বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের নিয়োগ সংক্রান্ত মূল ফাইল সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেছে কেন্দ্র। এর আগে বুধবার নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল পেশের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের জন্য প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের দাবির বিষয়টিও ক্রমশই জোরালো হচ্ছে। তিন দিন আগে ভারতের নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অরুণ গোয়েল। পাঞ্জাব ক্যাডারের প্রাক্তন আইএএস অফিসার গয়াল গত শুক্রবার শিল্প সচিবের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের নিয়োগের ফাইল দেখে কেন্দ্রকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের। আদালত কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছে - "১৫ মে থেকে পদটি খালি ছিল। হঠাৎ করে, ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে, নাম পাঠানো থেকে অনুমোদন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেল! ১৫ মে থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে কেন কোন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা গেল না?"
আদালত আরও বলেছে, "আইনমন্ত্রী ৪টি নাম পাঠিয়েছেন... কেন এই ৪টি নাম পাঠানো হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। তাহলে তাদের মধ্য থেকে 'জুনিয়র মোস্ট' আধিকারিককে কীভাবে বাছাই করা হল? সে বিষয়েও কেন্দ্রের কাছে প্রশ্ন করে শীর্ষ আদালত।একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল হয়নি। এর আগেও ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নজির রয়েছে'।
আরও পড়ুন: < কর্মী অসন্তোষের জের! বিরাট পদক্ষেপের ঘোষণা ফক্সকন টেকনোলজির >
আইএএস অরুণ গোয়েল ১৮ই নভেম্বর স্বচ্ছাবসর নেন এবং ১৯ নভেম্বর তাকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ একটি আবেদন করেন। ফাইলটি দেখার পরে, সংবিধান বেঞ্চ বলে "১৫ মে শূন্যপদ তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশন বিদ্যুৎ গতিতে অরুণ গোয়েলের ফাইল পেশ করে! এর কী মূল্যায়ন। আমরা অরুণ গোয়েলের প্রমাণপত্র নিয়ে প্রশ্ন করছি না, কিন্তু প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট।"
নির্বাচন কমিশনের নিয়োগকে আরও স্বচ্ছ করার জন্য আবেদনকারী অনুপ বারানওয়াল ২০১৫ সালে একটি আবেদন দায়ের করেছিলেন। এই আবেদনে দাবি করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং লোকসভার বিরোধী দলের নেতার ওপর ন্যস্ত করা হোক। আবেদনকারী বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনাররা সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, 'মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে এতটাই শক্তিশালী হতে হবে যে আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও কোন ভুলের অভিযোগ থাকলে তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন'। এর প্রতিক্রিয়ায়, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে কৌঁসুলি বলেছেন, "কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে শুধুমাত্র একটি অনুমানমূলক পরিস্থিতির ভিত্তিতে অবিশ্বাস করা উচিত নয়। এখনও শুধুমাত্র যোগ্য লোকদের এই পদে নির্বাচন করা হচ্ছে।"
সদ্য দেশের নতুন নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন অরুণ গোয়েল। তিনি পাঞ্জাব ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার। নতুন নির্বাচন কমিশনার পদে তাঁর নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল দেখতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার কেন্দ্রের কাছে সেই নিয়োগের ফাইল চেয়েছে আদালত। কারণ, আদালত দেখতে চায় যে এই নিয়োগ ‘ঠিকঠাক’ হয়েছে কি না।
বিচারপতি কেএম জোসেফের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের স্বাধীন প্রক্রিয়া চেয়ে দায়ের হওয়া আবেদনের শুনানি করছে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে যে শুনানি চলাকালীন এই নিয়োগ করা না-হলে, সেটাই উপযুক্ত হত। আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বৃহস্পতিবার গোয়েলের নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল আনতে বলেছে। কেন এই ফাইল তাঁরা আনতে বলছেন, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছে বেঞ্চ।
এপ্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ‘আমরা এই মামলার শুনানি শুরু করার পরে এই নিয়োগ করা হয়েছে।’ এই নিয়োগ নিয়ে ধন্দ প্রকাশ করে আবেদনকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন যে গোয়েলকে গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) স্বেচ্ছা অবসর (ভিআরএস) দেওয়া হয়েছে। আর, ২১ নভেম্বরই তাঁর নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়েছে।
প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ, অরুণ গোয়েলকে নিয়োগ করতেই তাঁকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এতদিন যাঁরা নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁরা সকলেই অবসরপ্রাপ্ত। কিন্তু, গোয়েল সরকারের বর্তমান সচিব ছিলেন। বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন এমনটাই বলা হয় আদালতে।
এই প্রসঙ্গে ভূষণ বলেন, ‘শুক্রবার তাঁকে স্বেচ্ছায় অবসর দেওয়া হয়। রবিবার নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়। সোমবার তিনি কাজ শুরু করেন।’ ভূষণ আরও জানান যে, ‘এই পদটি মে মাস থেকে শূন্য ছিল। আর, তিনি নিয়োগের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী আদেশ চেয়ে আবেদন করেছিলেন।’
আদালতে বিচারপতি জোসেফ মনে করিয়ে দেন যে ভিআরএস নিতে গেলে, একজন কর্মীকে তিন মাস আগে নোটিস দিতে হয়। তার প্রেক্ষিতে প্রশান্ত ভূষণ জানান যে গোয়েল কোনও নোটিশ দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই জন্যই আদালতের আরও বেশি করে তাঁর নিয়োগের নথি খতিয়ে দেখা উচিত।’