আবারও বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। কলেজিয়াম পদ্ধতিতেই বিচারপতিদের ‘পদোন্নতি’ বা নিয়োগপর্ব করা হয়। সেই কলেজিয়াম নিয়েই এবার বিচারপতিদের ঘরে অসন্তোষ তৈরি হল। দুই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টে ‘পদোন্নতি’র প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে নতুন দুই নাম প্রস্তাব করেছে কলেজিয়াম। গত ১০ জানুয়ারি কলেজিয়ামের এহেন সিদ্ধান্তে যারপরনাই ক্ষুব্ধ চার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
রাজস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ ও দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মেননের পদন্নোতি থমকে গিয়েছে গত ১০ জানুয়ারির কলেজিয়াম সিদ্ধান্তে। তাঁদের পরিবর্তে কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী ও দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার পদোন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কলেজিয়াম। উল্লেখ্য, শীর্ষ আদালতে নন্দরাজোগ ও মেননের পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল ১২ ডিসেম্বরের কলেজিয়াম।
আরও পড়ুন, ডিজিপি নিয়োগের প্যানেল তৈরি? ইউপিএসসি সচিবকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
কলেজিয়ামের এহেন সিদ্ধান্তে ক্ষোভপ্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি লিখেছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কৈলাশ গম্ভীর। বিশেষত সঞ্জীব খন্নার পদোন্নতির বিষয়টি ‘অপমানজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন কৈলাশ। একইসঙ্গে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, ৩২ জন বিচারপতিকে যেভাবে সরানো হয়েছে, তা একরকমের ‘ধ্বংসাত্মক’ সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্তে বিচারপতিদের যোগ্যতা, সততার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। বিচারব্যবস্থায় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অটুট রাখারও আর্জি রাষ্ট্রপতির কাছে করেছেন ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
গত মঙ্গলবার বিচারপতি জে চেলামেশ্বর ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘‘কিছুই বদলায়নি।’’ উল্লেখ্য, এক বছর আগে বিচারপতি চেলামেশ্বরের সরকারি বাসভবনেই সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন ৪ জন কলেজিয়াম বিচারপতি। যাঁদের মধ্যে ছিলেন দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি চেলামেশ্বর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘‘একারণেই ২০১৬ সালের কলেজিয়াম বৈঠকে যোগ দিতে রাজি ছিলাম না। সেসময় আমায় আইনজ্ঞরা বলেছিলেন যে, আমার ইস্তফা দেওয়া উচিত ও মুখ খোলা দরকার। এখন আমি অবসর গ্রহণ করেছি, এখন কি বলতে পারি?’’
এদিকে, এ ঘটনায় দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোধা বলেছেন, কলেজিয়াম একটা প্রতিষ্ঠান। নিজ সিদ্ধান্তেই এর কাজ করা উচিত। কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে যুক্তি দিয়ে আলোচনা করা দরকার। শুধুমাত্র একজন বিচারপতি অবসর নিয়েছেন, যদি আলোচনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ করা দরকার। লোধা আরও বলেছেন, ‘‘স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কলেজিয়ামের কাজ করা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটা খুব অদ্ভুত যে, সরানোর ৬ সপ্তাহ পর বিচারপতি মাহেশ্বরীর নাম প্রস্তাব করা হল। সেসময় বিচারপতি নন্দরাজোগের নাম প্রস্তাবিত ছিল পরে তা তুলে নেওয়া হল। যদি আলোচনায় কোনও খামিতি থেকে থাকে। তাহলে সেটা পুরোদমে করা দরকার।’’
দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ বলেছেন, কলেজিয়াম যেভাবে কাজ করছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেছেন, ‘‘ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে কী এমন ঘটল?’’ তাঁর মতে, নিজের ইচ্ছে মতো কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই কলেজিয়াম এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। শাহ বলেছেন, ‘‘আমি বিচারপতি নন্দরাজোগের সঙ্গে কাজ করেছি। উনি খুব ভাল বিচারপতি। কেন বিচারপতি মেননকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বদলানো হল, তা রহস্যজনক। এতে গোটা সিস্টেমের উপর একটা খারাপ প্রভাব পড়বে।’’
Read the full story in English