সোমবার গুজরাট থেকে খবর আসে আরও এক নভেল করোনাভাইরাস রোগীর মৃত্যুর। এই নিয়ে সেরাজ্যে মৃতের সংখ্যা হলো ছয়। এবং এই মুহূর্তে গুজরাটে করোনায় মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ, যা কিনা দেশে সর্বোচ্চ। তা সত্ত্বেও রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা এখনও বুঝতে পারছেন না, গুজরাটে করোনা আক্রান্তদের অনেকের মধ্যেই ঠিক কীভাবে সংক্রমণ ছড়াল।
স্থানীয় প্রশাসনও জানিয়েছে, অন্তত ১০ জন আক্রান্তের ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস এখনও জানা যায় নি। যে ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সকলেরই অন্যান্য গুরুতর রোগ ছিল, যেমন আহমেদাবাদের ৪৬ বছরের এক মহিলা, যিনি লাং ফাইব্রোসিস-এ ভুগছিলেন, বা গোমতীপুরের ৪৭ বছর বয়সী এক বাসিন্দা, যিনি ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। কিন্তু এঁদের দুজনের কারোর ক্ষেত্রেই সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়া যায় নি, জানাচ্ছেন আহমেদাবাদ পুরসভার ডেপুটি মিউনিসিপাল কমিশনার ওমপ্রকাশ মাচরা। তিনি আরও বলেন, আহমেদাবাদের এক ৫৯ বছরের ডাক্তারের ক্ষেত্রেও সংক্রমণের উৎস এখনও অজানা, যদিও ডাক্তার হিসেবে তিনি নিজের অজ্ঞাতেই কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন: পোশাক থেকেও কি করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে?
ভাবনগর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পাঁচজন আক্রান্তের সংক্রমণের উৎস অজানা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ৪৫ বছরের এক মৃতা রোগী। এ পর্যন্ত ভাবনগরে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ভাবনগরের মিউনিসিপাল কমিশনার এম এ গান্ধী বলেন, "এগুলি সম্ভবত গোষ্ঠী সংক্রমণের উদাহরণ, কারণ আক্রান্তদের বিদেশ সফরের কোনও ইতিহাস নেই।"
এছাড়াও ভাবনগর পুরসভার মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আর কে সিনহা আমাদের জানান, উপরোক্ত ব্যক্তিরা কেউই এর আগে COVID-19 আক্রান্ত হয়ে মৃত এক ৭০ বছরের বৃদ্ধের সম্প্রদায়ের সদস্য নন। সিনহা বলেন, চারজনের মধ্যে তিনজন ওই বৃদ্ধের বাড়ির তিন কিমি-র মধ্যে বাস করেন, চতুর্থ জন থাকেন আরও একটু দূরে। "আমাদের কর্মীরা খতিয়ে দেখছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কিছুই আমরা পাই নি, যার ফলে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে এই চারজনের যোগসূত্র স্থাপন করা যায়। সেই কারণেই আমরা গোষ্ঠী সংক্রমণ সন্দেহ করছি।"
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর আহমেদাবাদের ২৩ জন আক্রান্তের সাতজনকে "স্থানীয় সংক্রমণ" হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। তবে এই সাতজনের মধ্যে অন্তত তিনজনের সংক্রমণের 'চেইন' এখনও অজানা।
আরও পড়ুন: অসমে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলল
একই চিত্র রাজকোটে, যেখানে সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০। সেখানেও এক ৭৬ বছরের বৃদ্ধা এবং তাঁর পুত্রের সংক্রমণের উৎস অজানা। বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত ঘোষিত হন ২৪ মার্চ, তাঁর ৪৬ বছর বয়সী পুত্রের করোনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায় ২৫ মার্চ।
সুরাটের ইউনাইটেড গ্রিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৭ বছর বয়স্ক এক রোগী করোনা পজিটিভ ঘোষিত হন সোমবার। হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল ডেপুটি কমিশনার আশিস নায়েক বলেন, কোনোরকম বিদেশ সফরের ইতিহাস নেই একটি লন্ড্রির মালিক ওই ব্যক্তির। নায়েক বলেন, "আমরা ঠিক নিশ্চিত নই কীভাবে ওঁর সংক্রমণ হলো। এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি যে উনি নিয়ম করে মসজিদে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দোকানের কোনও কাস্টমারের দ্বারাও সংক্রামিত হয়ে থাকতে পারেন।"
গুজরাটে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩, পরীক্ষা হয়েছে প্রায় ১,৪০০ জনের। পড়শি রাজ্য মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ২২০, মৃত ১০। অর্থাৎ মৃত্যুর হার গুজরাটের অর্ধেকেরও কম। সোমবার পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে পরীক্ষা হয়েছিল আন্দাজ ৪,১০০ জনের।