"কহিলাম আমি, তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই/ চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই", দিল্লি হিংসায় মুমতাজের গলাতে ছিল এমনই সুর। কিন্তু হিংসা, আক্রমণকারীদের ছোঁড়া বোম, অ্যাসিড, ইটের আঘাতে সে সুর চাপা পড়ে গিয়েছিল। দিল্লি হিংসার সময় গড়িয়েছে, কিছুটা শান্ত শিব বিহার চত্বর। বছর চল্লিশের মুমতাজ বেগম যখন ফিরে আসলেন, দেখলেন অন্নসংস্থানের একমাত্র সম্বল যে দোকান, ক্ষোভের আগুনে অগ্নিদগ্ধ সেটিও। ধরে রাখতে পারলেন না চোখের জল। ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
ঘরহারাদের চোখের জলে ভাসছে শিব বিহার
ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ, লাঠি এবং রড নিয়ে যখন মুমতাজের বাড়িতে যখন হামলা চালাল আক্রমণকারীরা তখন কার্যত অসহায় হয়ে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না মুমতাজদের কাছে। দু:স্বপ্নের সুরে তিনি বলেন, "যখন আমাদের রাস্তায় পাথর ছোঁড়া শুরু হল তখন আমরা ছাদে বসে। আমাদের বাড়িকেও জ্বালিয়ে দিল ওরা। চারিদিকে তখন শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। আমরা কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। সেই সময় হঠাৎই অ্যাসিড ছুঁড়েছিল ওরা"। সেই অ্যাসিডে সারা শরীর জ্বলে গিয়েছে মুমতাজের স্বামী মহম্মদ ওয়াকিলের। লোক নায়েক জয় প্রকাশ হাসপাতালে এই মুহুর্তে চিকিৎসাধীন তিনি। হামলাকারীদের ছোঁড়া অ্যাসিডে দৃষ্টিহীন হতে চলেছে মুমতাজের কুড়ি বছরের ছেলে আনম।
আরও পড়ুন: দিল্লি হিংসায় নজিরবিহীন দৃশ্য! মসজিদ পাহারা দিলেন হিন্দুরা, মন্দির আগলে মুসলিমরা
সেদিনের হিংসা তাঁদের জীবনে অ্যাসিডের ক্ষতের চেয়েও অনেক বেশি। ভয়ঙ্কর সেই রাতের স্মৃতি উসকে শোকাতুর মুমতাজ বলে চলেন, "মাথা গুঁজতে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ওরা মসজিদেও আক্রমণ করল তখন একটাই প্রার্থনা করে গিয়েছি যদি বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারি, তবে যেন এই মসজিদের ধ্বংসাবশেষের নীচেই কবরে যেতে পারি। ওদের হাতে মরতে চাইনি।"
আরও পড়ুন: আমি দায়িত্বে থাকলে বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করতাম, বিস্ফোরক দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ প্রধান
দিল্লি হিংসার সেই অভিশপ্ত রাতের কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে যাচ্ছিল মুমতাজের। ধরা গলাতেই বলেন, "আমরা পুলিশকেও খবর দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্য করতে। আমরা দেখেছি পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে। পরে ভাবলাম ওদের কাছে সাহায্য চাওয়ার কোনও অর্থই হয় না।" প্রসঙ্গত শিব বিহার সেই এলাকা যেখানে দিল্লি হিংসার সবচেয়ে হিংসাত্মক স্মৃতি খোদাই করা থাকবে। প্রাণের ভয়ে এলাকা ছাড়া বাসিন্দারা আজ যখন ঘরে ফিরলেন দেখলেন সব লুট! আগুনে পুড়েছে মাথা গোঁজার শেষ সম্বল। "কোথায় যাব আমরা?" মুমতাজের প্রশ্ন এটাই, একটাই!
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন