কোভিড যুদ্ধে করোনাভাইরাসের আসল রূপ হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন ভারতের গবেষকরা। অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল কোভিড-১৯ ভাইরাসের একটি স্ট্রেনের পরিচয়। সম্প্রতি ৩২৭টি জিনোম সিক্যুয়েন্স বা কাঠামো প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাসের এ২এ (A2a) সাবটাইপ নজর কেড়েছে বিজ্ঞানীদের। যে সাবটাইপটি এই মুহুর্তে গোটা বিশ্বে দাপট দেখাচ্ছে। কলকাতা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিকাল জিনোমিক্স (এনআইবিজি)-এর তরফে বলা হয়েছে যে এই তথ্য ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে এবং রোগ পর্যবেক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক খুলে দিয়েছে।
এনআইবিজি অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর নিধান বিশ্বাস বলেন, "২০ মে-র আগে যে তথ্য ছিল সেখানে দেখা যাচ্ছিল যে এই এ২এ (A2a)-এর লক্ষণ মূলত গুজরাট এবং পশ্চিমবঙ্গে ছিল। আর ও (O) সাবটাইপ দেখা গিয়েছিল তেলেঙ্গানা এবং তামিলনাড়ুতে। আর এ২এ (A2a) এবং ও (O) এই দু ধরণের সাবটাইপ দেখা গিয়েছিল দিল্লি এবং কর্ণাটকে।" তিনি বলেন, "লকডাউনের পর ভাইরাসের জিনোম সংক্রান্ত এই তথ্য সামনে আসায় এর সংক্রমণ পদ্ধতি আরও সূক্ষাতিসূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে।" নিধানবাবু বলেন যে ইতিমধ্যেই ও (O) সাবটাইপ দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। অর্থাৎ করোনা ছড়াচ্ছে।
কী এই জিনোম সিক্যুয়েন্স? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে?
চিন থেকে আসা সারস-কোভ ২ ভাইরাস আসলে ছিল আরএনএ (RNA) ভাইরাস। যা ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ এবং চরিত্র বদল করে যাচ্ছিল। এক এক দেশে তার রূপ, কাঠামো এক এক রকম। সেই ভিত্তিতে সংক্রমণের হারও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন। এই ভাইরাসের আসল কাঠামো কোনটা তা খুঁজতে ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৫৫টি দেশ থেকে ৩৬০০ নমুনা পাঠানো হয়েছে। ভারত পাঠিয়েছে ৩৫টি নমুনা। এর মধ্যে এই এ২এ (A2a) সাবটাইপটি রয়েছে সব দেশের নমুনাতেই।
আরও পড়ুন: মানব শরীরে সফলভাবে প্রয়োগ করোনা ভ্যাকসিন, সাফল্যের আশায় প্রহর গুনছে বিশ্ব
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিকাল জিনোমিক্স-এর আরেক প্রফেসর পার্থ মজুমদার বলেন যে এই সেই ভাইরাসের স্ট্রেন যা ফুসফুসে সহজেই প্রবেশ করছে এবং দেহে প্রভাব বিস্তার করেছে। আর এর জিনোমের কাঠামোর দৌলতে বিশ্বেও দাপট বজায় রাখছে কোভিড-১৯ ভাইরাস মধ্যস্থ এই সাবটাইপটি। তবে চিন্তার বিষয় ভারতে করোনা পরীক্ষার নমুনাতে এই এ২এ (A2a) সাবটাইপ রয়েছে সবচেয়ে বেশি (৪৮.৬%)। ও (O) সাবটাইপটি রয়েছে (৪২.৪%) এবং অন্যান্য (A3, B4, B, B1 এবং A1a) সাবটাইপগুলি রয়েছে ৯.২ শতাংশ।
কিন্তু ভারতে এই সাবটাইপ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা এবং ব্রিটেনের থেকে কম আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ব্রিটেনে রূপ এবং চরিত্র বদল করেছে এই ভাইরাসটি। যদিও তার মধ্যে এই সাবটাইপটি রয়েছে। কিন্তু তার ডিএনএ অথবা আরএনএ-তে বদল হয়েছে। আর তার ফলেই ওই দুই দেশে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই মারণ ভাইরাসটি।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের প্লাসেন্টায় তৈরি হচ্ছে ক্ষত, রিপোর্টে বাড়ছে উদ্বেগ
যদিও বিজ্ঞানীদের মতে এই তথ্য করোনা লড়াইয়ে অনেকটা সাহায্য করলেও এখনও এটিকে নিয়ে কোনও ক্লিনিকাল পরীক্ষা করা হয়নি। তাই এর চরিত্র বুঝে সেই মতো দাওয়াই বের করতে হয়তো আরও কিছুটা সময় লাগবে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন