প্রথম পর্যায়ের করোনায় যখন বিশ্বের একাধিক দেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, তখন ভারতের মত ১৪১ কোটির দেশ কিছুটা হলেও সামলে নিয়েছিল কোভিড-১৯। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাবল্য অনেক অনেক বেশি। এতটা আশা করেনি ভারতও। আনলকের পর থেকে শিথিল হয়েছিল কোভিড বিধি। মাস্ক বিধি থেকে সামাজিক দূরত্ব সব নিয়ম উঠেছিল শিকেয়। অতএব এক অনাকাঙ্ক্ষিত আবহে এখন দেশ। যেখানে দৈনিক আক্রান্ত এদিন ২ লক্ষ ৭০ হাজারেরও বেশি। মৃত্যু ১৬০০।
কোভিড এখন আগের থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। ব্রিটেন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কোভিড স্ট্রেনের মিলিত দাপটে ধরাশায়ী হতে হচ্ছে ভারতকে। বর্তমানে ভারতের যা পরিস্থিতি, কোনও দেশের তেমন অবস্থা নয়। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে বেডের হাহাকার, অক্সিজেন, জীবনদায়ী ওষুধ রেমডেসেভিরের আকাল। একাধিক বৈঠক হচ্ছে কেন্দ্রের রাজ্যে মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে। সমাধান সূত্র অধরা।
আরও পড়ুন, দিল্লিতে আজ রাত থেকে লকডাউন, জারি আগামী সোমবার পর্যন্ত, ঘোষণা কেজরিওয়ালের
বিশেষজ্ঞদের মতে ভুল প্রত্যেকের। যখন থেকে নিম্মমুখী হয়েছিল করোনাভাইরাস তখন থেকেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলেছিল উৎসব, উদযাপন, খাওয়াদাওয়া, পার্টি। করোনা ম্যাজিক নয়। আজ নেই মানে কোনওদিন থাকবে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও একাধিকবার সাবধান করেছিল। তবু সতর্ক হয়নি জনসাধারণ। ফলস্বরূপ পূর্ণ তেজে ফের হাজির সারস-কোভ-২। টিকাকরণ চলছে। কিন্তু লাভের লাভ হচ্ছে কি?
এ প্রশ্নের উত্তর এখনও জানা যায়নি। তবে সেরোসার্ভের রিপোর্ট বলছে এখনও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুই হয়নি। যা হচ্ছে তা ওই 'ট্রেলার'। এর অর্থ 'পিকচার আভি বাকি হ্যায়'। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বায়োটেকনোলজির প্রাক্তন ডিরেক্টর বীরেন্দ্র সিং চৌহান বলেন, "নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ক্রমশ সুস্থ হচ্ছিল ভারত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ফের সেই ঝড়ে পড়তে হল। সবাই ভেবেছে করোনা ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। যা সংক্রামক ব্যধি তা আসলে এত সহজে শেষ হয়না। আমাদের মধ্যেই থেকে যায়। যা করেছি গত কয়েকমাসে তার খেসারত দিতে হবে।"
আরও পড়ুন, ‘সম্পূর্ণ লকডাউন হবে না’, উদ্বিগ্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের আশ্বাস নির্মলার
সেরোসার্ভের রিপোর্ট থেকে এটা স্পষ্ট যে সংক্রমণের প্রাবল্যর তুলনায় মৃত্যু হার কম। কিন্তু তা নগণ্য নয়। শ্মশান, কবর, মর্গ চিত্র বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে। অপর চিন্তা হল এবারে সংক্রমণ শিশু, যুবা, বয়স্ক কারোওকেই বাদ রাখছে না। বয়সের বিভেদ না মেনেই করোনা হানা দিচ্ছে সকলের শরীরে।
ভাল নেই কোনও রাজ্য। মহারাষ্ট্র, কেরালা, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, করোনা ঝড়ে টালমাটাল প্রত্যেকেই। কোভিড ঢেউ এর ট্রেলারে যদি এমন হয় তাহলে বাকি পিকচার কতটা ভয়াবহ ত্তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। দিল্লিতে সোমবার থেকেই জারি হল এক সপ্তাহের লকডাউন। মহারাষ্ট্রে চলছে করোনা কার্ফু। প্রতিটি রাজ্যই নিজেদের মতো করে সুরক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু শ্মশানের চিতায় চিন্তা ভস্মীভূত হচ্ছে না, অক্সিজেন না পেয়ে মৃত রোগীর শেষ নিঃশ্বাসে বাতাস বদ্ধ হচ্ছে। এবার পালা নিয়ম মানার ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন