দেশের ৬ রাজ্য ও ৯ শহরে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে করোনা। ঘোর দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এই রাজ্য ও জেলাগুলিতে সপ্তাহব্যাপী করোনার সংক্রমণ ও পজিটিভিটি রেট পর্যালোচনা করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তারই ভিত্তিতে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু সহ ৯টি শহরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অতিমারীর পরিস্থিতিতে বড়সড় বদল চোখে পড়ছে, এমনই মনে করেন জাতীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের প্রধান চিকিৎসক ভিকে পল। গত চার দিন দেশের একাধিক রাজ্যে যেভাবে করোনায় সংক্রিমের সংখ্যা বেড়েছে তাতে নতুন বছরের শুরুতে ''উচ্চতর সতর্কতা" জারির আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্র। দেশের একাধিক রাজ্য ও বেশ কিছু শহরে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে করোনা ও তার নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন।
জাতীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের প্রধান চিকিৎসক ভিকে পল বলেন, ''দেশব্যাপী প্রায় ৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন। গতকাল ১৩ হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হলেন। স্পষ্টতই করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যার এই বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। বেশ কয়েকটি রাজ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তবে এখনও অবধি, মৃত্যু স্থিতিশীল। দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩০০-র নীচে থাকছে। এটাই এখনও পর্যন্ত আশ্বস্ত করছে।''
তিনি আরও বলেন, ''ওমিক্রনের জন্যই সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্তিভাবে বেড়ে চলেছে। ভাইরাসের এই প্রজাতি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে আশা করা যায় ওই প্রজাতির ভাইরাসের তীব্রতা হালকা। তবে এখনই এটা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এটা বেড়েই চলেছে।''
এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রক আপাতত দেশের ৬টি রাজ্যকে চিহ্নিত করেছে। এই রাজ্যগুলিতে ১৭-২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৪-৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ কত বেড়েছে তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সাপ্তাহিক কেস এবং পজিটিভিটি রেটের তুলনার ভিত্তিতে ৬টি রাজ্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
*মহারাষ্ট্রে এক সপ্তাহে ১৩ হাজার ২০০টি নতুন কেস মিলেছে। সংক্রমণ এক সপ্তাহে ১১৭% বেড়েছে। পজিটিভিটি রেট ০.৯২% থেকে বেড়ে ২.৫৯%-এ পৌঁছেছে।
*দিল্লিতে এক সপ্তাহে ২ হাজার ৫৮৭টি নতুন কেস মিলেছে। সংক্রমণ বেড়েছে ২৯০%। পজিটিভিটি রেট ০.২% থেকে বেড়ে ১%-এ পৌঁছেছে।
*গুজরাতে এক সপ্তাহে ১ হাজার ৭১১টি নতুন কেস মিলেছে। ২৪৫% পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে সংক্রমণ। পজিটিভিটি রেট ০.১৯% থেকে বেড়ে হয়েছে ০.৫৪%।
*স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১৮.৪৯ % বেড়ে নতুন করে ৪ হাজার ৪৪২ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। কর্নাটকে এক সপ্তাহে ২৫৩৩ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। তামিলনাড়ুতে ২.৩৫ শতাংশ হারে সংক্রমণ বেড়ে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ছে ৪ হাজার ৩৮৩।
এছাড়াও কেন্দ্রের নজরে রয়েছে ৯টি জেলা। ওই জেলাগুলিতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমিতের যা সংখ্যা ছিল পরবর্তী এক সপ্তাহে তা যেভাবে বেড়েছে তা নিয়ে উদ্বেগে কেন্দ্র। কেন্দ্রের ডেটা অনুযায়ী এক সপ্তাহে বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে ২৩২% সংক্রমণ বেড়েছে। ২০৪৪ থেকে সংক্রমিতের সংখ্যা এক সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে ৬৭৮৭। পুণেতে ১৫৫৪ থেকে বেড়ে ২০৭৬। থানেতে ৯১৩ থেকে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ২০৩৩। বেঙ্গালুরুতে ১৪৪৫ থেকে বেড়ে ১৯০২। চেন্নাইয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা ১০৩৯ থেকে বেড়ে ১৭২০। মুম্বই শহরতলী এলাকায় ৫২১ থেকে বেড়ে ১৬৭০। গুরগাঁওতে ১৯৪ থেকে বেড়ে ৭৩৮। আহমেদাবাদে ২০৭ থেকে বেড়ে ৬৩৫। নাসিকে ৩৩৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮৩।
আরও পড়ুন- গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা! বাংলায় দুই হাজার পেরলো দৈনিক করোনা আক্রান্ত, কলকাতারই ৫০%
দেশের এই ৬ রাজ্য ও ৯ শহরে এক সপ্তাহের মধ্যে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বেড়েছে তা নিয়ে চূড়ান্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে জাতীয় কোভিড টাস্কের প্রধান ভিকে পল জানান, আতঙ্ক নয় প্রত্যেককে করোনা বিধি মেনে চলার ব্যাপের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ''আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। আমরা প্রস্তুত, আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের টিকাদানের খুব উচ্চ কভারেজের বিশাল হাতিয়ার রয়েছে। তবে দায়িত্বশীল হওয়া এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া দরকার। প্রত্যেককে অবশ্যই বিধিনিষেধ এবং নিয়ম মেনে চলতে হবে। সমস্ত ভ্যারিয়েন্ট একই রুট দিয়ে প্রবেশ করে এবং সেই রুটটি একটি মাস্ক পরে বন্ধ করা যেতে পারে। তাই মাস্ক, মাস্ক আর মাস্ক আজ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।''
Read full story in English