পয়গম্বরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন নূপুর শর্মা। তার মন্তব্যের জেরে একদিকে যখন উত্তাল দেশ। তখনই সামনে এসেছে ভয়াবহ সাইবার হামলার বিষয়টি। সম্প্রতি আহমেদাবাদ ক্রাইম বিভাগের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতি অনুসারে জানা গিয়েছে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার একদল মুসলিম হ্যাকার ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে। হ্যাক করা হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট।
একই সঙ্গে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার একদল মুসলিম হ্যাকার নুপূর শর্মার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করেছে ইন্টারনেটে। 'ড্রাগন ফোর্স মালয়েশিয়া' এবং 'হ্যাকটিভিস্ট ইন্দোনেশিয়া' এই দুটি হ্যাকার গ্রুপ এই কাজে জড়িত বলেই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের তরফে 'ড্রাগন ফোর্স মালয়েশিয়া' এবং 'হ্যাকটিভিস্ট ইন্দোনেশিয়া'র বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশের জন্য ইন্টারপোলকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া সরকারের কাছে এই দুটি হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পয়গম্বরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তাল সারা দেশ। যার আঁচ পড়়েছিল বাংলাতেও। হাওড়া সহ এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় হিংসা ছড়ায়। মহানবী নিয়ে নূপুরের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দেশের নানা প্রান্তে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। তাঁকে গ্রেফতারির দাবিতে হাওড়াতেও প্রবল বিক্ষোভ হয়। প্রায় সাড়ে ১১ ঘন্টা ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ ছিল। ভাঙচুর চলে। পর পর চারদিন ওই অবস্থা বজায় ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ সত্ত্বেও অবরোধ আন্দোলন বা হিংসার রাস্তা থেকে সরে আসেননি বিক্ষোভকারীরা। পরে কড়া অবস্থান নেয় প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মানুষের অসুবিধা করে আন্দোলনের বিপক্ষে মুখ খোলেন। জানান, হিংসা না করে নূপুরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে। কলকাতা পুলিশ পুলিশ সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে এফআইআর দায়ের হয়।
আরও পড়ুন: <মুর্মু হাতিয়ারেই বিজেপির বাজিমাত, ভেঙে চুরমার বিরোধী ঐক্য>
বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার পয়গম্বর মন্তব্যকে সমর্থন করায় উদয়পুরের কানহাইয়া লাল নামে দর্জিকে নৃশংস খুনের ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত। সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গোটা রাজস্থানে এক মাসের জন্য বিধিনিষেধ জারি করা হয়। পাশাপাশি অমারাবতীতেও খুন হতে হয় এক রসায়নবিদকে।
ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি নেত্রীর নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে একের পর এক দেশের তরফে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে আরব উপমহাদেশের একাধিক দেশের তরফে ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। দিকে দিকে প্রতিবাদ, বিক্ষোভের আঁচ। একাধিক রাজ্যে বিক্ষোভ চূড়ান্ত আকার নিয়েছে।
দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার গ্রেফতারের দাবি জানানর পাশাপাশি তার মৃত্যুদণ্ডের জন্যও সোচ্চার হয়েছেন। বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও। শুক্রবার, হাজার হাজার মানুষ নবী মহম্মদকে নিয়ে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হন। একই সঙ্গে ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নুপূর শর্মার এহেন মন্তব্যের জেরে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয় বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রীকে। শীর্ষ আদালত নূপুর শর্মাকে বলে, ‘দেশে যা যা ঘটছে তার জন্য একক ভাবে দায়ী’ তিনি। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়েছে, "টিভিতে এসে সারা দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত নূপুর শর্মার”।