তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের দুটি এলাকায় করোনাভাইরাসে মৃত ৫৫ বছরের এক নিউরো-সার্জেনের দেহ কবরস্থ করতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনকি মারধর পর্যন্ত করা হলো স্বাস্থ্যকর্মীদের।
চেন্নাইয়ের কিলপক এলাকার একটি জনপ্রিয় মেডিক্যাল সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওই চিকিৎসক রবিবার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিলপকের টিপি চাত্রাম গোরস্থানে তাঁর দেহ কবরস্থ করতে গেলে করোনাভাইরাস ছড়াবে, এই অজুহাতে হাসপাতালের কর্মীদের বাধা দেন স্থানীয়রা। পুলিশি হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও নিজেদের জেদ ছাড়েন না তাঁরা।
আরও পড়ুন- পুলিশ যখন সান্তা ক্লজ, চার বছরের খুদের মুখে হাসি ফোটাতে যা করলেন….
এরপর রাত ১২.১৫ নাগাদ দেহ নিয়ে আন্না নগরের কাছে ভেলাঙ্গাড়ু গোরস্থানে যান হাসপাতাল কর্মীরা, কিন্তু একইরকম ভাবে বাধা দেন সেখানকার স্থানীয়রাও। গোরস্থানের নিকটবর্তী একটি হাউজিং বোর্ডের প্রায় ৫০ জন সদস্যের সঙ্গে উত্তপ্ত বচসায় জড়িয়ে পড়েন হাসপাতালের কর্মীরা। বচসা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রমণ করে উত্তেজিত জনতা, এবং অ্যাম্বুল্যান্স-এর সামনের কাচ ভেঙে দেয়। মাথায় আঘাত পান অ্যাম্বুল্যান্স-এর চালক ও আরও একজন স্বাস্থ্যকর্মী। বাধ্য হয়েই দেহ নিয়ে হাসপাতালের মর্গে ফিরে যান তাঁরা। আহত দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে চেন্নাইয়ের কেএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অবশেষে রাত ১.৪০ নাগাদ মৃত ডাক্তারের এক সহকর্মী পুলিশ এবং হাসপাতাল ওয়ার্ডের সদস্যদের সাহায্যে ভেলাঙ্গাড়ু গোরস্থানেই কবরস্থ করেন তাঁর দেহ।
তামিলনাড়ু গভর্নমেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ডাঃ এন রবিশঙ্কর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ওই নিউরো-সার্জেনের দেহ কবরস্থ করতে বাধা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা করছে অ্যাসোসিয়েশন। তিনি বলেন যে এই নিয়ে তামিলনাড়ুতে এই ধরনের তৃতীয় ঘটনা ঘটল। "লজ্জাজনক ঘটনা। কিছু উটকো লোক তাঁকে সম্মানের সঙ্গে কবর দিতে দিল না। সরকারের উচিত, যারা এই নির্মম হামলা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে জনসাধারণকে কড়া বার্তা পাঠানো। এদের বিরুদ্ধে গুণ্ডা আইনের আওতায় অভিযোগ দায়ের করা উচিত," বলেন তিনি।
আরও পড়ুন- ছুটি শেষে কাজে যোগদানের আগে কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে সেনাকর্মীদের
রবিশঙ্কর আরও বলেন, "এই একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কোয়েম্বাটোরের সিরুমুগাইতে, একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক ডাক্তারের ক্ষেত্রে। এক সপ্তাহ আগে চেন্নাইতেই আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। তামিলনাড়ু সরকারের উচিত এই ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি জারি করা। এই ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, এবং ঘটলে কিন্তু করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্যরা নিজেদের সুরক্ষার কথা ভাবতে বাধ্য হবেন।"
আন্না নগর পুলিশ জানাচ্ছে, হাসপাতালের কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালানো, অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙচুর করা, এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ১৮৮ (সরকারি কর্মচারী দ্বারা জারি করা যথাবিহিত নির্দেশ অমান্য করা), ৩২৪ (বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায় দ্বারা ইচ্ছাকৃত আঘাত করা), ১৪৭ (দাঙ্গা করা), এবং ৩৪১ (অন্যায়ভাবে আটক করা) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন