নভেল করোনাভাইরাস ও কোভিড ১৯ রোগের ব্যাপের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরও টেস্টের নীতি ভারত এখনও গ্রহণ করেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ভারতের প্রতিনিধি ডক্টর হেঙ্ক বেকেদাম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বললেন ভারত ব্যাপক ও বলিষ্ঠ কাজ করেছে। সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত রূপ:
কোভিড ১৯-এর ব্যাপারে ভারতের প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত কেমন?
ভারতের প্রতিক্রিয়া ব্যাপক, বলিষ্ঠ। প্রথম থেকে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে, যা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সহ উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
যথেচ্ছ ভাবে পরীক্ষা শুরু করা উচিত, বলছেন করোনাভাইরাস বিশেষজ্ঞ
সংক্রমণ আটকাতে ব্যাপক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে নজরদারি বাড়ানো, ল্যাবরেটরির সংখ্যাবৃদ্ধি, সংক্রমতিকে চিহ্নিত করা এবং আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া।
করোনাতঙ্কে পর্যটকদের জন্য বন্ধ দার্জিলিং
স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব নিয়মতি রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন... সমস্ত রাজ্যগুলিকে ক্রিয়াশীল রেখেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতর সক্রিয় - যাকে আমরা সম্পূর্ণ সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি বলতে পারি। এই পর্যায়ে বড়সড় প্রাদুর্ভাবের জন্য সকলে ভালভাবে তৈরি।
ভারতের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা খুব কম এবং আমরা বেশ কিছু কেস মিসও করতে পারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর এমনটাই বলেছেন। আপনার কী মত?
ভারতের টেস্টিং বাড়ানোর দরকার, ভারত ঠিক পথে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হল, মাঝ-ফেব্রুয়ারি থেকে নজরদারি ব্যবস্থায় যাঁদের প্রবল শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাঁদের পরীক্ষা করার কাজ চলছে, সে তাঁরা ভ্রমণ করুন কি না করুন, সংস্পর্শে আসুন বা না-আসুন। কিছু নেতিবাচক ফল এসে গিয়েছে, এ সপ্তাহের শেষে আরও ফল বেরোবে।
দুটো ব্যাপার রয়েছে,- ক্ষমতা বাড়ানো, সুযোগ বাড়ানো। আমি যা বুঝছি তাতে ভারত সুযোগ বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে যাঁদের নিউমোনিয়া বিরল তাঁদেরও পরীক্ষা করা। এ শিক্ষা ২০০৩ সালের সার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতার দিক থেকে দেখলে সরকার ইতিমধ্যেই তা বাড়িয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে প্রভূত পরীক্ষা হচ্ছে। আইসিএনআর সেগুলি দেখছে। একবার সেগুলি সম্পর্কে নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও টেস্টের পরিমাণ বাড়বে।
লকডাউন ও টেস্ট, এ দুয়ের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানো আটকাতে কোনটা বেশি কার্যকর?
যে কোনও প্রাদুর্ভাব আটকাতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ। আমরা এখনও আশা করছি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ভারত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং সারা বিশ্বের কাছ থেকে তাদের শেখার সুযোগও রয়েছে। প্রতিষেধক হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এই কৌশলের কার্যকরী প্রয়োগ ভাইরাস ছড়ানো নিয়ন্ত্রণ করা অনেক দূর পর্যন্ত সম্ভব হবে, এর সঙ্গে থাকবে হাত ধোয়া এবং বিধি মোতাবেক হাঁচি-কাশি। আমরা আশা করছি, এই পদক্ষেপের ফলে পরিসংখ্যান বদলাবে। হুবেইয়ের বাইরে বাকি চিনে এই কৌশল কাজে দিয়েছে।
এর মধ্যে যেন দাঁতে ব্যথা না হয়
১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নিশ্চিত সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেও তাকে আটকে রাখার কৌশলই মুখ্য। সব রাজ্যই এই কৌশল নিচ্ছে। ভারত যে কাজ সবচেয়ে ভালভাবে করেছে তা হল চিহ্নিতকরণ ও আইসোলেশন। হাজারো লোককে ট্র্যাক করা হয়েছে, পৃথক করা হয়েছে এবং প্রয়োজন মত পরীক্ষা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে টেস্টের খরচ কমানো বা দ্রুত টেস্ট করানোর কোনও ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে?
আমি যতটুকু জানি, ভারতে বিনা খরচে টেস্ট করা হচ্ছে। এটা একটা নতুন ভাইরাস। ফলে আমাদের নতুন পরীক্ষা, ওষুধ এবং ভ্যাকসিন তৈরি করতে হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় টেস্টের সময় কমিয়ে ৪-৫ ঘণ্টায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরিতে সময় লাগবে।
অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও অন্যান্য কয়েকটি দেশে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। যা জনসাধারণের ব্যবহার করতে আরও অন্তত এক বছর সময় লাগবে।
এখন আইসিএমআর ভাইরাস পৃথক করতে পেরেছে। ভারত যে ভাবে ভ্যাকসিন ও ডায়াগনোস্টিকের ব্যাপারে গবেষণা করতে যাচ্ছে তাতে আমি খুবই উত্তেজিত।
মনে রাখতে হবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী যথাযথ না থাকলে গলার সোয়াবের নিয়মাবলী অতীব ঝুঁকির। সার্সের সময়ে আমি আমার এক সহকর্মীকে হারিয়েছি। সোয়াব সংগ্রহের সময়ে ডাক্তারদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
সারা পৃথিবীর সাপেক্ষে এর কোনও শেষ এখনও দেখা যাচ্ছে কি?
আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিবকে এ ব্যাপারে উদ্ধৃত করতে চাই। এটা হল প্রথম অতিমারী যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। সিঙ্গাপুর, চিন ও দক্ষিণ কোরিয়া ভাল উদাহরণ তৈরি করেছে। আমি এই বলে শেষ করব যে চলুন একসঙ্গে কাজ করি এবং এই নয়া রোগ প্রতিরোধে আমাদের কর্তব্য করি।