্ট মন্তব্য দুঃখজনক। নাগরিকপঞ্জি কিংবা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কখনই ভারতীয়দের থেকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না।”