প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সামনে আসার পর উঠে আসে একের পর এক গাফিলতির অভিযোগ। দিল্লির ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম হল না। দিল্লির বহুতলে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় ২৭ জনের। আহত কমপক্ষে ১২। গতকালের এই ঘটনার পর আজ সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশের পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যও ঘোষণা কেজরিওয়ালের।
এদিকে ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পশ্চিম দিল্লির যে বাণিজ্যিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে সেটিতে ছিলনা দমকলের কোন অনুমতি পত্র। এব্যাপারে ডিএফএস-এর প্রধান অতুল গর্গ জানিয়েছেন, “যে বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেটি কোন বৈধ অনুমতিপত্র ছিল না”।
আর এই অভিযোগ উঠে আসার পরেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে দেখা নিয়ে গভীর প্রশ্নচিহ্ন। পাশাপাশি দমকলের প্রধান বলেন, ওই ভবনের তরফে কখনও ফায়ার এনওসির জন্য আবেদনও করা হয়নি। প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা অনুসরণ না করেই কাজ চলছিল। ওই ভবনের দুই মালিক বরুণ গোয়েল এবং সতীশ গোয়েলকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশ, দমকল বিভাগ এবং এনডিআরএফের দল উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের ভিতর এখনও কেউ আটকে রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ভবন থেকে ৬০ থেকে ৭০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তল্লাশি ও উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। এই ঘটনার পর ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির পক্ষ থেকে একটি টুইট করা হয়েছে যাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় কী করা উচিৎ এবং কী করা উচিৎ নয় সে ব্যাপারে বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া শনিবার সকালে ঘুরে দেখেন ওই এলাকা। কথা বলেন স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন কেজরিওয়াল, আহতদের ৫০ হাজার টাকার সাহায্যের কথাও বলেন তিনি। এদিকে ২৭টি ঝলসে যাওয়া মৃতদেহের মধ্যে ৬ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য শুক্রবার বিকেল ৪.৪০ মিনিটে আগুন লাগে। ধাপে ধাপে দমকলের ৩০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ করতে থাকে। বিল্ডিংয়ের প্রথম তলা থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। একটি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং রাউটার প্রস্তুতকারী সংস্থার একটি অফিস থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ‘CBI ডাকলে কেন ওঁরা কোর্টে, হাসপাতালে যান, সেটা বোঝা যাচ্ছে’, SSC কাণ্ডে সোচ্চার দিলীপ
পুলিশ জানিয়েছে বহুতলটিতে সিসিটিভি, ওয়াইফাই রাউটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। দমকল আধিকারিকদের অনুমান, আগুন প্রথম তলা থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেখানে একটি জেনারেটর রাখা হয়েছিল। পরে প্রথম তলা থেকে আগুন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেই বহু মানুষ আটকে পড়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী গোবিন্দ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ”হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। একজন কর্মী জেনারেটর চেক করতে নীচে নেমে গেলেন। তিনিই দেখেন যে সেখানে আগুন লেগেছে। লোকজন পালানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেখানে কেবলমাত্র বেরনোর একটাই পথ ছিল। হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল।”
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পরে টুইটে মোদী লিখেছেন, ”দিল্লিতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। শোকাহত পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
Read story in English