লাইসেন্স ছিল না চালকের। রাজপথে তরুণী খুনে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে এই ঘটনায় আরও ২ ব্যক্তির যোগ রয়েছে। তারা হলেন, গাড়ির মালিক আশুতোষ এবং এক অভিভুক্তের ভাই অঙ্কুশ খান্না যিনি প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন।
দিল্লির পথ দুর্ঘটনায় তরুণীর মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন তথ্য। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লি পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ আসামিকে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার নিহত তরুণীর ময়নাতদন্তের রিপোর্টও সামনে এসেছে।
নববর্ষের উৎসবের মাঝে এক নির্মম দুর্ঘটনা। দিল্লির রাস্তায় এক মহিলার নৃশংস মৃত্যু। শনিবার গভীর রাতে স্কুটি নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই মহিলা। একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে স্কুটির। দুর্ঘটনার পর মহিলার পোশাক জড়িয়ে যায় গাড়িটির চাকার সঙ্গে। কয়েক কিলোমিটার এভাবেই মহিলাটিকে টানতে টানতে নিয়ে যায় ওই গাড়ি। যার ফলে তাঁর শরীর থেকে জামা-কাপড় ছিঁড়তে থাকে। দুর্ঘটনাগ্রস্থ স্থানের বেশ অনেকটা দূর থেকে মহিলার নগ্ন দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাড়িতে সেই সময় পাঁচজন আরোহী ছিলেন। পাঁচ আরোহীকেই আটক করেছে পুলিশ।
ময়নাতদন্তে নিহত তরুণীর মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ, স্কুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরেও ওই তরুণীকে কোনও রকম সাহায্য না করেই প্রায় চার কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে দিয়ে যায় অভিযুক্তরা। দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কানঝাওয়ালা-সুলতানপুরীর অই ঘটনায় তোলপাড় রাজধানী। দিল্লির এল জিভি কে সাক্সেনা টুইটে তিনি লিখেছেন, “কানঝাওলা-সুলতানপুরীর অমানবিক অপরাধের ঘটনায় লজ্জায় মাথা ঝুঁকে গিয়েছে। অভিযুক্তদের অসংবেদনশীল ব্যবহারে মর্মাহত। দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
রবিবার রাতে দুর্ঘটনায় নিহত তরুণীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এসেছে। রিপোর্টে যৌন হয়রানির কোন প্রমান মেলেনি। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজে মৃত তরুণীর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে বলা হয়েছে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ মাথা, মেরুদণ্ড, সঙ্গে সেহের একাধিক অঙ্গে আঘাত এবং অধিক রক্তক্ষরণ। রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি নির্যাতিতার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়ের সুবিচার নিশ্চিত করেছেন। মায়ের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যায়ভার বহন করবে দিল্লি সরকার। পাশাপাশি নিহতের পরিবারকে দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: < পিষে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল আধ কিলোমিটার পথ, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ডেলিভারি বয়ের >
তদন্তে জানা গেছে, নির্যাতিতা তরুণী একা নয়, তার সঙ্গে দুর্ঘটনার সময় ছিলেন তার এক বন্ধুও, তিনি ঘটনার পর ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন বলেই পুলিশ জানতে পারে। ইতিমধ্যেই তার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ পুলিশ কমিশনার (আইন শৃঙ্খলা) সাগর প্রীত হুডা বলেছেন যে ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন, যিনি ঘটনার সময় মেয়েটির সঙ্গেই ছিলেন। তিনি জানান, ফৌজদারি আইনের ১৬৪ ধারা অনুসারে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে, সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লি পুলিশের কাছে এই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। দিল্লি পুলিশ বিশেষ কমিশনার শালিনী সিংয়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আম আদমি পার্টির (আপ) বিধায়কদের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরার সঙ্গে দেখা করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন।