সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে চলছে করোনা টিকাদান। এবার তাতে যুক্ত হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সীরাও। ১৬ মার্চ থেকে থেকে ১২ থেকে ১৪ বছরের শিশুদেরও টিকা দেওয়া শুরু হতে যাচ্ছে। 'বাচ্চারা সুরক্ষিত তো দেশ সুরক্ষিত' স্লোগান দিয়ে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া টুইট করেছেন এবং আবেদন করেছেন যে সমস্ত অভিভাবকদের অবশ্যই তাদের বাচ্চাদের টিকা দেওয়াতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের বায়োলজিক্যাল-ই এর ভ্যাকসিন Corbevax দেওয়া হবে। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ ২৮ দিনের ব্যবধানে দেওয়া হবে, অর্থাৎ দুটি ডোজের মধ্যে ২৮ দিনের ব্যবধান থাকবে। সোমবার এই নির্দেশিকা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে পাঠানো হয়েছে। এই হিসাবে, দেশে ১২ এবং ১৩ বছর বয়সী ৭.৭৪ কোটি শিশু রয়েছে। টিকা দেওয়ার জন্য, CoWIN অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে।
বুধবারই বায়োলজিক্যাল ই. লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহিমা দাতলা বলেছেন, “তাদের তৈরি কর্বিভ্যাক্স ভ্যাকসিন ভারতের তৃতীয় দেশীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, এটি সম্পূর্ণ রূপে নিরাপদ এবং অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় ভাল ইমিউনোজেনিসিটি এবং উচ্চ অ্যান্টিবডি গঠনে সাহায্য করে”।
ওমিক্রনের বিরুদ্ধে এই ভ্যকসিন কতটা কার্যকারী এই প্রশ্নের উত্তরে দাতলা বলেন, “এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। এর উত্তর এখনই আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, মূলত ডেল্টা ভ্যরিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই টিকা। যখন এটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে তখন ওমিক্রন বিস্তার লাভ করে”। তাই এই মুহূর্তে এটা বলা কঠিন যে এই টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা সুরক্ষা দেবে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, কোনও পরিসংখ্যানগত মডেল বা "পর্যাপ্ত ডেটা" না থাকায় এটি "নির্ধারণ করা কঠিন"। এদিকে ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে এই টিকা ব্যবহারে সম্মতি দেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে সেখানকার ওয়ার্কিং গ্রুপের একজন সদস্য বলেছেন যে 'ওমিক্রনে আক্রান্ত কোন শিশুর শরীরে এই টিকা কতটা প্রভাব ফেলে বা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কোন তথ্য সামনে আনা হয়নি। তাই তারা এই মুহূর্তে শিশুদের এই টিকা দেবে না'।
আরো পড়ুন : শুরু হল ১২-১৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ, জেনে নিন কী কী নিয়ম মানতে হবে
এদিকে বায়োলজিক্যাল ই. লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহিমা দাতলা বলেন, অন্যান্য টিকার তুলনায় এই টিকার দাম অনেক কম। খোলা বাজারে এই টিকার দাম পড়বে ৯০০ টাকার কাছাকাছি। সেই সঙ্গে তিনি জানান, সরকারের কাছে আমরা প্রতি ডোজ ১৪৫ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছি’। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে সংস্থা এই মুহূর্তে প্রতি মাসে ১০০ মিলিয়ন ডোজ তৈরি করতে সক্ষম। বেশিরভাগ অভিভাবকই টিকার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন এবং খুশি যে তাদের সন্তানদের টিকা দেওয়া হবে।
এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে হায়দরাবাদের বায়োলজিক্যাল ই কোম্পানি। এই ভ্যাকসিনটি করোনা ভাইরাসের পৃষ্ঠে পাওয়া প্রোটিন থেকে তৈরি। স্পাইক প্রোটিন নিজেই ভাইরাসকে শরীরের কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এটি করোনার অন্যতম সস্তা ভ্যাকসিন। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, দেশে এখন পর্যন্ত ১৮০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়েছে, যার কারণে ৮১.৪ কোটি মানুষকে সম্পূর্ণ টিকা দেওয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে এমন সময়ে যখন বিজ্ঞানীরা জুনে করোনার নতুন চতুর্থ তরঙ্গের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাই এমন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের শিথিলতা অবলম্বন করা ঠিক হবে না। বিশ্বজুড়ে সমস্ত বিজ্ঞানী এবং ডাক্তাররা করোনা মোকাবেলায় শুধুমাত্র টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।