তাপস দাশ
গত সোমবার দিলচাঁদ সিংয়ের হৃৎপিন্ড প্রতিস্থাপন হয়েছে। এতদিন বন্ধ ঘরের মধ্যে ছিলেন তিনি। এবার তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে সূর্যালোকিত ঘরে। প্রতিস্থাপনের জন্য চিকিৎসকদের যে টিম তৈরি হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন ডাক্তার তাপস রায়চৌধুরী। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ রোগীর পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। "ক্রমাগত কৃত্রিম আলোর মধ্যে থাকতে থাকতে রোগীর মধ্যে ডিজওরিয়েন্টেশনের সমস্যা ঘটতে পারে। দিন রাতের তফাৎ, সময়ের বদল, এসবের সঙ্গে রোগীকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্যই দিনের আলোর সঙ্গে তাকে নতুন করে পরিচয় করতে হয়। মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসে নতুন করে তাঁকে চিনতে হয় দিন-রাত্রিকে।"
কিন্তু সব মিলিয়ে কেমন আছেন ঝাড়খণ্ডের দিলচাঁদ?
"ভাল আছেন, তবে এবার শুরু দ্বিতীয় যুদ্ধ," বলছেন তাপসবাবু। "ডাক্তাররা তাঁদের কাজ করেছেন। এবার বাকিটা নির্ভর করছে রোগীর শরীর কী ভাবে নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, তার উপরেই। এ বিষয়টা চিকিৎসকদের হাতে নয়। রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, এবং একটা আশঙ্কা রয়েছে যে দিলচাঁদের শরীর নতুন হৃৎপিণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করবে। আশঙ্কা রয়েছে সংক্রমণেরও।"
ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, যে সফল প্রতিস্থাপনের পরেও গোটা ব্যাপারটার দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখছেন উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। "আগামী সাত দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গায় এসে আমরা ঈশ্বরের দিকে তাকিয়ে আছি," মন্তব্য তাপসবাবুর।
গত ২১ মে কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে ডাঃ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে ডাঃ এম কে মান্ধানাসহ সাত জন চিকিৎসকের একটি দল হার্ট প্রতিস্থাপন করেন ঝাড়খণ্ডের দিলচাঁদ সিংয়ের শরীরে। বেঙ্গালুরুতে ১৯ মে পথ দুর্ঘটনায় নিহত বরুণ ডি কে নামক এক ব্যক্তির হৃৎপিন্ড চার্টার্ড বিমানে করে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর পুলিশের সহায়তায় গ্রিন করিডোর তৈরি করে সেই হৃৎপিন্ড দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যায় ফর্টিস হাসপাতালে। দীর্ঘক্ষণের অপারেশনের পর হৃৎপিন্ড বসানো হয় দিলচাঁদের শরীরে। পূর্বভারতে এ ধরনের অপারেশন এই প্রথম বলে চিকিৎসকদের তরফে আগেই জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন, পূর্ব ভারতে প্রথম হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায়, গ্রিন করিডর বানিয়ে দিল পুলিশ
কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতালে হৃৎপিন্ড প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা এখনও নেই। তবে এ ধরনের অপারেশনের জন্য একাধিক সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, তাদের পরিকাঠামো প্রস্তুত। সরকারি হাসপাতালে এ ব্যবস্থা লাগু হলে নিখরচায় এ ধরনের অপারেশন করা যাবে। বেসরকারি হাসপাতালে হৃৎপিন্ড প্রতিস্থাপন করতে এখন খরচ পড়ে ১৮ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন, হার্ট প্রতিস্থাপনে প্রস্তুত সরকারি হাসপাতাল, প্রয়োজন শুধু অনুমতির